নগরীতে যানজটের কারণ চিহ্নিত করে এবার বড় ধরণের অভিযানে নামছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি)। অবৈধ যানবাহন ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে, অনিবন্ধিত গাড়ি চলাচল বন্ধ এবং ব্যাটারি চালিত রিকশার বিরুদ্ধে চলবে এই অভিযান।
সোমবার সকাল থেকে অভিযানে নামবে এসএমপির ট্রাফিক, ক্রাইমসহ বিভিন্ন ইউনিট। সমন্বিত এই অভিযানের আগে রোববার সতর্ক করে সময় দেওয়া হবে। যদি কেউ নির্দেশনা অমান্য করেন, তবে নিয়মিত মামলায় জেলে যেতে হবে।
এসএমপি সূত্রে জানা গেছে, সোমবার থেকে নগরীতে চলাচল করা অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত যানবাহন ও চোরাই গাড়ি ডাম্পিংয়ে নেওয়া হবে। সেই সাথে এক নাম্বারে চলা একাধিক সিএনজি অটোরিকশাগুলোও ডাম্পিং করা হবে।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ, অবৈধ সিএনজি, ব্যাটারি চালিত যানবাহন ও চোরাই গাড়ি ডাম্পিংয়ে নেওয়া হবে। ট্রাফিক, ক্রাইম ইউনিটসহ এসএমপির সব ইউং একসাথে মাঠে নামবে।
এছাড়া দোকানীদের যারা ফুটপাত দখল করে পসরা সাজিয়েছেন কিংবা ভাড়া দিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ফুটপাত দখল করে বসা দোকানপাট, অবৈধ স্টল ও স্থাপনাও উচ্ছেদে রোববার স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হবে। আল্টিমেটাম দিয়ে যৌথ টিম মাঠে নামবে। মূলত; নগরীর শৃঙ্খলা ফেরাতে আমাদের এই উদ্যোগ। জনগণের ভোগান্তি কমানোই মূল লক্ষ্য। সোমবার থেকে নিয়মিত এই অভিযান চলবে।
এরইমধ্যে নবাগত পুলিশ কমিশনার আবদুল কুদ্দুছ যোগদানের পর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ও নাগরিক সেবায় 'জিনিয়া' (GenieA) নামে প্রযুক্তি নির্ভর মোবাইল অ্যাপ চালু করেন। এরপর মোটরসাইকেল আরোহিদের হেলমেট উৎসাহিত করতে হেলমেট ব্যবহারকারীদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এবার নগরীতে যানজট নিরসন ও অবৈধ যানবাহনের বিরুদ্ধে নামছে পুলিশ।
এছাড়া, ১৩ সেপ্টেম্বর জেলা প্রশাসন ও সিলেট সিটি করপোরেশনের যৌথ উদ্যোগে ক্বীন ব্রিজ থেকে হকারদের উচ্ছেদের মাধ্যমে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রেজাই রাফিন সরকার ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারোয়ার আলম। এ সময় উচ্ছেদ অভিযান তদারকিতে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। ওইদিন তিনি বলেন, আগে ফুটপাত দখল মুক্ত করতে চেষ্টা চালিয়েও পারিনি। এখন যেমন প্রশাসনের সহযোগীতা ও স্বতস্ফূর্ততা রয়েছে, তা আগে ছিল না।
সূত্র জানায়, ফুটপাত থেকে হকারদের পূণর্বাসনে সিসিকের উদ্যোগে হকার মার্কেট এলাকায় শেড তৈরী করা হয়। তারপরও পূণর্বাসন প্রক্রিয়া বাস্তব রূপ পায়নি। অধিক বিক্রির লালসায় হকাররা ফের সড়কে বসতে স্বাচ্ছন্দবোদ করেন। আর বিগত দিনে পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নামে চাঁদাবাজির কারণে হকার উচ্ছেদ সম্ভব হয়নি। তেমনী ৫ আগস্টের পর পরিবহণ সেক্টরের নিয়ন্ত্রকরা খুলস পাল্টে এখন আওয়ামী লীগ থেকে হিজরত করেছেন, বিএনপি, জামায়াত, খেলাফত মজলিসসহ বিভিন্ন দলে। তারা পরিবহণ সেক্টরকে নিয়ন্ত্রণ করছেন। ওইসব নেতাদের ছত্রছায়ায় নগরের মোড়ে মোড়ে, হাসপাতাল-ক্লিনিক, স্কুল-কলেজের সামনে সড়ক দখল করে গড়ে ওঠেছে অবৈধ স্ট্যান্ড। তাদের দাপট আগেও ছিল, এখনো আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরের বন্দরবাজারস্থ লালবাজারের সামনে ফুটপাত থেকে সড়কে মাটি ভরাট করে ক্রেতাদের সুবিধার্থে সিঁড়ি করে দিয়েছেন। জেল রোড থেকে বর্ণমালা স্কুলের সামন পর্যন্ত যেমন হকার, তেমনী সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্মে সড়ক দখলে থাকে। প্রধান ডাকঘরের সামনে থেকে নগরভবনের সামন, হাসান মার্কেটের প্রধান ফটক থেকে কোর্ট পয়েন্টের সড়কের আইল্যান্ড, ওভারব্রীজ, কালেক্টরেট মসজিদের সামন থেকে