মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবরে যখন গোটা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার পারদ চরমে, তখন আলোচনায় উঠে এসেছেন ইরানের সাবেক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পুত্র এবং নির্বাসিত রাজপুত্র রেজা পাহলভি।
এই সংকটময় মুহূর্তে তিনি প্রকাশ্যে আহ্বান জানিয়েছেন- ইরানের বর্তমান ধর্মভিত্তিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে সেখানে একটি গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য পশ্চিমা বিশ্ব যেন ইরানি জনগণের পাশে দাঁড়ায়।
প্যারিসে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রেজা পাহলভি স্পষ্টভাবে বলেন, শুধু পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে শান্তি নিশ্চিত করা যাবে না। বরং এই শাসনব্যবস্থার পতন ছাড়া টেকসই শান্তি ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব নয়। খবর রয়টার্স।
রেজা পাহলভি বলেন, এটাই আমাদের বার্লিন ওয়াল মুহূর্ত। তবে সব বড় পরিবর্তনের সময়ের মতো এটি বিপজ্জনকও হতে পারে। তার মতে, এই মুহূর্তে পশ্চিমাদের উচিত হবে ইতিহাসের পুরোনো ভুল না করে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া।
তিনি বলেন, আপনারা যদি সত্যিই মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চান, তাহলে এই শাসনব্যবস্থার পতন ছাড়া উপায় নেই। দমনপীড়নের ভিত্তিতে টিকে থাকা এই সরকারকে টিকিয়ে রাখার অর্থ- বিপদকে দীর্ঘায়িত করা।
যদিও যুক্তরাষ্ট্র শুরুতে জানায়, তারা ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ চায় না ; তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রোববার (২২ জুন) এক সামাজিক পোস্টে ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইরানের ধর্মীয় নেতৃত্ব হয়তো আর বেশিদিন টিকবে না।
এই পরিস্থিতিতে রেজা পাহলভি জানান, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ও তার ঘনিষ্ঠ মহল দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যদিও এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।
নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে রেজা পাহলভি বলেন, আমি কোনো রাজনৈতিক ক্ষমতা চাই না। আমি নিজেকে ‘নতুন শাহ’ হিসেবে দেখতে চাই না। বরং তিনি একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, মানবাধিকারনির্ভর ইরান গড়ার স্বপ্ন দেখেন- যেখানে থাকবে সকল নাগরিকের সমান অধিকার, জাতিগত সম্প্রীতি এবং ধর্ম ও রাষ্ট্রের আলাদা অবস্থান।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে রেজা পাহলভি যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে বসবাস করছেন। তিনি দেশ ছাড়লেও ইরানে তার জনপ্রিয়তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেক ইরানির মনে এখনো তার পিতার আমলে পরিচালিত কুখ্যাত গোপন পুলিশ সংস্থা ‘সাভাক’-এর দমনপীড়নের তিক্ত স্মৃতি রয়েছে। ইরানের সাম্প্রতিক গণবিক্ষোভেও কখনো কখনো রাজতন্ত্রপন্থী ও বিরোধী স্লোগান পাশাপাশি উচ্চারিত হয়েছে।
ইরানের বিরোধী রাজনীতি বর্তমানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। কোনো ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্ব নেই, রয়েছে জাতিগোষ্ঠীভিত্তিক দল, মতবাদনির্ভর গ্রুপ এবং বিক্ষিপ্ত কর্মসূচি। এই বাস্তবতায় পাহলভি জানিয়েছেন, তিনি একটি ‘জাতীয় ঐক্য সম্মেলন’ আয়োজনের চেষ্টা করছেন, যেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ ও নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে ভবিষ্যৎ ইরানের রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।
তার ভাষায়, আমি এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছি, যেখানে ইরানি নিরাপত্তা বাহিনী, সেনা ও পুলিশ সদস্যরা বর্তমান শাসন থেকে সরে এসে এই পরিবর্তনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন।
অনেক পশ্চিমা নেতা আশঙ্কা করছেন, ইরানে সরকার পতনের পর দেশটি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে রেজা পাহলভি বলেন, আমি বলছি না আপনারা রেজিম চেঞ্জ সমর্থন করুন, আমি বলছি- আপনারা অন্তত এটা স্বীকার করুন, এই শাসনব্যবস্থার পতনই একমাত্র সমাধান।