লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা বন্ধের ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত হুতিদের ওপর সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
রবিবার (১৬ মার্চ) মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ এই ঘোষণা দেন। অন্যদিকে, মার্কিন হামলা চললে পাল্টা জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হুতিরা।
শনিবার রাতে ইয়েমেনে হুতিদের বিভিন্ন অবস্থানে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। হুতি পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে পাঁচ শিশু ও দুই নারী রয়েছেন। আহত হয়েছেন ৯৮ জন। তবে সাধারণ মানুষের প্রাণহানির বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি পেন্টাগন।
বড় সামরিক অভিযান
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর হুতিদের বিরুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বড় সামরিক অভিযান। ওয়াশিংটন বলছে, হুতিদের হামলার জবাব দিতেই এই অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, এই হামলা কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চলতে পারে।
হুতি নেতা আব্দুল মালিক আল-হুতি রবিবার এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি ইয়েমেনে হামলা অব্যাহত রাখে, তাহলে লোহিত সাগরে তাদের জাহাজেও হামলা চলবে। তারা যদি আগ্রাসন চালিয়ে যায়, আমরাও প্রতিরোধ চালিয়ে যাবো।’
যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ
হুতি রাজনৈতিক ব্যুরো যুক্তরাষ্ট্রের হামলাকে ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিহিত করেছে। অন্যদিকে, হামলা বন্ধ করতে ওয়াশিংটনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মস্কো।
রবিবার হুতি সামরিক মুখপাত্র দাবি করেছেন, তারা মার্কিন বিমানবাহী রণতরি ‘ইউএসএস হ্যারি এস. ট্রুম্যান’ এবং অন্যান্য জাহাজে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের বিমান বাহিনী হুতিদের ১১টি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে এবং এসব ড্রোন মার্কিন রণতরির কাছাকাছিও আসতে পারেনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, "হুতিরা যখনই বলবে তারা আমাদের জাহাজে হামলা বন্ধ করবে, তখনই আমরা তাদের ওপর হামলা থামাবো। কিন্তু তার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে।"
তিনি আরও বলেন, গুরুত্বপূর্ণ জলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ইরান দীর্ঘদিন ধরে হুতিদের সহায়তা দিচ্ছে, এটি বন্ধ করা জরুরি।
হুতিদের হামলা
হুতিরা ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে ১০০-র বেশি হামলা চালিয়েছে। তারা দাবি করছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলার শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে এসব হামলা চালানো হচ্ছে। হুতিদের হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয়বহুল সামরিক অভিযান চালাতে বাধ্য হচ্ছে।
শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প হুতিদের হামলা বন্ধ করতে বলার পাশাপাশি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, তারা যদি হামলা চালানো অব্যাহত রাখে, তাহলে ভয়াবহ পরিণতি ভোগ করতে হবে।
অন্যদিকে, ইরানের বিপ্লবী গার্ডের শীর্ষ কমান্ডার হোসেইন সালামি যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির জবাবে বলেন, হুতিরা তাদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিচ্ছে। শত্রুরা যদি হুমকি বাস্তবায়ন করে, তাহলে আমরা ভয়াবহ জবাব দেব।
হুতিদের হুমকি
হুতিরা এরইমধ্যে লোহিত সাগরে দুটি বাণিজ্যিক জাহাজ ডুবিয়ে দিয়েছে এবং একটি জাহাজ জব্দ করেছে। এই হামলায় চারজন নাবিক নিহত হয়েছেন।
পশ্চিমা সামরিক জোটের একাধিক হামলার পরও হুতিদের প্রতিরোধ কমেনি। তারা গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে বলেছে, অবরোধ না তুললে আমরা লোহিত সাগরে ইসরায়েলি ও মিত্রদেশের জাহাজে হামলা চালিয়ে যাব।