ভয়াবহ ঝুঁকিতে ৯ লাখ ফিলিস্তিনি
ইসরাইল সামরিকভাবে গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করার পর বাস্তুচ্যুত হওয়ার শঙ্কার মুখে পড়েছেন বাসিন্দারা। শহরটিতে নতুন করে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এতে প্রাণ হারাতে পারেন আরও কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। তবুও গাজা সিটিতেই থাকার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করছেন বাসিন্দারা।
উম্মে ইমরান আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘তারা (ইসরাইল) বলছে, দক্ষিণে চলে যাও। কিন্তু উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম, কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। আমরা এখানে থাকব।’ একই কথা বলেছেন তার মা উম্মে ইয়াসেরও, ‘আমরা গাজা সিটি ছাড়ব না। এখানে বাঁচব, এখানে মরব। এমনকি যদি আমরা সবাই মারা যাই। বাড়ি ধ্বংস করলেও আমরা যাব না।’
ইসরাইলের হামলা শুরুর পর থেকে কমপক্ষে ৮ বার পরিবারসহ বাস্তুচ্যুত হওয়া আহমেদ হির্জ বলেছেন, ‘আমি স্রষ্টার নামে শপথ করছি, আমি ১০০ বার মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছি। তাই আমার জন্য এখানেই মৃত্যুবরণ করা ভালো।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি কখনো এখান থেকে যাব না। আমরা দুর্ভোগ, অনাহার, নির্যাতন ও করুণ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে গেছি এবং আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো এখানেই মৃত্যুবরণ করা।’
গাজা সিটিতে বসবাসরত অন্যদেরও একই অনুভ‚তি। রজব খাদের বলেছেন, ‘আমাদের অবশ্যই গাজায় আমাদের পরিবার এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে থাকতে হবে। ইসরাইলিরা আমাদের দেহ এবং আত্মা ছাড়া আর কিছুই পাবে না।’
আল-জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ বলেছেন, গাজায় জাতিগতভাবে নির্মূল করার ইসরাইলি পরিকল্পনা নিয়ে শুক্রবার ভোর থেকেই বাসিন্দারা ‘আতঙ্কের’ মধ্যে ছিলেন। তবুও তাদের ভিটেমাটি আর ছাড়তে চান না তারা। ফিলিস্তিনি এনজিও নেটওয়ার্কের পরিচালক আমজাদ শাওয়া বলেছেন, জোরপূর্বক এবং বারবার বাস্তুচ্যুত হতে হতে বাসিন্দারা ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি দূত রিয়াদ মানসুর বলেছেন, কেবল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপই গাজায় ইসরাইলের পূর্ণ সামরিক দখল রোধ করতে পারে।
ইসরাইলের বিতর্কিত উত্তেজনা বৃদ্ধির খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে দখলদার বাহিনী ক্ষুধায় দুর্বল হয়ে পড়া ফিলিস্তিনিদের ওপর আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। শনিবার ভোর থেকে কমপক্ষে ৩৬ জনকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। যাদের মধ্যে কমপক্ষে ২১ জন সাহায্যের আশায় ত্রাণ কেন্দ্রে জড়ো হয়েছিলেন।
এদিকে শনিবার আলজাজিরার ব্রেকিংয়ে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ক্ষুধায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। এ নিয়ে অনাহারে মারা যাওয়া ফিলিস্তিনের সংখ্যা বেড়ে ২১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৯৮ জনই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্যানুসারে, গাজাজুড়ে ইসরাইলি হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন আরও ১ লাখ ৫০ হাজারেও বেশি মানুষ।