বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
অর্থ-বাণিজ্য

তুলা আমদানিতে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার প্রজ্ঞাপন জারি

অবশেষে টেক্সটাইল মিল মালিকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তুলা ও কৃত্রিম তন্তু আমদানিতে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) প্রত্যাহার করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাটি। এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে টেক্সটাইল মিল মালিকরা।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহার করা হয়েছে কাঁচা তুলা (কার্ডেড, আনকার্ডেড অথবা কম্বড), সিনথেটিক স্ট্যাপল ফাইবার এবং পলিয়েস্টার, অ্যাক্রিলিক ও নাইলনের মতো বিভিন্ন কৃত্রিম ফাইবারের। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তুলা আমদানিতে ২ শতাংশ অগ্রিম আয়কর করে এনবিআর।

বিটিএমএ’র সহসভাপতি সালেহউদ জামান বলেন, এ সিদ্ধান্ত টেক্সটাইল শিল্পকে দুর্দিনে কিছুটা হলেও সহায়তা করবে। নিশ্বাস নিতে সাহায্য করবে। তবে টেক্সটাইল শিল্পবিরোধী আরও কিছু রাজস্বসংক্রান্ত পদক্ষেপ আছে। যেগুলোর বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। যেমন এবারের বাজেটে দেশি সুতার ওপর কেজিপ্রতি সুনির্দিষ্ট কর ৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ টাকা করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্তের কারণে স্থানীয় বাজারে সুতার চাহিদা কমে যাবে। কারণ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীতে হাত বাড়ালেই বন্ড সুবিধায় আনা ভারতীয় সুতা পাওয়া যাচ্ছে। যা এই শিল্পের জন্য নতুন আরেকটি চ্যালেঞ্জ। সরকারের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদনেও ঢাকার আশপাশে বন্ডের সুতার গোডাউনের কথা উঠে এলেও এগুলোর বিরুদ্ধে কার্যকর অ্যাকশন নিচ্ছে না সরকারি কোনো সংস্থা।

তিনি আরও বলেন, টেক্সটাইল শিল্প তৈরি পোশাক শিল্পের পশ্চাৎপদ শিল্প হওয়া সত্ত্বেও এবারের বাজেটে এই শিল্পের করপোরেট কর সাধারণ অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো ২৭ শতাংশ করা হয়েছে। কার স্বার্থে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তা বুঝতে পারছি না। করপোরেট কর আগের ন্যায় ১৫ শতাংশ ও সুতার ওপর সুনির্দিষ্ট কর প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও সরকার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না কেন তা বোধগম্য হচ্ছে না।

এটি সিদ্ধান্ত সময়োপযোগী ও প্রয়োজনীয় আখ্যা দিয়ে এনভয় টেক্সটাইলসের প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ বলেন, এই সিদ্ধান্তে টেক্সটাইল মিল ও স্পিনারদের কার্যকর মূলধনের ওপর চাপ কমবে এবং তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে। এই পদক্ষেপ শিল্পকে আরও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে সহায়ক হবে।

টেক্সটাইল মিল মালিকরা বলছেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মন্দায় বাংলাদেশের শিল্প, অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গ্যাসের দ্বিগুণের বেশি মূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি, ডলারের সংকট, টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের ঘাটতি, ব্যাংক সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে ১৫-১৬ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনা অস্বাভাবিক হ্রাস করায় টেক্সটাইল মিলগুলো ধুঁকছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশ থেকে ডিউটি পরিশোধ ব্যতীত অবাধে সুতা আমদানি হচ্ছে। ফলে দেশীয় টেক্সটাইল শিল্পের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে এবং মিলগুলো অচিরেই বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে টেক্সটাইল শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে জরুরি ভিত্তিতে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যেমন শিল্পের ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রাপ্তিতে সহায়তা করা, ব্যবসাবান্ধব পলিসি নির্ধারণ, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্য যখন-তখন বৃদ্ধি না করে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ, যেসব ব্যবসায়ী ঋণ ঝুঁকিতে পড়েছেন, তাদের এক্সিট প্ল্যানের মাধ্যমে অব্যাহতি দেওয়া, নতুন নতুন সেক্টরে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে সহযোগিতা করা ও নীতি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করা এবং পুরাতন ব্যবসায়ীদের ওপর ট্যাক্সের পরিমাণ বৃদ্ধি না করে নতুন করদাতার সন্ধান করা।

এই সম্পর্কিত আরো