মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে ইরানের সাম্প্রতিক এক সামরিক ঘোষণায়। তেহরান জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বিমান বাহিনীর ২৮টি আক্রমণকারী আকাশযান তারা ভূপাতিত করেছে।
অভূতপূর্ব এই ঘোষণা এমন এক সময়ে এসেছে, যখন ইরান-ইসরাইল সরাসরি সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি এতে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপের আলোচনা জোরালো হচ্ছে।
কি ধরণের আকাশযান ভূপাতিত হয়েছে?
ইরানের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা ও সামরিক সূত্র বলছে, ভূপাতিত ২৮টি আকাশযানের মধ্যে রয়েছে:
• হার্মেস (Hermes) ড্রোন। এটি মূলত একটি দূরপাল্লার নজরদারি ও আক্রমণাত্মক ড্রোন, যা ইসরাইলিরা প্রায়শই গাজা, লেবানন ও সিরিয়ায় ব্যবহার করে।
• এফ-১৬ ও এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান। ইরানি সূত্র দাবি করেছে, কয়েকটি ম্যানড বিমানও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। যদিও এ দাবি স্বাধীনভাবে যাচাই করা যায়নি।
• বিশেষ মিশনের ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্ল্যাটফর্ম। ইরান বলছে, তারা ইসরাইলি ইলেকট্রনিক হামলার সক্ষমতা রোধ করেছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
যদিও ইরান এ ঘোষণাকে নিজেদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার বড় সাফল্য হিসেবে দেখাচ্ছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা বিষয়টি এখনো সাবধানতা সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে ইরানের দাবি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ইসরাইল জানিয়েছিল, মঙ্গলবার তারা ইরানে ৬০টির বেশি বিমান ব্যবহার করে ইরানে হামলা চালিয়েছে।
ইসরাইলের জন্য কি বার্তা?
১. বিমান প্রতিরক্ষার সক্ষমতা প্রদর্শন: ইরান বারবার দাবি করে আসছে যে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা— বিশেষ করে বাভার-৩৭৩ (Bavar-373), খোরদাদ-১৫ (Khordad-15), ও সাইয়েদ (Sayyad) ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক ও খুবই কার্যকর। এগুলোর মাধ্যমে ইসরাইলি হামলা প্রতিহতের দাবি সেই বার্তাকেই বিশ্বে পৌঁছে দিচ্ছে।
২. মনস্তাত্ত্বিক চাপ প্রয়োগ: ইসরাইল যদি সত্যিই এতোগুলো বিমান হারিয়ে থাকে, তাহলে এটি একটি কৌশলগত ধাক্কা। এমন ক্ষয়ক্ষতি ইসরাইলি জনমত ও সামরিক পরিকল্পনায় প্রভাব ফেলতে পারে।
৩. যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ: চলমান সংঘাত যত তীব্র হবে, তত বেশি যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, তারা এতে সরাসরি জড়াবে কি না। ইরান পরোক্ষভাবে হয়তো ট্রাম্প প্রসাশনকে বলছে, ‘তোমার মিত্র ঝুঁকিতে, তুমি কি পাশে দাঁড়াবে?’
সামরিক বাস্তবতা বনাম প্রচারযুদ্ধ
তবে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বলছেন, একযোগে ২৮টি ইসরাইলি বিমান ভূপাতিত করা সম্ভব হলেও এটি খুবই অস্বাভাবিক ঘটনা। তারা বলছেন-
• হয়তো অনেক ড্রোন ও পুনঃতথ্য সংগ্রহকারী বিমান ছিল যেগুলো যুদ্ধক্ষেত্রের গভীরে প্রবেশ করেছিল।
• ইরান কিছু সফলতা পেয়েছে, তবে সংখ্যাটি সম্ভবত অতিরঞ্জিত।
ইরানের এই দাবি সত্য হোক বা আংশিক সত্য—এটি একটি স্পষ্ট বার্তা যে, ‘আমরা প্রস্তুত এবং ইসরাইল আকাশেও নিরাপদ নয়’।
মূলত এই পরিস্থিতি ইসরাইলকে আরও কৌশল পরিবর্তনে বাধ্য করতে পারে। আবার বড় কোনো পাল্টা জবাবেরও ভিত্তি তৈরি করে দিতে পারে। এমনকি যুক্তরাস্ট্রকে এতে সরাসরি অংশ নিতেও বাধ্য করতে পারে।
সূত্র: মেহের নিউজ, ফার্স নিউজ, তেহরান টাইমস