মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫
মঙ্গলবার, ১৯ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনকে ‘ন্যাটো ধাঁচের নিরাপত্তা’ বলতে ট্রাম্প কী ইঙ্গিত করলেন

হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনকে নিয়ে একটি নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এই শান্তিরক্ষায় যুক্ত থাকবে। তবে কীভাবে এটি হবে তা তিনি স্পষ্ট করেননি। ট্রাম্পের মতে, ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ‘প্রথম সারির প্রতিরক্ষা হবে ইউরোপ, তবে আমেরিকাও সহায়তা করবে।

এই বৈঠকে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েনসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫এর মতো সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এই বিষয়ে বিস্তারিত কিছুই এখনো স্পষ্ট হয়নি। ন্যাটোর অনুচ্ছেদ ৫ অনুযায়ী—কোনো সদস্য রাষ্ট্র আক্রান্ত হলে সেটিকে সবার ওপর আক্রমণ বলে ধরে নেওয়া হয়।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ন্যাটো-সদৃশ প্রতিশ্রুতি দিলেও রাশিয়া বিশ্বাস করবে না যে, পশ্চিমা শক্তি ইউক্রেনের জন্য সরাসরি যুদ্ধে নামবে। বিশ্লেষকদের মতে, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা কিংবা জ্বালানি ক্রয় বন্ধ করার হুমকিই রাশিয়ার ওপর কার্যকর প্রভাব ফেলতে পারে।

ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা চান, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি যেন আইনগতভাবে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়ায়। না হলে দোনবাস অঞ্চলে ইউক্রেন কিছু ছাড় দিলে দেশটি আবারও রাশিয়ার আক্রমণের ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ ক্ষেত্রে একটি প্রস্তাব হলো ইউরোপীয় সেনারা ইউক্রেনের মাটিতে অবস্থান করবে, আর মার্কিন যুদ্ধবিমান থাকবে প্রতিবেশী পোল্যান্ড ও রোমানিয়ায়। এসব যুদ্ধবিমান ইউক্রেনের আকাশ নিরাপদ রাখবে। তবে এই ধরনের নিশ্চয়তা কত দিন বহাল থাকবে—তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের অনিশ্চিত স্বভাব হয়তো ২০২৮ সালের মার্কিন নির্বাচনের আগে পুতিনকে সতর্ক রাখবে। কিন্তু ট্রাম্পের সম্ভাব্য উত্তরসূরি জেডি ভ্যান্স যিনি ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার বিরোধী ক্ষমতায় এলে রাশিয়া আবারও আক্রমণের সুযোগ নিতে পারে। ফলে এই নিশ্চয়তা দীর্ঘমেয়াদি নাকি শুধু এক ধরনের যুদ্ধবিরতি—তা নিয়েই সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের আশঙ্কা, ১৯৯৪ সালের বুদাপেস্ট স্মারকলিপির মতো পরিস্থিতি আবারও তৈরি হতে পারে। তখন ইউক্রেন পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়ার বিনিময়ে নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতি পেয়েছিল রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে। কিন্তু সেই অস্পষ্ট চুক্তির ফাঁকেই রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া দখল করে নেয়।

জেলেনস্কির সরকার মনে করে, ন্যাটোতে যোগদান ছাড়া অন্য কোনো নিশ্চয়তা কার্যকর নয়। ইউক্রেনের ন্যাটো প্রতিনিধিদলের উপপ্রধান সোলোমিয়া বব্রোভস্কাও বলেছেন, এগুলো এক ধরনের মরীচিকা ছাড়া কিছুই নয়।

এদিকে ব্রিটেন ও ফ্রান্স শান্তিরক্ষী বাহিনী গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে, যা যুদ্ধবিরতি হলে ইউক্রেনে পাঠানো যেতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া এই বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা সক্ষমতা পাবে না।

ইউক্রেনের নেতাদের মতে, সবচেয়ে কার্যকর নিশ্চয়তা হলো পশ্চিমা গোয়েন্দা সহায়তা ও অস্ত্র, যা এখন পর্যন্ত যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের সক্ষম রেখেছে। দেশটির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান ভ্যালেন্টিন নালিভাইচেঙ্কো বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা ন্যাটো সদস্যপদের দিকে এক ধাপ অগ্রসর হওয়ার মতোই ইতিবাচক।

অবশেষে প্রশ্ন রয়ে গেছে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব কি সত্যিই ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেবে, নাকি কেবল এক দীর্ঘ বিরতির ছলনায় রাশিয়াকে আরেকবার হামলার সুযোগ করে দেবে।

এই সম্পর্কিত আরো