ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম সালমান শাহ। মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে তিনি হয়ে উঠেছিলেন দর্শকের হৃদয়ের ‘স্বপ্নের নায়ক’। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করেই মাত্র ২৫ বছর বয়সে থেমে যায় তার জীবনপ্রদীপ। সেদিন ঢাকার ইস্কাটনের বাসভবন থেকে তার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। মৃত্যুর পর কেটে গেছে ২৯ বছর, তবুও রহস্যময় এই প্রস্থান আজও ঘিরে রেখেছে অসংখ্য প্রশ্ন। তবে মৃত্যু ২৯ বছর পরেও তিনি তুমুল জনপ্রিয়।
শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন নামের এক তরুণ ১৯৯৩ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক করেছিলেন। সেই সিনেমা দিয়েই তিনি দর্শকের হৃদয় জয় করেন। এরপর মাত্র তিন বছরের ক্যারিয়ারে ২৭টির মতো চলচ্চিত্রে অভিনয় করে হয়ে ওঠেন ঢাকাই চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়ক। তার সিনেমাগুলোতে ছিল নতুন ধাঁচের ফ্যাশন, অভিনয়ে ছিল স্বকীয়তা, আর গানে-গল্পে ছিল ভিন্নধর্মী আবেগ। এক দশক ধরে যে বাংলা সিনেমা ম্লান হয়ে পড়েছিল, সালমান শাহ এসে যেন নতুন প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
সালমান শাহর রহস্যময় মৃত্যুর পর থেকেই শুরু হয় বিতর্ক। প্রথমে একে আত্মহত্যা বলা হলেও পরিবার থেকে দাবি করা হয়, এটি হত্যা। এ নিয়ে মামলা ও দীর্ঘ তদন্ত চলে বহু বছর। ২০১৪ সালে সিআইডি চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘অপ্রাকৃত মৃত্যু’ হিসেবে উল্লেখ করে। কিন্তু আজও তাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ সামনে আসেনি। মা নীলা চৌধুরীসহ পরিবার বারবার ন্যায়বিচারের দাবি জানালেও তদন্ত প্রক্রিয়া শেষ হয়নি।
সালমান শাহ ছিলেন ক্ষণজন্মা এক নায়ক, যিনি কেবল সিনেমা নয়, সমসাময়িক প্রজন্মের জীবনধারাতেও প্রভাব ফেলেছিলেন। তার পোশাক, চুলের স্টাইল, এমনকি কথা বলার ভঙ্গিও হয়ে উঠেছিল তরুণদের অনুকরণের বিষয়। সিনেমা হলে তাঁর ছবি মুক্তি মানেই ছিল হাউসফুল শো। আজও টেলিভিশনে তাঁর সিনেমা প্রচার হলে দর্শকের ভিড় হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সংলাপ, গান বা স্টাইল ভাইরাল হয়।
২৯ বছর পেরিয়ে গেলেও ভক্তদের হৃদয়ে সালমান শাহ আজও একইভাবে অমলিন। তিনি শুধু একজন অভিনেতা নন, এক যুগের আবেগ, এক প্রজন্মের স্বপ্ন আর এক চলচ্চিত্রের পুনর্জাগরণের প্রতীক। রহস্যময় মৃত্যুর আড়ালে ঢাকা পড়লেও তাঁর তারুণ্যদীপ্ত উপস্থিতি ও কাজই তাকে বাঙালির সংস্কৃতিতে চিরজীবী করে রেখেছে।