বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ১৯ জুন ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সারাদেশ

যশোরে ‘ছিনতাইয়ে’ জড়িত ৭ জন গ্রেফতার, উদ্ধার ৩২ লাখ টাকা

যশোরে নগদের ‘বিভ্রান্তিমূলক’ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার ১৬ ঘণ্টার মধ্যেই জড়িত ৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একইসঙ্গে ৩২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

বুধবার (১৮ জুন) দুপুর ২টার দিকে জেলা পুলিশ সুপারের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য দিয়েছেন পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার (১৭ জুন) সকাল পৌনে ১০টার দিকে যশোরের মণিরামপুর উপজেলার জামতলা এলাকায়  মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান নগদের প্রাইভেটকার ঠেকিয়ে ৩৫ লাখ টাকা ছিনতাই করা হয়। দুইটি মোটরসাইকেলে এসে চার দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদের ম্যানেজার রবিউল ইসলামের কাছ থেকে ওই টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ৯৯৯ নাম্বারে খবর পেয়ে মণিরামপুর থানা পুলিশ, যশোর ডিবি পুলিশ ও সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন সেল সদস্যরা মাঠে নামে। এরপর ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা ও বিভিন্ন কলাকৌশল প্রয়োগ করে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হয়। রাত ৩টার দিকে পুলিশ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত ৭ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। একইসঙ্গে খোয়া যাওয়া ৩২ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পেরেছি নগদ হাউসে দীর্ঘদিন ধরে প্রাইভেটকার চালক ইউসুফ আলী ওরফে সাজু (৩১) কাজ করছেন। তিনি ও তার ভায়রা ভাই ইমদাদুল গাজী (৪৬) এবং সুজন ইসলাম (৩৩) নামে তিনজন এই টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে আসছিল। তারই ফলশ্রুতিতে ১৭ জুন তারা আরও চারজন সহযোগী যথাক্রমে রনি গাজী (২৬), সাগর হোসেন (২৪), সোহেল রানা (২১) ও নাসিম গাজী (১৯) এই ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত হন।

তিনি জানান, ঘটনার দিন দুইটি মোটরসাইকেলে সুজন, রনি, সাগর ও সোহেল রানা ধারালো অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকা ছিনতাই করে। পুলিশ প্রথমে সাগরকে আটক ও তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ এবং তার কথা অনুযায়ী অপরাপর আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।

এরপর পুলিশ ইমদাদুল গাজীর কাছ থেকে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং সুজন ইসলামের কাছ থেকে ১৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করে।

গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সাজুর বাড়ি যশোর শহরের পোস্টঅফিসপাড়ায়, তার বাবার নাম খোরশেদ আলম মীর্জা। অন্য সবার বাড়ি ঝিকরগাছা উপজেলার দিগদানা গ্রামে।

অথচ ১৭ জুন সকালে নগদের টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনার পর বলা হয়েছিল ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে ৫৫ লাখ টাকা নিয়ে গেছে; কিন্তু পরে নগদের ম্যানেজার রবিউল ইসলাম বিভিন্ন সময় ছিনতাইয়ের টাকার অঙ্ক ভিন্ন ভিন্ন বলেন।

নগদ যশোর অফিসের অ্যাকাউন্টেন্ট মমিনুল ইসলাম দাবি করেন, তাদের হিসাব দেখানো হয় ৩৮ লাখ টাকার। পরে জানা যায়, তিন লাখ টাকা স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটরের আলমারিতে রাখা হয়েছে। তবে আজ (১৮ জুন) পুলিশ সংবাদ সম্মেলন করে ছিনতাইকৃত টাকার অঙ্ক বলছে ৩৫ লাখ টাকা।

এদিকে, ‘৫৫ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের’ খবরে গোটা শহরজুড়ে তা আলোচিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। বিভিন্ন সূত্র জানায় এই নগদের যশোরের স্থানীয় ডিস্ট্রিবিউটর ৫ আগস্টের পর পলাতক যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলোচিত কাউন্সিলর আলমগীর কবির ওরফে হাজী সুমন। যদিও পুলিশ ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে রবিউল ইসলামের নাম বলেছে।

হাজী সুমন বিগত আওয়ামী লীগের আমলে দখলবাজিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। পালিয়ে থাকা অবস্থায়ও তিনি যশোরে তার বিভিন্ন টেন্ডার ব্যবসা, নগদের ব্যবসাসহ অন্যান্য কার্যক্রম লোকজন দিয়ে পরিচালনা করছেন। নগদের যশোরে যে অফিস, তা যশোর ইনস্টিটিটিউটের (এমএম আলী রোড) ৭০৯ বর্গফুট জায়গা অবৈধ দখলে নিয়ে বহুতল একটি ভবন করে তার দোতলায় পরিচালনা করেন তিনি। শহরে তার বিশ্বস্ত লোক হিসেবে আলী আকবর সনি নামে একজন এসব দেখভাল করেন। ১৭ জুন দুপুরে ঘটনার পর ডিবি পুলিশ তাকে হেফাজতে নিলেও পুলিশ তা স্বীকার করেনি।

যশোরের মানুষের কাছে পলাতক একজন বিতর্কিত মানুষ কিভাবে ব্যবসা পরিচালনা এবং নগদের টাকা ছিনতাইয়ের নাটক করছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা মূলত ছিনতাই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত, কিভাবে ছিনতাই ঘটানো হলো এবং টাকা উদ্ধারকে প্রায়োরিটি দিয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে ‘তার’ সম্পৃক্ততা থাকলে কিংবা ‘তার’ বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি অফেন্সে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এটি আমাদের প্রাথমিকভাবে পাওয়া ঘটনার তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা। এ ঘটনার সঙ্গে আরও কিছু থাকলে অবশ্যই পরবর্তীতে দেখতে পাবেন।

তিনি জানান, আসামিদের আদালতে সোপর্দ করা হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার, সহকারী পুলিশ সুপার ইমদাদুল হক, জেলা গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) যশোরের অফিসার ইনচার্জ মো. মঞ্জুরুল হক ভুঞা, মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. বাবলুর রহমান খান উপস্থিত ছিলেন।

এই সম্পর্কিত আরো