শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
শনিবার, ১১ অক্টোবর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

'শ্যুটিংয়ে' অংশ নিতে সিলেটে সালাউদ্দিন আহমেদ

'শ্যুটিংয়ে' অংশ নিতে হঠাৎ সিলেটে আসলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। হ্যাঁ ঠিকই তিনি শ্যুটিংয়ে অংশ নেবেন, তবে এটা কোনো ফিল্মের শ্যুটিং নয়, যে পথ দিয়ে তাকে গুম করে ভারতে নেওয়া হয়েছিল। সেই পথেই করা হবে গুম-খুনের ডকুমেন্টারির শ্যুটিং। আর এই ডকুমেন্টারির শ্যুটিংয়ে অংশ নিতে শনিবার সকালের ফ্লাইটে সিলেট পৌঁছেই তামাবিল সীমান্ত এলাকায় যান বিএনপি'র সালাহউদ্দিন আহমেদ।


এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তিনি তামাবিল সীমান্তে অবস্থান করছিলেন।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১০ মে সন্ধ্যায় তাকে এই পথে ভারতের শিলং  নেয়া হয় বলে দাবি করেন সালাউদ্দিন।  প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম খুন নিয়ে ডকুমেন্টারি করা হচ্ছে। সেই ডকুমেন্টারির অংশের  শ্যুটিং এ অংশ নিতে তিনি তামাবিল সীমান্তে  যান।

২০১৫ সালের ১০ মার্চ গুম হওয়ার ৬৩ দিন পর তাকে ভারতের শিলং-এ পাওয়া যায়। শিলংয়ে আইনি জটিলতা ও মামলা মোকাবেলা করার কারণে তিনি প্রায় নয় বছর অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর ৬ আগস্ট তিনি ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফিরেন।

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুমের ঘটনার তদন্ত করতে হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে একটি পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, পুলিশ, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্টগার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগকারী বা বলবৎকারী কোনো সংস্থার সদস্যের হাতে জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তদন্তের জন্য এই কমিশন গঠন করা হয়েছে।

দেশে ফেরার ১০ মাস পর, ৩ জুন, সালাহউদ্দিন আহমেদ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গুমের অভিযোগ দাখিল করেন। অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করা হয়। তিনি সরাসরি চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে গিয়ে এই অভিযোগ জমা দেন।

সালাউদ্দিনের গুম হওয়ার ঘটনার ধারাক্রম:
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাত সাড়ে নয়টায় বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হন। তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, সাদা পোশাকে পুলিশ তাকে তুলে নিয়ে গেছে।

নিখোঁজ হওয়ার পর হাইকোর্ট ৫টি আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জানতে চায় সালাহউদ্দিনের অবস্থান, ঢাকা মহানগর পুলিশ, পুলিশ হেডকোয়ার্টার, র‍্যাব, স্পেশাল ব্রাঞ্চ এবং সিআইডি জবাবে জানান, তাদের হেফাজতে তিনি নেই। ১৯ মার্চ হাসিনা আহমেদ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার সুস্থভাবে ফেরত পাওয়ার দাবি জানান। তখন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা একে একে গ্রেপ্তার হচ্ছিলেন এবং আন্দোলন প্রায় নেতৃত্বহীন হয়ে যাচ্ছিল। আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সালাহউদ্দিন ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দলের কর্মসূচি ঘোষণা করছিলেন।

সালাহউদ্দিন নিখোঁজের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন বলে দাবি করেন তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

নিখোঁজের দুমাস পর ভারতের মেঘালয় রাজ্যের একটি হাসপাতাল থেকে তার স্ত্রীকে ফোন করলে মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়। তার পরিবার ও দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছিলো যে সরকারের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তাকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে গেছে। সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলে আসছিলো যে মি. আহমেদের অবস্থান সম্পর্কে তাদের কিছু জানা নেই।

