যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন শহরে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আদেশে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত অভিযানের জেরে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা এখন গ্রেপ্তার, সংঘর্ষ ও সেনা মোতায়েনের পর্যায়ে পৌঁছেছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসে কী ঘটেছে
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত শুক্রবার থেকে এই বিক্ষোভ শুরু হয়। ওই দিন আইসিই কর্মকর্তারা শহরের লাতিন-অধ্যুষিত এলাকায় অভিযান চালাচ্ছিলেন বলে খবর আসে। এসব এলাকায় অবৈধ অভিবাসীদের খোঁজে অভিযান জোরদার করা হয়েছিল। এই অভিযানের খবর প্রকাশ পাওয়ার পরই ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
আইসিই জানায়, কেবল শুক্রবারেই লস অ্যাঞ্জেলেসে একাধিক অভিযানে ১২১ জন অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় অভিযান চালানো হয়েছে ওয়েস্টলেক জেলা ও লস অ্যাঞ্জেলেসের দক্ষিণে অবস্থিত প্যারামাউন্টে। এই প্যারামাউন্ট এলাকার জনসংখ্যার ৮২ শতাংশের বেশি হিস্পানিক। প্যারামাউন্টের একটি হোম ডিপোতেও আইসিই অভিযানের খবর পাওয়া গিয়েছিল। তবে সেখানকার কর্মকর্তারা বিবিসিকে জানিয়েছেন যে এই খবর মিথ্যা।
কোন এলাকাগুলোতে বিক্ষোভ চলছে
বিক্ষোভ কিছু নির্দিষ্ট এলাকায় সীমিত থাকলেও ডাউন টাউন এলএ সবচেয়ে উত্তপ্ত অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। শহরের মেয়র কারেন ব্যাস তাঁর এলাকায় সব ধরনের ‘জমায়েত’ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কয়েক দিনের সংঘর্ষের পর প্রায় এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় রাতের কারফিউ জারি করা হয়েছে। এই এলাকায় বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে ভবনে হামলা, গাড়ি পোড়ানো, রাস্তা অবরোধ ও লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে। পুলিশ রাবার বুলেট, ফ্ল্যাশ গ্রেনেড ইত্যাদি ব্যবহার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ফেডারেল বিল্ডিংয়ে আইসিই বন্দীদের আটকে রাখার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এই স্থান হয়ে ওঠে সহিংসতার কেন্দ্রবিন্দু। আইসিই জানায়, গত শনিবার প্রায় ১ হাজার বিক্ষোভকারী ভবনটি ঘিরে ফেলেন এবং হামলা চালান।
লস অ্যাঞ্জেলেসের বাইরেও কি বিক্ষোভ চলছে
হ্যাঁ, লস অ্যাঞ্জেলেসের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি শহরে এই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে টেক্সাসের সান অ্যান্তোনিও, অস্টিন ও ডালাসে বিক্ষোভ ঠেকাতে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে। নিউইয়র্ক শহরেও হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেন। সেখানে পুলিশ একাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তারও করেছে। সান ফ্রান্সিসকোতে আইসিই অফিসের কাছে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে ১৫০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া আটলান্টা, শিকাগো, ফিলাডেলফিয়া ও ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ হয়েছে।
কেন ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েন করেছেন
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৪ হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ও ৭০০ ইউএস মেরিন মোতায়েন করেছেন। তবে প্রেসিডেন্টের এ বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।
সাধারণত ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের জন্য রাজ্যের গভর্নরের অনুমতি প্রয়োজন হয়, তবে ট্রাম্প একটি বিরল ফেডারেল আইন ব্যবহার করে নিজেই তা কার্যকর করেছেন। ১৯৬৫ সালের পর এই প্রথম এমন ঘটনা ঘটল যে, গভর্নরের অনুরোধ ছাড়াই গার্ড মোতায়েন করা হলো।