আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাবেক উপ-পরিচালক জেনারেল ফর সেফগার্ডস অলি হেইনোনেন বলেছেন, ইসরাইলের হামলার পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অবস্থান ঠিক কোথায় তা আমরা পুরোপুরি জানি না।
হেইনোনেন মনে করেন, ইসরাইল সম্ভবত তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বড় ধরনের হামলা চালিয়েছে।
রেডিও ফোর-এর ‘টুডে’ প্রোগ্রামে তিনি বলেন, নাতাঞ্জ স্থাপনার পুনরুদ্ধারে অন্তত কয়েক বছর সময় লাগবে। ফোর্দো স্থাপনারও একই অবস্থায়। ইসরাইলের বোমা হামলার পর এটি খুবই খারাপ অবস্থায় আছে।
কিন্তু প্রধান প্রশ্ন এখনও রয়ে গেছে— হেইনোনেন জানিয়েছেন, ইরান তাদের ৪০০ কিলোগ্রামের বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম কোথায় সংরক্ষণ করছে।
তিনি বলেন, যদি তাদের কোনো গোপন আস্তানা থাকে, যা খুব বড় হতে হবে এমনটা না... এবং তারা গোপনে পারমানবিক অস্ত্র বানানোর মতো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারে যেখানে আইএইএ-এর নজরদারি নেই, তাহলে আমাদের বড় সমস্যা হয়ে যাবে।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লায়েন রোববার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, ইরান নিয়ে কূটনৈতিক আলোচনায় যাওয়াই সবচেয়ে ভাল উপায় হবে। তবে তিনি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাননি।
ভন ডার লায়েন বলেন, তিনি টেলিফোনে নেতানিয়াহুর সঙ্গে একমত হয়েছেন। ইরানের কোনোভাবেই পারমাণবিক অস্ত্র থাকা উচিত নয়, এতে কোনো প্রশ্নই নেই।
আগে ভন ডার লায়েন গাজায় ইসরাইলি হামলার সমালোচনা করেছেন, কিন্তু তিনি এটাও বলেছেন, জাতিসংঘের পারমাণবিক নজরদারি সংস্থার সঙ্গে ইরানের অসহযোগিতা করছে। এর মানে ইসরাইল নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রাখে। ইরানই এই অঞ্চলের প্রধান অস্থিতিশীলতার উৎস।
বর্তমানে ভন ডার লায়েন কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন, সেখানে তিনি জানান, এই সম্মেলনে ইসরাইল ও ইরানের দ্বন্দ্বের পাশাপাশি রাশিয়ার ইউক্রেনে চলমান আগ্রাসনও আলোচনা হবে।
তিনি বলেন, ইরানি নকশায় তৈরি একই ধরনের ড্রোন এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেন ও ইসরাইলের শহরগুলোতে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে। এসব হুমকি একসাথে মোকাবিলা করা দরকার।
ইসরাইলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ বলেছেন, ইসরাইলি নাগরিকদের ওপর ইরানের হামলার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে হবে তেহরানের বাসিন্দাদের।
ইরানের রাতভর হামলায় ইসরাইলের পাঁচজন নিহত এবং ৯২ জন আহত হয়েছেন বলে জানাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ইসরাইল কাৎজ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ইসরাইলের বেসামরিক এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করে ইরান হামলা চালাচ্ছে, যাতে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) সক্ষমতা ভেঙে পড়ে এবং তারা হামলা চালানো বন্ধ করে দেয়।
ইরানের বিচার বিভাগের মিডিয়া সেন্টার মিজান জানিয়েছে, ইসরাইলের জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থার পক্ষে গোয়েন্দা সহযোগিতা ও গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধে এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
জায়োনিজম হলো একটি রাজনৈতিক আন্দোলন যা ইহুদি জনগোষ্ঠীর জন্য একটি জাতীয় আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার কাজ করে। যারা জায়নবাদ নামক এই রাজনৈতিক মতবাদে বিশ্বাসী তাদেরকে জায়োনিস্ট বলা হয়।
ইরানের রাজনৈতিক ভাষায় ‘জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থা’ বলতে ইসরাইলকে বোঝানো হয়।
মিজান জানিয়েছে, খোদানাজারের ছেলে ইসমাইল ফিকরি, ১৪০২ সালে মানে ইংরেজি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে গ্রেফতার হন। তিনি এখনও ‘জায়োনিস্ট শাসনব্যবস্থার গুপ্তচর-সন্ত্রাসী সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগে ছিলেন। তাকে একটি জটিল কারিগরি ও গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে গ্রেফতার করা হয় বলে জানানো হয়েছে।
খামেনিকে হত্যার ইসরাইলি পরিকল্পনা ঠেকিয়েছেন ট্রাম্প!
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার ইসরাইলি পরিকল্পনা আটকে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই তথ্য তিনটি সূত্র সিবিএসকে (বিবিসির আমেরিকান সংবাদ সহযোগী) জানিয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, শুক্রবার ইসরাইল যখন ইরানে হামলা চালায়, তারপর হওয়া এক আলোচনায় ট্রাম্প ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে বলেছেন, খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনা ‘কোনো ভালো আইডিয়া না’।
যদিও, এ বিষয়ে ট্রাম্প জনসমক্ষে কোনো মন্তব্য করেননি। রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ট্রাম্প খামেনিকে হত্যার পরিকল্পনায় ‘ভেটো’ দিয়েছিলেন।
তবে, ফক্স নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু রয়টার্সের ওই খবরের সত্যতা সরাসরি নিশ্চিত করেননি, আবার অস্বীকারও করেননি।