সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, মাদক এখন উপজেলার প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে, যার কারণে এটি নির্মূল করা পুলিশের একার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। প্রশাসনের এমন নমনীয়তার কারণে দিন দিন মাদক কারবারীর সংখ্যা বাড়ছে এবং মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটগুলো আরও শক্তিশালী হচ্ছে।
মাদকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় স্থানীয় এক সাংবাদিককে মাদক কারবারীরা প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে। এই ঘটনায় নিজের নিরাপত্তা চেয়ে ওই সাংবাদিক থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
উপজেলার পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রাম, নারাইনপুর চিকাডহর, ছনবাড়ী ও জালিয়ারপাড় এবং উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের বরম সিদ্ধিপুর, মাঝের গাঁও, বনপুর আদর্শগ্রাম (গুচ্ছগ্রাম), লামাগ্রাম, তুরং, কালাইরাগ ও বতুমারা নোয়াগাঁও, দক্ষিণ রনিখাই ইউনিয়নের খাগাইল, পূর্ণাছগাম, সুন্দাউরা ও গৌরীনগর মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সীমান্ত এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ২৫টি বড় মাদক সিন্ডিকেট সক্রিয় রয়েছে, যার বেশিরভাগই নতুন কারবারী। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট এই স্থানীয় কারবারীদের সাথে যোগাযোগ করে এবং এমনকি অগ্রিম টাকাও দিয়ে থাকে।
উত্তর রণিখাই ইউনিয়নের মাদকের সিন্ডিকেটের মধ্যে রয়েছেন লামাগ্রামের মো. অলী মিয়া, নুর উদ্দীন, নজরুল মিয়া, কালা মিয়া, মুস্তাকিন আহমদ; বনপুর গ্রামের আনছার; মাঝেরগাঁও গ্রামের মানিক মিয়া, ফকির মিয়া, তাজ উদ্দিন, শাওন (মারুফ), রিয়াজ উদ্দিন, রুবেল আহমদ, বরম সিদ্ধপুর গ্রামের মাসুক মিয়া, হালিম মিয়া, অন্তর।
পশ্চিম ইসলামপুর ইউনিয়নের ছনবাড়ী গ্রামের আব্দুল জলিল ও মখলিছ মিয়ার নেতৃত্বে ১০-১২ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এছাড়াও জালিয়ারপাড়ের আব্দুল মানিক এবং চিকাডহর নারাইনপুর গ্রামের ইলিয়াস আলী ও আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে ৮-১০ জনের সিন্ডিকেট সক্রিয়। ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে হোসন মিয়া, সায়েদ আহমদ সহ প্রায় ১৮-২০ জনের একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটগুলো প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে মোটরসাইকেল, ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা, সিএনজি অটোরিকশা ও নোহা গাড়ি ব্যবহার করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাদক পাচার করে আসছে।
ভোলাগঞ্জ, পাড়ুয়া সহ বিভিন্ন গ্রামের সচেতন মহল মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও প্রশাসনের তেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। ভোলাগঞ্জ গুচ্ছগ্রামে কয়েকজন মাদক কারবারীকে হাতেনাতে মাদকসহ ধরে পুলিশকে খবর দিলেও পুলিশ আসতে গড়িমসি করেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সচেতন নাগরিকরা। নারাইনপুর ও চিকাডহর গ্রামের সচেতন মহল মাদক কারবারীদের নাম প্রশাসনের কাছে জানালেও প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
১০ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় নিউজ প্রকাশের জেরে স্থানীয় সাংবাদিক আলী হোসেনকে প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন বনপুর গ্রামের মো. আলীর ছেলে মো. অলিউর রহমান। এ ঘটনায় সাংবাদিক আলী হোসেন থানায় জিডি করেছেন।
কালাসাদেক বিওপির কোম্পানি কমান্ডার জানিয়েছেন, মাদকের বিরুদ্ধে তাদের জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। সীমান্তে নিয়মিত টহল এবং বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে মাদক আটক করা হচ্ছে।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রতন শেখ আবারও বলেন, মাদক এখন প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। এটা একা পুলিশের পক্ষে নির্মূল করা সম্ভব নয়। সামাজিক ভাবে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি জানান, কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের একটি চেকপোস্ট সার্বক্ষণিক পরিষদ গেইটের ডিউটিতে থাকে এবং যানবাহন তল্লাশি করে। সাংবাদিকের জিডির বিষয়ে তিনি বলেন, শুক্র ও শনিবার আদালত বন্ধ থাকায় রোববার কোর্টের অনুমতি নিয়ে তদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হবে।