শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
শুক্রবার, ১৬ মে ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
অর্থ-বাণিজ্য

জুনের মধ্যে ৩.৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থ মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ অর্থনীতির জন্য এক সুসংবাদ নিয়ে এসেছে চলতি বছরের জুন মাস। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দেশটি খুব শিগগিরই চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি হিসেবে মোট ১.৩ বিলিয়ন বা ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পেতে যাচ্ছে। এই অর্থ ছাড়ের বিষয়টি আইএমএফের বোর্ড অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে এবং অনুমোদন মিললেই জুনের মধ্যেই তা একসঙ্গে ছাড় হবে বলে আশা করছে সরকার।

শুধু আইএমএফ নয়, বিশ্ব ব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি), জাপান এবং ওপেক ফান্ডসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকেও আরও প্রায় ২ বিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা আসতে পারে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। সবমিলিয়ে জুন মাসের মধ্যে বাংলাদেশে আসতে পারে মোট ৩.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক সহায়তা, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে বড় ধরনের স্বস্তি আনবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচির আওতায় তৃতীয় পর্যালোচনা (রিভিউ) সফলভাবে সম্পন্ন করার পর বাংলাদেশ চতুর্থ কিস্তির অর্থ ছাড়ের যোগ্যতা অর্জন করে। এর পরপরই সদ্য সমাপ্ত চতুর্থ রিভিউয়ের সফলতার ভিত্তিতে পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রেও সবুজ সংকেত মেলে।

আইএমএফ এই কিস্তি ছাড়ে সম্মতি জানিয়েছে মূলত বাংলাদেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন, মুদ্রা বিনিময় হার সংস্কার, এবং আর্থিক খাতের কাঠামোগত অগ্রগতির স্বীকৃতিস্বরূপ। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয় এই চতুর্থ রিভিউ, যার আনুষ্ঠানিক আলোচনা পরে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ বসন্তকালীন সভায় সম্পন্ন হয়। ওই বৈঠকের ফলাফল হিসেবে আইএমএফ ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে একটি স্টাফ লেভেল অ্যাগ্রিমেন্ট (এসএলএ) স্বাক্ষরিত হয়। আর এই চুক্তির মাধ্যমেই খুলে যায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের দরজা।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা ও দীর্ঘমেয়াদি সক্ষমতা নিশ্চিত করতে আমরা রাজস্ব নীতি, বিনিময় হার এবং আর্থিক খাতের কাঠামোগত সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সংস্কার পরিকল্পনা সম্পূর্ণভাবে সরকারের নিজস্ব উদ্যোগ এবং জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে।’

বিশ্ব ব্যাংক, এডিবি, এআইআইবি, জাপান ও ওপেক ফান্ডের বাজেট সহায়তার বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সরকার প্রত্যাশা করছে এই সংস্থাগুলোর সহায়তা জুন মাসের মধ্যেই পাওয়া যাবে। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি ঘটবে এবং টাকার বিনিময় হারের উপর চাপ হ্রাস পাবে, যা সামগ্রিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতায় বড় ভূমিকা রাখবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে টেকসই আর্থিক স্থিতিশীলতার জন্য একদিকে যেমন বহুপাক্ষিক ঋণ সহায়তা অপরিহার্য, তেমনি সরকারের প্রতিশ্রুত সংস্কার বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করাও জরুরি। বিশেষ করে রাজস্ব আহরণ ব্যবস্থায় কার্যকর সংস্কার ও বিনিময় হার নির্ধারণে বাজারভিত্তিক কাঠামো প্রতিষ্ঠা করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া শুরু করেছে। বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘মার্কেট বেসড এক্সচেঞ্জ রেট’ পদ্ধতি চালুর ঘোষণা দিয়েছে, যা দেশের মুদ্রানীতিতে এক নতুন ধারা সূচনার ইঙ্গিত দেয়। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি শুধু আইএমএফের সংস্কার শর্ত পূরণেই সহায়ক হবে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, চলমান বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশ যে আর্থিক স্থিতিশীলতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে, এই ঋণ ও সহায়তা প্রাপ্তি সেই প্রচেষ্টাকে আরও বেগবান করবে। তবে এই তহবিল ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত না হলে কাঙ্ক্ষিত সুফল পাওয়া কঠিন হবে বলে তাঁরা সতর্ক করেন।

সব মিলিয়ে বলা যায়, জুন মাসে আসন্ন ৩.৩ বিলিয়ন ডলারের বহুপাক্ষিক সহায়তা কেবল তাৎক্ষণিক অর্থনৈতিক স্বস্তিই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত সংস্কারের পথ প্রশস্ত করতে পারে—যদি সরকার প্রতিশ্রুত রিফর্মগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে।

এই সম্পর্কিত আরো