প্রতিদিনের মতো আজও সূর্য উঠেছে। সূর্য নতুন নয়, সূর্যোদয়ও নতুন নয়। কিন্তু পৃথিবীতে নতুন দিন আসে। আজও এসেছে। বছরের প্রথম দিন। শুভ খ্রিষ্টীয় (গ্রেগরীয়) নববর্ষ। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন, ‘সত্তার আবির্ভাবের সঙ্গে প্রথম দিনের সূর্যোদয়ের সম্পর্ক আছে- প্রথম দিনের সূর্য/ প্রশ্ন করেছিল/ সত্তার নূতন আবির্ভাবে/ কে তুমি।’ সত্তার এই উদ্ভাসন আমাদের মানবজীবনকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। মানুষ তার ভাবনার ভেতর দিয়ে, কর্মের ভেতর দিয়ে, জীবনকে মহিমান্বিত করে তোলে। এই নতুন বছরে এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার। ফেলে আসা বছরটির দিকে ফিরে তাকালেও বোঝা যাবে, নতুন বছরে অনেক কিছু করার আছে আমাদের।
একটা দিন বা মুহূর্তের ব্যবধানে ২০২৪ সালটি মহাকালের পাতা থেকে চিরকালের মতো হারিয়ে গেল। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য করণীয় রেখে গেছে অনেক কিছু। বিদায়ী বছরটি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটা উল্লেখযোগ্য বছর হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। একদিকে রাজনীতিতে নতুন প্রত্যাশা; অন্যদিকে জনজীবনে অস্থিরতা, সংঘাত, মব-অপরাধ, মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক সংকটের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্যের বিষয়টি সারা বছর সাধারণ মানুষের উদ্বেগের কেন্দ্রে ছিল। রাজনীতিও সুস্থির ও ভবিষ্যৎমুখী হয়ে উঠতে পারেনি। নতুন বছরে সহিষ্ণুতা, ধৈর্য, রাষ্ট্র পরিচালনায় দূরদর্শিতা আর সম্মিলিত উদ্যোগের মাধ্যমে এসব সংকট থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে।
পরিবর্তন কতটা ইতিবাচক হবে, নতুন বছরে তা দৃশ্যমান হয়ে উঠবে।
ইতিবাচক পরিবর্তনের কোনো বিকল্প নেই। জনজীবনে যাতে স্বস্তি আসে, জন-আকাঙ্ক্ষা যাতে পূর্ণ হয়, রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা অধিষ্ঠিত হয়েছেন বা হবেন, সেদিকে তাদের নজর দিতে হবে। আমরা আশা করব, জনমানুষের মধ্যে যে বিপুল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, সেই প্রত্যাশার দিকে লক্ষ রেখে তারা দেশ পরিচালনা করবেন। বিশেষ করে সাধারণ মানুষ যাতে আগের তুলনায় ভালোভাবে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারেন, শান্তিতে থাকতে পারেন, নিরুদ্বেগ জীবন কাটাতে পারেন, সেই পরিবেশ তাদের দিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনায় এটাই যেন হয় মূল লক্ষ্য।
বৈশ্বিক পরিমণ্ডলেও পৃথিবীর অনেক অঞ্চল যুদ্ধ-সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত, রক্তাক্ত ছিল। ফিলিস্তিনে বিপুল প্রাণহানি ঘটেছে। নতুন বছরে আমরা এ রকম সংঘাতপূর্ণ পৃথিবী দেখতে চাই না। বিশ্বনেতারা সেদিকে নজর দেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করছি।
নতুন বছর মানে নতুন অনেক কিছুর সূচনা। সূর্যের আলো যেমন অন্ধকার দূর করে সবকিছুকে উদ্ভাসিত করে তোলে, সেভাবে অনেক কিছুই আমাদের সামনে চলে আসবে। নতুন উদ্যোগ, নতুন প্রত্যাশা, নতুন কিছু অর্জনের অভিপ্রায়ে আমাদের আবার জেগে উঠতে হবে। অতীতের ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন কর্মে নিয়োজিত হতে হবে। যা অর্জন করা যায়নি তাকে ভুলে গিয়ে জীবনের আনন্দযজ্ঞে মেতে ওঠাই মানবধর্ম। যা জরুরি তা হচ্ছে ‘ভিশন’, বাংলাদেশকে নতুন করে বিনির্মাণের দূরদর্শী চিন্তা। এ জন্য যা কিছু জীর্ণ, যা কিছু পুরোনো, তার সবকিছু পেছনে ফেলে দূরদর্শী ভাবনা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।
আমরা চাই একটা সুন্দর, সুখী, শান্তিপূর্ণ মানবিক মহিমায় উদ্ভাসিত স্বদেশ। নতুন বছরে সবুজ সিলেটের পাঠক, লেখক, এজেন্ট, হকার ও শুভানুধ্যায়ীদের অনেক শুভেচ্ছা। শুভ নববর্ষ।