হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী লিন্ডসে লোহান। ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন শিশুশিল্পী হিসাবে। মাত্র ১০ বছর বয়সে টেলিভিশন সোপ ‘অপেরা আদার ওয়ার্ল্ড’র মাধ্যমে পর্দায় তার আত্মপ্রকাশ। তবে, ‘দ্য প্যারেন্ট ট্র্যাপ’-এ তার অবিশ্বাস্য ভূমিকাই তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয় এবং মূলধারার সাফল্যের রাস্তা উন্মুক্ত করে দেয়।
এরপর তো শুধুই সাফল্যের গল্প। বছরের পর বছর ধরে নিজেকে কেবল একটি ব্র্যান্ড হিসাবেই তৈরি করেননি বরং সেলেব্রিটি জীবনের উত্থান-পতনের অভিজ্ঞতাও তার ক্যারিয়ারের পরতে পরতে গেঁথে রয়েছে। এত কম বয়সে তার ক্যারিয়ার শুরু করে লোহান কয়েক দশক ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন, উপার্জন করেছেন অঢেল অর্থ, আবার কখনো কখনো হারিয়েছেনও।
হলিউডের ধনী তারকাদের নামের তালিনায় লিন্ডসে লোহানও ছিলেন একসময়। কিন্তু ব্যক্তিগত সংগ্রামের কারণে তার মোট সম্পদের বেশ কিছু উত্থান-পতন হয়েছে। মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, আইনি ঝামেলা এবং পুনর্বাসনের খরচের মতো সমস্যাগুলো বছরের পর বছর ধরে তার আর্থিক অবস্থার ওপর বেশ প্রভাব ফেলেছে। যদিও তিনি এখন সুস্থ। ফিরে এসেছেন সিনেমা জগতেও এবং হারানো সম্পদ পুনরুদ্ধারের চেষ্টাও করছেন বলে জানা গেছে।
সেলেব্রিটি নেট ওয়ার্থের সর্বশেষ তথ্য অনুসারে, বর্তমানে লিন্ডসে লোহানের আনুমানিক মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার! অথচ ক্যারিয়ারের শীর্ষে থাকাকালীন তিনি হলিউডের সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন অভিনেত্রীদের একজন ছিলেন এবং শুধু সিনেমায় অভিনয় করেই প্রায় ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছিলেন। কিন্তু সেই সোনালি দিন আর নেই। মূলত আইনি এবং ব্যক্তিগত ঝামেলায় উদ্ভূত আর্থিক বিপর্যয়ের কারণে আর্থিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছেন এ অভিনেত্রী।
শিশুশিল্পী থেকে প্রাপ্তবয়স্কদের প্রধান চরিত্রে রূপান্তরিত হওয়ার পর, লিন্ডসে লোহানের পারিশ্রমিক বেড়ে যায়। জানা গেছে, ‘ফ্রিকি ফ্রাইডে’র জন্য তিনি সাড়ে ৫ লাখ মার্কিন ডলার এবং ‘কনফেশনস অফ অ্যা টিনএজ ড্রামা কুইন’ এবং ‘মিন গার্লস’র জন্য তিনি ১ মিলিয়ন ডলার করে আয় করেছেন। মিন গার্লসের সাফল্য তাকে আরও খ্যাতি এনে দিয়েছে, যার ফলে নিজের পারিশ্রমিক আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। পরবর্তী তিনটি সিনেমা ‘হার্বি : ফুলি লোডেড’ (২০০৫), ‘জাস্ট মাই লাক’ (২০০৬) এবং ‘জর্জিয়া রুল’ (২০০৭) থেকে তিনি মোট সাড়ে ৭ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।
তবে লিন্ডসে লোহানের আয় কেবল অভিনয় থেকে আসেনি। গানেও তিনি পারদর্শী। ‘ফ্রিকি ফ্রাইডে’র সিনেমার জন্য ট্র্যাক রেকর্ড করেছেন লোহান। ‘স্পিক’ (২০০৪) ও ‘অ্যা লিটল মোর পার্সোনাল’ (২০০৫) শিরোনামে দুটি স্টুডিও অ্যালবামও প্রকাশ করেছেন। এ ছাড়াও তিনি মডেলিং থেকে আয় করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে প্লেবয়ের জন্য পোজ দেওয়া এবং অপরাহ উইনফ্রের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকার সিরিজে তার উপস্থিতি।
সাফল্যের শীর্ষে থাকাকালীন মদ্যপান এবং মাদকদ্রব্য ব্যবহার শুরু করেন লিন্ডসে লোহান। তাকে বলা হতো ‘পার্টি গার্ল’। ঠিক এ কারণে ২০১২ সালের মধ্যে তার ক্যারিয়ার প্রায় তলানিতে পৌঁছেছিল। ‘লিজ অ্যান্ড ডিক’-এ অভিনয়ের জন্য তিনি মাত্র ৩ লাখ ডলার আয় করেছিলেন।
ওই বছরের শেষদিকে তিনি ঋণের জালে আটকে যান। আইনি ঝামেলা এবং ব্যক্তিগত সমস্যার পাশাপাশি, অমিতব্যয়ী জীবনযাত্রা তার আর্থিক অবস্থার ওপর আরও চাপ সৃষ্টি করেছিল। বিজনেস ইনসাইডারের মতে, লোহানের ২ লাখ ৩৩ হাজার ডলার কর বকেয়া থাকার কারণে আইআরএস তার অ্যাকাউন্টের নিয়ন্ত্রণও দখল করে নিয়েছিল।
তবে, সম্প্রতি লিন্ডসে লোহান বছরের পর বছর ধরে যে প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছিলেন তা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছেন। যদিও তার তিনটি নেটফ্লিক্স প্রজেক্ট ‘ফলিং ফর ক্রিসমাস’, ‘আইরিশ উইশ’ ও ‘আওয়ার লিটল সিক্রেট’ থেকে সঠিক আয় জানা যায়নি, তবে এ সিনেমাগুলো তার ক্যারিয়ার পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কাজের সূত্রে লোহান শিগগিরই জেমি লি কার্টিসের সঙ্গে ‘ফ্রিকিয়ার ফ্রাইডে’ নিয়ে বড় পর্দায় ফিরছেন।
হলিউড