পর্নো ছবির তারকা থেকে বলিউডে জায়গা করে নেওয়া অভিনেত্রী সানি লিওনের আজ জন্মদিন। আজ মঙ্গলবার, ১৩ মে, তিনি ৪৪ বছরে পা রাখলেন। সাহসী উপস্থিতি আর নানা বিতর্ক পেরিয়ে আজ তিনি কেবল গ্ল্যামার-আইকন নন, বরং একজন সফল তারকা মুখ।
জীবনের নানা বাঁকে, নানা পরিচয়ে দেখা দিয়েছেন সানি লিওন। কেউ তাঁকে দেখেন সাহসী নারী হিসেবে, কেউবা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু। কিন্তু নিজের পরিচয় গড়েছেন নিজেই। জন্মদিনে চলুন জেনে নিই সানির জীবনের কিছু পরিচিত এবং কিছু কম পরিচিত অধ্যায়।
নার্স হওয়ার স্বপ্ন, বেকারি থেকে রুপালি পর্দায়
সানির জন্ম কানাডার অন্টারিওতে, এক শিখ-পাঞ্জাবি পরিবারে। তাঁর আসল নাম করনজিৎ কাউর ভোহরা। ছোটবেলায় ধর্মীয় স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। তবে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলাতেও ছিলেন সক্রিয়। বড় হয়ে পড়েন পেডিয়াট্রিক নার্সিংয়ে। কাজও নেন একটি জার্মান বেকারিতে। কিন্তু জীবনের মোড় ঘোরে ১৯ বছর বয়সে। সেই বয়সেই তিনি সাহসী সিদ্ধান্ত নেন—পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করেন। কিছুদিনের মধ্যেই হয়ে ওঠেন অন্যতম পরিচিত নাম।
বলিউডে অভিষেক
বলিউডে পা রাখার আগে সানি চারবার ঘুরে যান ভারত। ২০০৫ সালে প্রথমবার ভারতের টেলিভিশনে দেখা যায় তাঁকে—এমটিভি অ্যাওয়ার্ডসে রেড কার্পেট রিপোর্টার হিসেবে। ২০১১ সালে জনপ্রিয় রিয়েলিটি শো ‘বিগ বস’-এ অংশ নিয়ে প্রথমবার ভারতের ঘরে ঘরে পরিচিত হয়ে ওঠেন। সেখান থেকেই পরিচালক মহেশ ভাটের নজরে আসেন। এরপর ২০১২ সালে ‘জিসম ২’ দিয়ে শুরু বলিউড–যাত্রা। এরপর ‘রাগিনি এমএমএস ২ ’, ‘এক পাহি লিলা’, ‘মাস্তিজাদে’, ‘তেরি মেরি কাহানি’সহ একাধিক সিনেমায় অভিনয় করেন। শাহরুখ খানের ‘রইস’-এ একটি বিশেষ গানে তাঁকে দেখা যায়, যা দারুণ জনপ্রিয় হয়।
প্রেম, বিচ্ছেদ, ভালোবাসা
সানির জীবনে প্রেম এসেছে একাধিকবার। প্রথম সম্পর্ক ‘প্লেবয়’ ওয়েবসাইটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাট এরিকসনের সঙ্গে, ২০০৮ সালে তাঁদের বিচ্ছেদ হয়। এরপর সম্পর্ক হয় স্ট্যান্ডআপ কমেডিয়ান রাসেল পিটারসের সঙ্গে। কিন্তু সেটাও স্থায়ী হয়নি। অবশেষে ড্যানিয়েল ওয়েবার নামের একজন সংগীতশিল্পী ও প্রযোজকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। ২০১১ সালে তাঁরা বিয়ে করেন। এখন ড্যানিয়েলই তাঁর পার্টনার, ম্যানেজার এবং সবচেয়ে বড় সমর্থন। তাঁদের দাম্পত্যজীবন সুখের। দত্তক কন্যা নিশা এবং সারোগেসির মাধ্যমে জন্ম নেওয়া যমজ পুত্র নোয়া ও আশেরকে নিয়ে এখন তাঁদের সুখী পরিবার।
পশুপ্রেমী সানি
ব্যক্তিজীবনে সানি একজন প্রাণিপ্রেমী। তাঁর দুটি কুকুরের নাম লিলু ও চপার। তিনি পশুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পেটা’র (PETA) হয়ে বহুবার ক্যাম্পেইনে অংশ নিয়েছেন। পশুদের প্রতি নিষ্ঠুরতা রোধে অর্থ সংগ্রহ ও সচেতনতামূলক কাজেও অংশ নেন তিনি।
প্রথম ভারতীয় তারকার নিজস্ব অ্যাপ
২০১৬ সালে সানি চালু করেন নিজের মোবাইল অ্যাপ। তিনি প্রথম ভারতীয় তারকা, যাঁর নিজস্ব অফিশিয়াল অ্যাপ চালু হয়েছিল। ভক্তরা সেখানে সানির লাইভ স্ট্রিম, ছবি, ভিডিও, ব্যক্তিগত বার্তা এমনকি নিজস্ব ব্লগ পড়তেও পারতেন। একই বছর বিবিসি ঘোষণা করে বিশ্বের ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকা, যেখানে সানিও জায়গা করে নেন। সেই তালিকায় তাঁর জায়গা পাওয়া অনেককেই অবাক করলেও সানি তখন বলেছিলেন, ‘একজন নারী হিসেবে নিজের স্বপ্ন পূরণ করাটা আপনার অধিকার।’
MeToo’-এ নিজের অভিজ্ঞতা জানালেন
২০১৮ সালে #MeToo আন্দোলন যখন ভারতেও ছড়িয়ে পড়ে, তখন সানিও মুখ খোলেন নিজের কষ্টের অভিজ্ঞতা নিয়ে। ১৮ বছর বয়সে একটি মিউজিক ভিডিওর শুটিং চলাকালে এক র্যাপার তাঁর সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন। সানি জানিয়ে দেন—যদি ওই ব্যক্তি সেটে থাকেন, তবে তিনি কাজ করবেন না। প্রযোজক ও পরিচালককে আলটিমেটাম দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেন সানি। পরবর্তী সময় তাঁর বায়োপিক সিরিজ ‘করণজিৎ কাউর: দ্য আনটোল্ড স্টোরি’তেও এ ঘটনার উল্লেখ রয়েছে।
পর্নো তারকা থেকে অভিনেত্রী
সানি লিওনের জীবনে বিতর্ক যেমন আছে, তেমনি আছে সংগ্রাম, সাহস আর স্বপ্ন। নিজের অতীতকে অস্বীকার না করে বরং সেটাকে সঙ্গী করেই এগিয়েছেন তিনি। নেতিবাচক মন্তব্য, অসম্মান, রক্ষণশীল দৃষ্টিভঙ্গি উপেক্ষা করে তিনি বলিউডের একজন চেনা মুখ, একজন উদ্যোক্তা, মা এবং পশুপ্রেমী নারী। ৪৪ বছর পূর্ণ করলেন তিনি কিন্তু আজও তাঁর জীবন কেবল সাহস আর সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হয়ে আছে। জন্মদিনে সানির একটি বার্তা হয়তো সবার জন্যই প্রযোজ্য—‘অতীত কখনো ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না।’