সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

জামালগঞ্জে বেলায় চড়ে ঝুকি নিয়ে পারাপার হয় শিক্ষার্থী ও পথচারীরা

কত নেতা এসে দেখে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছে। কেউ কথা রাখেনি। বছরের পর বছর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে আমাদের। একটা সেতু হলে বই খাতা নিয়ে আতংক ছাড়া স্কুলে আসা যাওয়া করতে পারতাম। এমন কথা বলেছেন মৌলিনগর গ্রামের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী মনসুরা বেগম। মৌলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান, আয়েশা আক্তার সহ অনেকে বেলায় পার হয়ে বিদ্যালয়ে যেতে হয় পাঠ গ্রহণ করতে।

উপজেলার ভীমখালী ইউনিয়নের মৌলিনগর গ্রামটি দুইভাগে বিভক্ত প্রায় ১০০ মিটার চওরা আনোয়ারা নদীর কারণে। এই নদীটি ভরাট হয়ে গেলেও হেমন্তে ৫০ মিটার বর্ষায় ১০০ মিটার এখনো রয়ে গিয়েছে। বর্ষায় এই নদীতে পানি থৈ থৈ করে। নদীর দুইপাশে রাস্তা থাকলেও এই নদীতে ব্রিজ হওয়ার দাবি এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের। যার কারণে প্রায় ১ দশক ধরে মৌলিনগর গ্রামের পথচারী, শিক্ষার্থী বেলায় চড়ে আনোয়ারা নদী পাড় হতে হয়। এতে করে বেশি দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থী, রোগী ও বয়স্করা।

গ্রামবাসী জানায়, আনোয়ারা নদীর পশ্চিমপাশে আছির উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, আটগাও মাহমুদপুর মাদ্রাসা, মাহমুদপুর গ্রামে দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং লালবাজার সহ একটি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।পূর্বপাশে নোয়াগাও অষ্টগ্রাম মাদ্রাসা, মৌলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নোয়াগাও বাজার।

বেশ কযেক বছর শিক্ষার্থী ও পথচারীরা নৌকায় পাড় হতো। কিন্তু নৌকা সব সময় পাওয়া যায় না। যার কারণে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৮ বছর যাবৎ বেলায় পাড় হচ্ছে। ৬ টি প্লাস্টিকের ড্রামের উপর তক্তা দিয়ে বেলা বানানো হয়। সরজমিন গিয়ে দেখা যায় প্লাস্টিকের ৬ টি ড্রাম চারকোণা করে বেঁধে উপরে তক্তা দিয়ে পাটাতন বিছিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই বেলা। বেলার দুইপাশে দুইটি লম্বা রশি আড়াআড়ি ভাবে খুঁটির সাথে বাঁধা। শিক্ষার্থী ও পথচারীরা বেলায় উঠে নিজেরাই রশি টেনে একপাড় থেকে অন্য পাড়ে পাড় হচ্ছেন।

সেখানকার বাসিন্দারা লালবাজার হয়ে উপজেলা সদরে যেতে হয় বেলায় আনোয়ারা নদী পাড় হয়ে। প্রায় ৩০০০ জনসংখ্যার বড় এই মৌলিনগর গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আনোয়ারা নদী পেরিয়ে বাজার, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। হেমন্তে সুপেয় পানির অভাবে মহিলারা বেলায় পাড় হয়ে পূর্বপাড় যেতে হয় পানি আনতে। নোয়াগাও অষ্টগ্রাম মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তানিয়া বেগম বলেন, আমি সহ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা এই বেলায় চড়ে বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করতে হয়।

বৃষ্টি কিংবা ঝড়ে বেলায় পাড় হওয়ার সময় আতংকে থাকতে হয় কখন জানি দূর্ঘটনা ঘটে। অনেক সময় বৃষ্টি আসলে শিক্ষার্থীদের বই, খাতা ভিজে যায়। বর্ষাকালে বেশি বেশি দূর্ঘটনা হয় জানি সে বলেন, এখানে একটা ব্রিজ হলে দুর্ভোগ কমে যেতো। মৌলিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোঃ কুতুব উদ্দিন বলেন, এই আনোয়ারা নদীটি গজারিয়া স্লুইসগেট থেকে কোড়াইল্লা হাওর হয়ে বলাহর ও উজ্জলপুর হয়ে সুরমার সাথে সংযোগ ছিল। বর্তমানে বছরের পর বছর পলি পড়ে নদীর রূপ পরিবর্তন হয়ে এখন মরা নদীতে রূপ নিয়েছে। এক বছর ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ড্রামের বেলা করে দেওয়া হয়েছিল। তারপর থেকে গত কয়েক বছর যাবৎ মৌলিনগর গ্রামবাসি চাঁদা তুলে বেলা তৈরি করে পাড়াপাড় হচ্ছি। প্রাথমিক, মাদ্রাসার প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন এই বেলায় ঝুকি নিয়ে পাড় হতে হচ্ছে। এছাড়াও শত শত পথচারী পাড়াপাড় হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ছোট শিক্ষার্থীদের বেলায় পাড়াপাড় নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তাদের কথা চিন্তা করে এই আনোয়ারা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা জরুরি হয়ে দাড়িয়েছে।

মৌলিনগর গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি মোঃ বরকত মিয়া (৭০) জানান, বহু বছর যাবৎ শুনে আসছি আনোয়ারা নদীতে একটি ব্রিজ হবে, কিন্তু কিছুই তো হচ্ছে না। উপায় না দেখে বাচ্চাদের পাড়াপাড়ের জন্য গ্রামবাসী মিলে ড্রামে বেলা বানাইয়া দিছি। এই বেলায় এখন গ্রামের সবাই পাড়াপাড় হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মোঃ নেছার আহমদ জানান, আনোয়ারা নদীর দুইপাশে বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাজার ও কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। পাড়াপাড়ে ভোগান্তি লাগোবে আনোয়ারা নদীর উপর একটি বেইলি ব্রিজ কিংবা সেতু নির্মাণ হলে এই এলাকার কয়েক হাজার মানুষের নিরাপদ যোগাযোগের ব্যবস্থা হতো। ভীমখালী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ আখতারুজ্জামান তালুকদার জানান, আনোয়ারা মরা নদীতে অনুর্ধ্ব ১০০ মিটারের একটি ব্রিজ উপজেলা পরিষদের (এলজিইডির) মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।

ব্রিজটি চালু হলে নোয়াগাও, লালবাজার হয়ে উপজেলা ও জেলা সদরের সাথে যাতায়াতের পথ সুগম হবে এবং ভীমখালী ইউনিয়ন সহ উপজেলার সকল লোকজনের দ্রুততম সময় ও কম খরচে জেলা ও উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। আমি উর্ধতন কতৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি দ্রুততম সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থী ও পথচারীদের পথ সুগম করতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মোঃ সানোয়ার হোসেন জানান, অনূর্ধ্ব ১০০ মিটার ব্রিজের প্রস্তাবণা অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রস্তাবটি অনুমোদন হয়ে আসলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্রিজটি করা হবে।

এই সম্পর্কিত আরো