মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদ (২৭) নামে এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে উপজেলার দক্ষিণ জামশা এলাকার নিজ বাড়ি থেকে ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
নিহত শাকিল আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ’১৮-১৯ সেশনের ভাস্কর্য বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের নাসিরুদ্দিন আহমেদের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সাত-আট মাস আগে শাকিল নিজের ফেসবুক আইডি থেকে একটি মন্তব্য করেন। তবে মন্তব্যটি ‘হজরত মুহাম্মদ (সা.)’কে উদ্দেশ্য করা হয়েছে দাবি করে বিতর্ক সৃষ্টি হলে সেটি তিনি মুছে ফেলেন। এরপর গতকাল সোমবার সম্প্রতি স্থানীয় কিছু ব্যক্তি পুরোনো সেই মন্তব্য নতুন করে ভাইরাল করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শাকিলকে হত্যাসহ নানা হুমকি-ধমকি দেন।
এদিকে গতকাল রাতে শাকিলের নিজ এলাকা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে লোকজন তাঁর বাড়িতে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গেও উচ্চবাচ্য ও খারাপ আচরণ করে নানা হুমকি দেয়। এসব ঘটনার পর গত রাত আনুমানিক ২টার দিকে শাকিল নিজ ঘরে গলায় ফাঁস দিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার আগে শাকিলের ফেসবুক আইডি থেকে একটি সুইসাইড নোট পোস্ট করা হয়। ওই পোস্টে বলা হয়, ‘আমি (শাকিল) জানি আর আমার আল্লাহ জানে, আমি নবী মুহাম্মদ (সা.)কে কোনো কটূক্তি করিনি। আমার বাবা-মাকে যেন লজ্জায় মুখ না লুকাতে হয়। এই লজ্জা নিয়ে বাঁচা যায় না। আমি নাস্তিক নই, গ্রামের সবাই আমাকে নাস্তিক বলছে। আগামীকাল আমার বাবাকে সবাই গালি দিবে, আমার মাকে সবাই অসম্মান করবে, এই লজ্জা আমি কখনো সহ্য করতে পারব না।’
ওই ফেসবুক পোস্টে আরও বলা হয়, ‘আমার চোখ, কিডনি সব দান করে গেলাম, এগুলো যেন নিয়ে নেওয়া হয়... বিদায়।’
শাকিলের বন্ধুবান্ধব সূত্রে জানা গেছে, শাকিলের গ্রামের বাড়িতে একটি গ্রাম্য সালিস বসানোর কথা ছিল। সেই সালিসে তাঁর মা-বাবাকে হাজির হতে বলা হয়। শাকিল আশঙ্কা করছিলেন, সালিসে তাঁর মা-বাবাকে অপমান করা হবে। এই মানসিক চাপে তিনি নিতে পারেননি।
সিঙ্গাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, মঙ্গলবার সকালে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের হয়েছে।