সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলার কসকনপুর ইউনিয়নের নিয়াগুল গ্রামের আব্দুল খালিকের ছেলে বেলাল আহমদ শাহিন, একজন নিরীহ দিনমজুর, কথিত চুরির অভিযোগে সাজানো মামলায় জেল খাটছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ১ সেপ্টেম্বর জকিগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আটক করে এবং পরবর্তীতে নাজমুন নাহার (৪১) কর্তৃক দায়েরকৃত একটি চুরির মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। এই ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মামলার বাদী নাজমুন নাহার তার অভিযোগে উল্লেখ করেন যে, গত ১১ থেকে ১২ আগস্টের মধ্যে অজ্ঞাতনামা চোরেরা তাদের বাড়ির বারান্দার গ্রিলের ভেন্টিলেটর ভেঙে, বসতঘরের পাঁচটি দরজা ভেঙে এবং মেইন গেট খোলা অবস্থায় প্রবেশ করে। তারা চারটি কক্ষ থেকে একটি ওয়ালটন ফ্রিজ, একটি মিনিস্টার ফ্রিজ, দুইটি সিলিং ফ্যান, একটি পানির মটর, ছয়টি বিদেশি কম্বল, একটি সৌর বিদ্যুতের ব্যাটারি এবং দুইটি বাচ্চাদের সাইকেলসহ অন্যান্য মালামাল চুরি করে নিয়ে যায়। এই অভিযোগ দায়ের করা হয় ঘটনার প্রায় ২০ দিন পর, ১ সেপ্টেম্বর।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, অভিযোগ দায়েরের পরপরই জকিগঞ্জ থানা পুলিশ কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই শাহিনকে আটক করে এবং তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখায়।
সূত্রে জানা যায়, বাদীর অভিযোগে উল্লিখিত কোনো চুরি হওয়া মালামালই জকিগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি। পুলিশের জব্দ তালিকায় একটি লোহার সেনি, একটি বাট, একটি প্লাম এবং একটি হাইকো মডেলের ফ্রিজ উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শাহিন একজন রাজমিস্ত্রি হওয়ায় তার ঘরে সেনি, বাট থাকা স্বাভাবিক। এছাড়া, পুলিশ তার ঘর থেকে তার নিজস্ব হাইকো মডেলের ফ্রিজটি জব্দ দেখিয়ে চুরির মালামাল হিসেবে উপস্থাপন করেছে, যখন বাদীর অভিযোগে ওয়ালটন ও মিনিস্টার ফ্রিজের কথা বলা হয়েছে।
এলাকাবাসী ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা শাহিনের নির্দোষ দাবি করেছেন। তারা জানান, বেলাল আহমদ শাহিন এই এলাকারই সন্তান এবং তার পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এখানে বসবাস করছে। তার বাপ-দাদাও এই এলাকার। তিনি একজন সহজ-সরল ও ভালো ছেলে। তার তিন ভাই বিদেশে থাকেন এবং একজন ভাই প্রতিবন্ধী, এক বোন ও বয়বৃদ্ধ মাকে নিয়ে দিনমজুরি করে সংসার চালান শাহিন।
কসকনপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেম্বার কামরুল হক জানান, ছেলেটি খুবই নম্রভদ্র। তার বাবাও রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন এবং শাহিনও বাবার সাথে এই কাজ করতো। সে এরকম কাজ করতে পারে না। মনে হচ্ছে, কারো পূর্ব শত্রুতার কারণে তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
কসকনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সত্তার মঈনও এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, ১২ আগস্টের ঘটনা ঘটার পরও কেন ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগ দায়ের করা হলো? বাড়ির কেয়ারটেকার এবং আত্মীয়-স্বজন প্রতিদিন বাড়ি দেখাশোনা করলে ও তারা এত দেরিতে অভিযোগ দায়ের করলেন কেন? একজন সহজ-সরল রাজমিস্ত্রিকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করে পেশাদার আন্তঃজেলা চোর চক্রের সদস্য বানানো খুবই দুঃখজনক।
তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, কেউ যদি চুরি করে থাকে, তাহলে চুরির মালামাল নিজের ঘরে রাখার কথা নয়। অথচ পুলিশ শাহিনের ঘর থেকে তার নিজের মালামালকেই জব্দ করে তাকে চোর বানালো।
শাহীনের পরিবার জানিয়েছে, তার ছেলে কোনও প্রকার অপরাধের সঙ্গে কখনো জড়িত ছিলো না। একটি মহল তাদের মানসম্মান ক্ষুন্ন করতে তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে চুরির মামলায় ফাঁসিয়েছে। তিনি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করে বলে আমরাও আইনের আশ্রয় নিব।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সবীজ কুমার দেব তিনি হাইকো মডেলের ফ্রিজ জব্দ করা কথা স্বীকার করেছেন। তবে দাবি করেন মিনিষ্টার এবং হাইকো একই কোম্পানী এবং কাগজপত্রের সাথে ফ্রিজটির মিল ছিলো।
স্থানীয়রা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে পুলিশের এই ধরনের কার্যকলাপকে ‘অত্যন্ত দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন। তারা শাহিনের দ্রুত মুক্তি এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।