হঠাৎ করে মেঘালয়ের একটি হাসপাতাল থেকে তার ফোন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। ভারতের পুলিশ জানায়, মি. আহমেদকে শিলং শহরের বাসিন্দারা উদভ্রান্তের মতো ঘুরতে দেখার পর তারা বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করেন। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রথমে তাকে সেখানকার পোলো গ্রাউন্ড গল্ফ লিঙ্ক এলাকায় দেখা যায়। পরে তার মানসিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে তাকে একটি সরকারি মানসিক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি মানসিক হাসপাতাল ‘মেঘালয় ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরো সায়েন্সেস (মিমহ্যানস) হাসপাতালে চিকিৎসার পর তাকে আদালতে পাঠানো হয়।

পরবর্তীতে সালাউদ্দিন আহমদ জানান, নিখোঁজ হওয়ার পর তাকে কবরের মতো নিঃসঙ্গ একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। সেখানে ছাদে হাই পাওয়ার লাইট ছিল, লোহার দরজার নিচ দিয়ে খাবার দেওয়া হতো এবং টয়লেট ব্যবস্থার জন্যও কোনো সুবিধা ছিল না। দুই মাস ধরে মাঝে মাঝে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এই সময় সরকারের সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ থেকে চরম নির্দেশনা আসছিল। মৃত্যুর প্রহর গণনা করতে থাকা সালাহউদ্দিনকে বাঁচানোর জন্য র‌্যাবের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা, যিনি সালাহউদ্দিনের জীবন বাঁচাতে সহানুভূতিশীল ছিলেন এবং একই বিসিএস ব্যাচের ছিলেন, গোপনভাবে সহায়তা করেন। তারা নানা কৌশল অবলম্বন করে ১০ মে গভীর রাতে তাকে তামাবিল সীমান্ত দিয়ে ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং শহরে পৌঁছে দেন।

শিলংয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাকে উদভ্রান্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ তাকে থানায় নিয়ে আসে। তার দেহে কোনো আঘাত বা চোটের চিহ্ন ছিল না, তবে হৃদরোগ এবং লিভারের সমস্যা রয়েছে বলে জানায়।

সালাহউদ্দিনকে আটক করার পর বৈধ নথিপত্র ছাড়া ভারতে প্রবেশের অভিযোগে দেশটির ফরেনার্স অ্যাক্ট অনুযায়ী মামলা করে মেঘালয় পুলিশ। ২০১৫ সালের ২২ জুলাই ভারতের নিম্ন আদালতে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর বিরুদ্ধে অনুপ্রবেশের অভিযোগে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় নিম্ন আদালতের রায়ে ২০১৮ সালে সালাহউদ্দিন খালাস পান। ভারত সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে তাঁকে সেখানেই থাকতে হয়।

২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আপিলেও খালাস পান সালাহউদ্দিন। আদালত তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশ দেন। একই বছরের ৮ মে সালাহউদ্দিন ভ্রমণ অনুমোদনের জন্য আসাম রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেন। আবেদনে তিনি বলেন, ২০১৫ সাল থেকে তিনি ভারতে আটকে আছেন। দেশটিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অনুপ্রবেশের মামলা হয়েছিল, সেই মামলায় আদালত তাঁকে খালাস দিয়েছেন। ২০১৬ সালের ১১ জুলাই তাঁর পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ভারতে থাকার কারণে তিনি নিজের পাসপোর্ট নবায়নের সুযোগ পাননি। ভ্রমণ অনুমোদন দেওয়া হলে তিনি নিজের দেশে ফিরতে চান।

সালাহউদ্দিন প্রায় নয় বছর শিলংয়ে অবস্থান করেন। দেশে ফেরার পথ সুগম হয় ৫ আগস্ট, শেখ হাসিনার পতনের পর। ৬ আগস্ট সালাহউদ্দিন দেশে ফেরার জন্য ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পান। ১১ আগস্ট তিনি দেশে ফেরেন।

এই সম্পর্কিত আরো