সিলেটের বহুল আলোচিত ভোলাগঞ্জ পর্যটনকেন্দ্রের সাদা পাথর লুটের ঘটনায় মামলায় আরও এক আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিলাজুর গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে সুনীল বিশ্বাসকে (৩১) গ্রেপ্তার করে কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ। তিনি স্থানীয় বাসিন্দা ধরনী বিশ্বাসের ছেলে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, সোমবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়।
এদিকে, গ্রেপ্তার অভিযান শুরুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর পাথর কান্ডে জড়িত সহ প্রায় সবধরনের পাথর ব্যবসায়ী সবাই গা-ঢাকা দিয়েছেন। গ্রেপ্তার আতংকে এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এর আগে শনিবার দিবাগত রাতে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৯) আলোচিত মামলার অন্যতম মূল আসামি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সিপিএসসি সিলেটের একটি আভিযানিক দল ১৩ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট শহরের কোতোয়ালী থানার কুমারপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। দীর্ঘদিন পলাতক থাকা সাহাব উদ্দিনকে ওই সময় ঘেরাও করে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে তাকে কোতোয়ালী থানায় হস্তান্তর করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত সাহাব উদ্দিন (৫৪) ভোলাগঞ্জ এলাকার মৃত আ. বারীর ছেলে। তিনি দীর্ঘদিন পাথর ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং ভোলাগঞ্জ পাথর আমদানিকারক সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে তার নেতৃত্বে একটি প্রভাবশালী চক্র ভোলাগঞ্জে সক্রিয় হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, তার অনুসারীরা সরকারি জমি দখল, পাথরমহাল ভাড়া দেওয়া, এমনকি ভোলাগঞ্জ মহাসড়কের পাশের একটি রিসোর্ট ও রোপওয়ে বাঙ্কারে হামলার মতো ঘটনাতেও জড়িত ছিল। গত বছরের ওই হামলার পর থেকেই সাদা পাথর এলাকায় প্রকাশ্যে দখল ও লুটপাট শুরু হয়।
এ ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি হলে ১৫ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জ থানায় খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন ১৯৯২ এর ৫ তৎসহ দণ্ডবিধি ৩৭৯/৪৩১ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার অন্যতম আসামি সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে কোম্পানীগঞ্জ ও কোতোয়ালী থানায় সাতটি মামলা রয়েছে। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপি কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে গত ১১ আগস্ট তাকে সব পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়। দলীয় বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চাঁদাবাজি ও দখলবাজিসহ নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তার সাংগঠনিক দায়িত্ব স্থগিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ভোলাগঞ্জ সাদা পাথর বাংলাদেশের অন্যতম প্রাকৃতিক পর্যটনকেন্দ্র হলেও গত এক বছরে অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলন ও লুটপাটের কারণে পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। গণমাধ্যমে এসব অনিয়ম প্রকাশিত হলে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযানে নামতে বাধ্য করে।
এর পরই দুদক তদন্ত শেষে এই পাথর লুটের দায়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও মহানগর জামায়াতের আমীর মো. ফখরুল ইসলাম সহ ৫২ জন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করে সাদাপথরের পাথলুটে জড়িতমর্মে একটি প্রতিবেদন দাখিল করে। বিষয়টি দেশজুড়ে তুলপাড় সৃষ্টি করে।