সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)-এর বিরুদ্ধে সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, নিয়মবহির্ভূতভাবে ১৪টি প্রকল্পের সভাপতির স্বাক্ষর ছাড়াই ১৬ লাখ ৬৫ হাজার টাকা উত্তোলন করে ইউএনও ও পিআইও’র যৌথ অ্যাকাউন্টে রাখা হয়েছে।
তদন্তে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা শতভাগ কাজ সম্পন্ন করলেও তাদের বিল পরিশোধ করা হয়নি। অথচ ২০ জুলাই উপজেলা প্রশাসনের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকল্পগুলোর কাজ ও অর্থ ছাড় শতভাগ দেখানো হয়েছে, যা সরকারি পরিপত্রের পরিপন্থী।
এর আগে, পিআইও মো. নুরুন্নবী সরকারের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শিশির মনির গত ১২ আগস্ট দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। পরে অধিদপ্তরের উপপরিচালক (আইন) মো. আশরাফুল হক সরেজমিন তদন্ত শেষে ৩ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন জমা দেন। সেখানে ইউএনও পিয়াস চন্দ্র দাসকেও অভিযুক্ত করা হয়।
প্রকল্পের সভাপতিরা অভিযোগ করে বলেন, প্রথম কিস্তির অর্থ পেলেও দ্বিতীয় কিস্তির টাকা আটকে রেখে কর্মকর্তারা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। ৪নং শাল্লা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য ও প্রকল্প সভাপতি মো. আব্দুল হাই বলেন, “শতভাগ কাজ শেষ করার পরও বিল দেওয়া হয়নি।” একই অভিযোগ করেন আটগাঁও ইউনিয়নের সদস্য মো. নুরুল হক।
হাওর ও নদী রক্ষা আন্দোলনের শাল্লা শাখার আহ্বায়ক মো. সাইফুর রহমান বলেন, “সরকারি বরাদ্দের অর্থ হাওর ও নদী রক্ষার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। বিল আটকে রেখে টাকা আত্মসাতের ঘটনা দুর্নীতির স্পষ্ট প্রমাণ।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও নুরুন্নবী সরকার বলেন, “তদন্ত প্রতিবেদন ধুয়ে ধুয়ে পানি খাও।” তবে অফিসে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি; জানা গেছে, তিনি অনুমতি ছাড়াই দীর্ঘদিন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন।
সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. হাসিবুল হাসান জানান, “পিআইও দুদিনের ছুটি নিয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে মন্ত্রণালয়।”
অন্যদিকে ইউএনও পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, “আমাদের অনেক কিছু মেইনটেইন করতে হয়। টাকা রাখা না হলে সরকারি কোষাগারে চলে যেত।”
তদন্ত কর্মকর্তা মো. আশরাফুল হক নিশ্চিত করেছেন যে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে এবং শিগগিরই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রসাশক ড. ইলিয়াস মিয়া বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি, ব্যবস্থা নেওয়া হবে।