বিশ্বব্যাপী নিরাপদ পানির সংকট মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রায় ২.২ বিলিয়ন মানুষ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত। এ প্রেক্ষাপটে ‘প্রতিদিন মাত্র ১ লিটার পানি সাশ্রয় করলে বছরে ৩৪৫ বিলিয়ন লিটার পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব’ বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে শনিবার রাজধানীর মানিক মিয়া এভিনিউয়ের জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ওয়াটার ওয়ার্কস অ্যাসোসিয়েশন (বিডব্লিউডব্লিউএ)।
এবারের বিশ্ব পানি দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ছিল ‘হিমবাহ সংরক্ষণ’, যা বৈশ্বিক উষ্ণতার ভয়াবহ প্রভাব তুলে ধরে। বিকেল ৩:৩০টায় আয়োজিত মানববন্ধন শেষে অনুষ্ঠানের অংশ হিসেবে সোবাহানবাগের ড্যাফোডিল প্লাজার গ্রিন গার্ডেন রেস্তোরাঁয় ইফতার আয়োজন করা হয়। সেখানে বিডব্লিউডব্লিউএ’র স্যুভেনিরের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
অনুষ্ঠানে ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার অ্যাসোসিয়েশন (আইডব্লিউএ) বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ যোবায়ের হাসান বলেন, উত্তর গোলার্ধে দ্রুত গ্লেসিয়ার গলে যাচ্ছে, যার ফলে নদীভাঙন ও ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। এর ফলে বহু গ্রামবাসী শহরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে। এই চক্রটি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, যা পানির সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমে যাওয়া, খরা এবং লবণাক্ততার বৃদ্ধি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে লবণাক্ত পানির প্রবাহ কৃষি ও পানীয় জলের বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর জন্য আমাদের আরও বেশি গাছ লাগাতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে পানির সংকট আরও ভয়াবহ হয়ে উঠবে।
বিডব্লিউডব্লিউএ’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আমরা জাতিসংঘের নির্দেশিকা অনুযায়ী বিশ্ব পানি দিবস পালন করছি। সরকারের পাশাপাশি সামাজিক সংগঠনগুলোকে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে আসতে হবে।
‘হিমবাহ বাঁচাও, জীবন বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে সংগঠনটি বার্তা দেয় যে নিরাপদ পানির উৎস হিসেবে মাত্র ২.১% হিমবাহ ব্যবহারযোগ্য। যদি হিমবাহ গলা রোধ করা যায় তাহলে আগামী ১০০-২০০ বছর পর্যন্ত নিরাপদ পানির জন্য তা যথেষ্ট হতে পারে।
পানি সংরক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে আনোয়ার হোসেন বলেন, বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন যদি একজন ব্যক্তি মাত্র ১ লিটার করে পানি বাঁচায়, তাহলে বছরে ৩৪৫ বিলিয়ন লিটার পানি সংরক্ষণ করা সম্ভব। বিদেশের হোটেলগুলোতে পানির চাপ ০.১% নির্ধারণ করা হয়েছে। যদি আমরা পানির প্রবাহ ৫০% কমিয়ে দেই, তাহলে বিশাল পরিমাণে অপচয় রোধ করা সম্ভব।
রমজানের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, প্রতিদিন পাঁচবার অজু করতে মাত্র ৫০০ মিলিলিটার পানি যথেষ্ট, এমনকি প্রয়োজনে গোসল করতেও একই পরিমাণ পানি ব্যবহার করা সম্ভব।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের প্রায় ৪০% জনগণ নিরাপদ পানির সুবিধা থেকে বঞ্চিত, যা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষকে প্রভাবিত করে। এমন পরিস্থিতিতে, পানির সাশ্রয় এবং বনায়ন উদ্যোগের গুরুত্ব আরও বেড়ে যায়। বনায়ন সম্পর্কিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বনভূমি মোট ভূমির প্রায় ১৭.৪% (২.৬ মিলিয়ন হেক্টর) জুড়ে বিস্তৃত, যা দেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, বনাঞ্চল রক্ষার জন্য আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি আরও বাড়ার আগেই পানি সংরক্ষণের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। নীতিগত পরিবর্তন, সামাজিক সচেতনতা ও ব্যক্তিগত দায়িত্ববোধের সমন্বয়ে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে এখনই পানির ভবিষ্যৎ রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।