যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে স্কটল্যান্ডে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে আবারও লন্ডনের মেয়র সাদিক খানকে আক্রমণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সংবাদ সম্মেলনে খানকে ‘ঘৃণ্য ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দেন ট্রাম্প। তখন প্রধানমন্ত্রী স্টারমার হস্তক্ষেপ করে বলেন, ‘তিনি (খান) আমার বন্ধু।’
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদকালেই সাদিক খানের সঙ্গে তাঁর বাকযুদ্ধ শুরু হয়। সে সময় মুসলিম-অধ্যুুষিত কয়েকটি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব হন খান। এরপর থেকেই তাকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্প একাধিকবার কড়া মন্তব্য করেন।
২০১৬ সালে পশ্চিমা বিশ্বের কোনো রাজধানী শহরে প্রথম মুসলিম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হন সাদিক খান। তার পর থেকেই ট্রাম্প কখনও তাকে ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ব্যর্থ’ বলে দোষারোপ করেছেন, আবার কখনও ‘স্টোন কোল্ড লুজার’ ও ‘খুবই বোকা’ বলেও কটাক্ষ করেছেন।
২০২৪ সালের ৫ নভেম্বর ট্রাম্প পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আগেই এক পডকাস্টে সাদিক খান অভিযোগ করেন, ট্রাম্প তার ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের কারণে তাকে টার্গেট করছেন। ‘খোলামেলাভাবে বললে, সে আমার ধর্ম ও জাতিগত পরিচয়ের জন্যই আমাকে আক্রমণ করছে,’ বলেন খান।
তবে পরে ডিসেম্বরে এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খান বলেন, ‘আমেরিকান জনগণ জোরালো ও স্পষ্টভাবে তাদের মতামত দিয়েছে। আমাদের উচিত নির্বাচনের ফলাফলকে সম্মান করা।’
সোমবার এক বিবৃতিতে সাদিক খানের এক মুখপাত্র জানান, ট্রাম্প লন্ডন আসতে চাইছেন শুনে মেয়র আনন্দিত। মুখপাত্র আরও বলেন, ‘তিনি (ট্রাম্প) এসে দেখবেন, আমাদের বৈচিত্র্য আমাদের দুর্বল নয়, বরং শক্তিশালী করেছে; আমাদের দরিদ্র নয়, বরং আরও সমৃদ্ধ করেছে।’
এক প্রতিবেদক ট্রাম্পকে জিজ্ঞেস করেন, তিনি কি সেপ্টেম্বরে যুক্তরাজ্যে তার নির্ধারিত রাষ্ট্রীয় সফরের অংশ হিসেবে লন্ডনে যাবেন? জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘হ্যাঁ,’ তবে সঙ্গে যোগ করেন, ‘আমি আপনার মেয়রের ভক্ত নই। আমি মনে করি সে ভয়াবহভাবে ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লন্ডনের মেয়র একজন ঘৃণ্য ব্যক্তি।’
ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পরপরই প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার বলেন, ‘তিনি আসলে আমার বন্ধু।’
তবে নিজের অবস্থানে অনড় থেকে ট্রাম্প আবারও বলেন, ‘আমি মনে করি সে খুব খারাপভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তবে আমি অবশ্যই লন্ডন ভ্রমণ করব।’
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাদিক খানের মধ্যকার সম্পর্ক যে বন্ধুত্বপূর্ণ নয়, তা বহু আগে থেকেই স্পষ্ট। স্টারমারও লেবার পার্টির সদস্য হওয়ায়, খান ও তার রাজনৈতিক পরিচয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থাকা স্বাভাবিক।
এ বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে প্রত্যাবর্তনের আগের দিন সাদিক খান এক নিবন্ধে পশ্চিমা বিশ্বে ‘প্রতিক্রিয়াশীল জনতাবাদীদের’ উত্থানকে প্রগতিশীলদের জন্য ‘এই শতকের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ’ বলে সতর্ক করেছিলেন।