সিলেটের গোয়াইনঘাটে এখন ‘টক অব দ্য টাউন’ উপজেলা প্রকৌশলী হাসিব আহমদের সদ্য কেনা ৫ লাখ টাকার ‘রয়েল এনফিল্ড’ এবং তার দম্ভোক্তি। সরকারি অফিসের দেয়ালে ‘নো পার্কিং’ লিখে নিজেই সেখানে বিলাসবহুল বাইক পার্কিং করা এবং দুর্নীতির অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন তোলায় মেজাজ হারিয়েছেন তিনি। দাম্ভিক সুরে তার উত্তর— ‘আমি কি ফকিরনির পোলা?’—এ নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহল ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে তীব্র সমালোচনা।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের সামনে স্পষ্ট করে লেখা—‘এখানে যানবাহন পার্কিং করা নিষেধ’। সাধারণ মানুষের জন্য এই নিয়ম কঠোর হলেও তা মানছেন না খোদ প্রকৌশলী হাসিব আহমদ। নিয়ম উপেক্ষা করে প্রকৌশলী হাসিব তার ৫ লাখ টাকার ‘রয়েল এনফিল্ড’ বাইকটি দাপটের সাথেই প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে পার্ক করে রাখেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তার বেতনের টাকায় কীভাবে এত বিলাসবহুল গাড়ি কেনা সম্ভব? আর নিয়ম কি শুধুই সাধারণ জনগণের জন্য?’
শুধু বিলাসিতাই নয়, প্রকৌশলী হাসিবের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ চরমে। অভিযোগ রয়েছে, তার অনিয়মের কারণে গোয়াইনঘাট–সালুটিকর রোডের টেন্ডার বাতিল হয়েছে। এছাড়া হাদারপার-দমদমা রোডে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার এবং রহস্যজনক কারণে গোয়াইনঘাট-সোনারহাট রোডের কাজ বন্ধ থাকার পেছনেও তার হাত রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হলো, উপজেলার হাদারপার এলাকার পিরেরবাজার নামক স্থানে এক সাথে কয়েকটি ব্রিজের কাজ করছেন কার্যক্রম নিষিদ্ধ গোয়াইনঘাট উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ফারুক আহমদ। স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, স্বৈরাচারী সরকারের দোসর ও ক্যাডারদের সাথে প্রকৌশলী হাসিবের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রের দাবি, প্রকৌশলী হাসিব ও যুবলীগ নেতা ফারুক পার্টনারশীপের মাধ্যমে এসব কাজ করছেন। ঠিকাদারদের অভিযোগ, চাহিদামতো ‘কমিশন’ না দিলে বিল আটকে রাখা হয়, অথচ গোপন দফারফা থাকলে নিম্নমানের কাজও নির্বিঘ্নে পাস হয়ে যায়।
সরকারি টাকার অপচয়ের এক অনন্য নজির স্থাপন করেছেন এই প্রকৌশলী। ফতেপুর ইউনিয়নে চলাচলের উপযোগী একটি টেকসই সেতু ভেঙে তা বড় করার প্রজেক্ট হাতে নেওয়া হয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, ইউনিয়নজুড়ে অসংখ্য ছোট বেইলি ব্রিজ জরাজীর্ণ থাকলেও একটি ভালো ব্রিজ ভেঙে নতুন করে তৈরি করা স্পষ্টত লুটপাটের ফন্দি।
অভিযোগ রয়েছে, প্রকৌশলী হাসিব আহমদ তার বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম এবং বিলাসবহুল বাইক বিতর্ক ধামাচাপা দিতে স্থানীয় কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মীকে ‘ম্যানেজ’ করেছেন। তবে দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মেজাজ হারান। বিলাসবহুল গাড়ির অর্থের উৎস জানতে চাইলে তিনি দাম্ভিকতার সুরে বলেন, আমি কী পিয়নের চাকরি করি? ৩০ বছর আমার চাকরির বয়স। আমি কি ফকিরনির পোলা নাকি? আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি আছে, ব্যবসা আছে।
পার্কিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এটা কোনো ইস্যুই না, মাইনর বিষয়। ইউএনও সাহেব সাইনবোর্ড লাগিয়েছেন, আবার তিনি আমাকে বলেছেন ফেলে দিতে। তবে গণমাধ্যমকর্মীদের ম্যানেজ করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন এবং সবশেষে প্রতিবেদককে অফিসে আসার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এ বিষয়ে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রতন কুমার অধিকারী বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কোনো ছাড় নেই। অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর নো পার্কিং জোনে এখন আর গাড়ি রাখা হয় না।