আদালতের সম্মুখভাগ, এসপি অফিসের সামন থেকে ডিসির বাংলোর সামন হয়ে জালালাবাদ পার্ক এমনকি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনেও থাকে হকারদের লাইন। একইভাবে জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্ট ও আম্বরখানা পর্যন্ত এবং স্টেডিয়াম মার্কেটের সামনের সড়কে, সবখানেই হকারদের দৌরাত্ম। আর এসব হকারদের বেশিরভাগই বহিরাগত। তারা রাজনৈতিক নেতাকর্মীর শেল্টারে দাপুটের সঙ্গে সড়কে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে, বিগত দিনে সিএনজি অটোরিকশায় ৩ জন চলাচলের নির্দেশনা এসএমপি। সে সুবাদে ভাড়া বাড়িয়ে দেন চালকরা। বর্তমানে ৫ জন নিলেও সেই বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর কোনো ধরণের নিয়মনীতি না থাকায় সিএনজি অটোরিকশা থেকে ব্যাটারি চালিত ও প্যাডেল চালিত রিকশাও ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করে। যা নিয়ে প্রতিনিয়ত যাত্রী ও চালকদের মধ্যে বাকবিত-া হয়। বিষয়টি সিলেট সিটি করপোরেশন নিয়ম করে দেওয়ার কথা থাকলেও এ নিয়ে কোনো মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্টদের।
নগরবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি ফুটপাত হকারমুক্ত করা। রাস্তা থেকে অবৈধ স্ট্যান্ড সরানো এবং নগরীর যত্রতত্র পার্কিং বন্ধ করা। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনগুলোর আশকারায় বেপরোয়া চালকরা। এবার নগরের শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ সফল হবে, এমনটি আশাবাদি নগরবাসীও।
এছাড়া নগরীর যান চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরাতে এসএমপির ৮ দফা নির্দেশনা জারি ও সোমবার থেকে অভিযানের বিজ্ঞপ্তি গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে এসএমপি। শনিবার পুলিশ কমিশনারের বরাত দিয়ে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
এতে জানানো হয়েছে, সোমবার সকাল থেকে এ নির্দেশনার আলোকে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এসএমপি কমিশনার জানান, নগরীর সম্মানিত নাগরিকদের ভোগান্তি কমানো এবং সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে এসব নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। কোনোভাবেই নগরীতে অনুমোদনবিহীন, কাগজপত্র ছাড়া বা নিয়ম অমান্যকারী যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
আট দফা নির্দেশনায় বলা হয়:
১. যানজটমুক্ত নগরী গড়ে তুলতে সিলেট মহানগরীতে কোনো ব্যাটারি চালিত রিকশা রেজিস্ট্রেশনবিহীন বা ভুয়া নম্বর প্লেটযুক্ত যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।
২. অনুমোদিত স্ট্যান্ডে নির্ধারিত সংখ্যার বেশি সিএনজি চালিত অটোরিকশা রাখা যাবে না।
৩.অনুমোদনবিহীন ও অননুমোদিত স্থানে কোনো ধরনের পার্কিং করা যাবে না।
৪. মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী উভয়কেই বাধ্যতামূলকভাবে হেলমেট পরিধান করতে হবে।
৫. সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নগরীতে ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরি প্রবেশ করতে পারবে না।
৬. বাস, মিনিবাস, কোচ, কার, মাইক্রোবাস ও হাইয়েসের চালকরা ড্রাইভিং লাইসেন্স, গাড়ির কাগজপত্র ও সিটবেল্ট ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবেন না।
৭. কোনো পরিবহনে অতিরিক্ত যাত্রী বা অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া যাবে না। এছাড়া হেডলাইট, ব্রেক লাইট ও সিগন্যাল লাইট সঠিকভাবে সচল না থাকলে গাড়ি রাস্তায় নামানো যাবে না।
৮. সিলেট শহরের ভেতরে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা করানো বা রাস্তার মাঝে গাড়ি পার্কিং করা যাবে না।
এসএমপি কমিশনারের স্বাক্ষরিত এ নির্দেশনায় আরও জানানো হয়েছে, নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।