কাশ্মীর অঞ্চলে টানা ভারি বৃষ্টির পর প্রধান বাঁধগুলোর সব গেট খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে সীমান্ত পেরিয়ে পানি ধেয়ে যাচ্ছে পাকিস্তানের দিকে। বিপুল পরিমাণ পানি দেশটির দিকে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। মূলত নিজেদের ভেতরের চাপ কমাতে ভারত কার্যত বন্যার ভয়াবহ বোঝা চাপিয়ে দিল প্রতিবেশী পাকিস্তানের ওপরই।
এতে চেনাব, রভি আর শতদ্রু নদী ফুলে-ফেঁপে উঠে পাঞ্জাবজুড়ে তৈরি করেছে বিপর্যয়ের আশঙ্কা। বুধবার সকালে নদীগুলোতে অস্বাভাবিক বন্যা দেখা দিলে পরিস্থিতি সামাল দিতে ছয় জেলায় সেনা মোতায়েন করেছে পাকিস্তান। রয়টার্স।
পাকিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, অস্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের কারণে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও আশপাশের অঞ্চলে রবি, চেনাব ও শতদ্রু নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মঙ্গলবার রাতে ভারত রভি নদীর থেইন বাঁধের সব গেট খুলে দিয়েছে। চেনাবের দুটি প্রধান কার্যালয় এবং রভি ও শতদ্রুর একটি করে প্রধান কার্যালয় ‘অতি উচ্চ বন্যা’ পরিস্থিতিতে আছে। সিন্ধু নদীর ৫টি প্রধান কার্যালয়ে নিম্ন বন্যা দেখা দিয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে বাঁধের পানি উপচেপড়ায় ভারত বাধ্য হয়ে পানি ছেড়ে দিয়েছে। ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, প্রায় দুই লাখ কিউসেক পানি ছাড়তে পারে দেশটি।
তবে এই পানি একবারেই ছাড়া হবে নাকি ধাপে ধাপে ছাড়া হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। পাকিস্তানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ এর আগেই জানিয়েছিল, ভারত ধীরে ধীরে পানি ছাড়বে। রোববার থেকে ভারত এ নিয়ে দুইবার আনুষ্ঠানিক সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসলামাবাদ। ইতোমধ্যে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সাহায্যের জন্য পাঞ্জাব প্রদেশে সেনা মোতায়েন করেছে পাকিস্তানের কর্তৃপক্ষ।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ মন্ত্রীদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে (এনডিএমএ) পাঞ্জাব পিডিএম-এর সঙ্গে সমন্বয় করে উদ্ধার কার্যক্রম জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন। সেনা মোতায়েন করা হয়েছে লাহোর, ফয়সালাবাদ, কাসুর, সিয়ালকোট, নারোওয়াল ও ওকারায়।
পিডিএম-এর মহাপরিচালক ইরফান আলী কাথিয়া জানিয়েছেন, চেনাব ও রভি নদীসংলগ্ন এলাকা থেকে ২০ হাজারের বেশি মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। উদ্ধার সংস্থা রেসকিউ ১১২২ জানিয়েছে, সিয়ালকোটের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪৩ জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দ্রুত উঁচু জায়গায় সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, পাঞ্জাবের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া চলতে পারে। সিয়ালকোটে একদিনে ৩৬৩.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। যা গত ৪৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এ বছর জুনের শেষ থেকে শুরু হওয়া মৌসুমি বন্যায় পাকিস্তানে এখন পর্যন্ত ৮০২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুধু আগস্ট মাসেই প্রাণ গেছে প্রায় ৪০০ জনের। শুক্রবার থেকে এখন পর্যন্ত পাঞ্জাবে বন্যায় ঘরছাড়া মানুষের সংখ্যা ১ লাখ ৬৭ হাজার ছাড়িয়েছে। পাঞ্জাব প্রদেশের কাসুর, ভাওয়ালনগর ও বিহারী এলাকায় আশ্রয় নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ সতর্কবার্তা পাওয়ার পর স্বেচ্ছায় এলাকা ছেড়েছে। উভয় দেশই পারমাণবিক শক্তিধর এবং গত মে মাসে তাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর থেকে উত্তেজনা চরমে রয়েছে।
পাকিস্তানের ধারণা, ভারতের পানি ছাড়া পরিস্থিতি এ সম্পর্ক আরও জটিল করে তুলতে পারে।