মাদক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক সংগঠনে পদ-পদবী ভাগিয়ে নিতে চলছে লবিং তদবীর !
নেশায় ভাসছে ঐতিহ্যবাহী বানিয়াচং গ্রামের উঠতি তরুণ ও যুবসমাজ।বানিয়াচংয়ের সবখানেই এখন মাদকের হাট। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে মাদক ব্যবসায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। মাদক বেচাকেনার জন্য নিরাপদ কৌশল বেছে নিয়েছে বিক্রেতা ও সেবনকারীরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর এড়াতে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসের পার্সেলের আড়ালে আসে বিদেশী মদসহ ইয়াবার চালান।অনলাইনে বিভিন্ন এ্যাপস ব্যবহার করে ক্ষুদে বার্তায় নেয়া হয় অর্ডার। যাচাই বাছাই শেষে বিশ্বাসযোগ্য হলে এজেন্টের মাধ্যমে পৌছে দেয়া হয় নিদিষ্ট ঠিকানায়।
বানিয়াচংয়ে এখন চাইলেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে যে কোন ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্য। খুচরা বিক্রেতারা মাদকের হোম ডেলিভারীতে যাতায়তের সহজ বাহন হিসাবে ব্যবহার করেন মটর সাইকেল। সদরসহ উপজেলার ছোটখাটো সব জায়গায় ই চলছে রমরমা মাদক ব্যবসা। পুলিশের নাকের ডগায় এবং প্রকাশ্যেই চলে মাদকদ্রব্য বিক্রি ও ইয়াবা সেবীদের আড্ডা। নেই কোনো প্রতিকার।
বানিয়াচং থানায় কর্মরত ছিলেন এমন একজন গোয়েন্দা সদস্যের তথ্য থেকে জানা যায়, পতিত আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় মাদক বিস্তার লাভ করেছে।বানিয়াচংয়ে বিগত ১৬ বছর আ,লীগের রাজনৈতিক আশ্রয়- প্রশ্রয়ে বিভিন্ন পেশার আড়ালে হয়েছে মাদকের জমজমাট কারবার। অভ্যুথ্থান পরবর্তী রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে যুক্ত হয়েছে আরো নতুন কিছু হাত।
অনুসন্ধানে জানা যায়, তৎকালীন সময়ে সদরে তিনজন মাদকের সাম্রাজ্য নিয়ন্ত্রন করতেন।পুলিশের নজর এড়াতে বিভিন্ন সময় সাংকেতিক নাম ব্যবহার করতেন তারা।কারো কাছে বড় ভাই আবার কখনো কারো কাছে রাজনৈতিক গুরু হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জুলাই গন অভ্যুখ্খান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাইন মার্ডার মামলায় একজন জেলে থাকলে ও গ্রেফতার আতংকে অন্যরা এখন লোক চক্ষুর আড়ালে। মাদক সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখতে পর্দার অন্তরালে থেকে ব্যবসায় যুক্ত করেছেন নতুন নতুন অংশীদার।
সূত্রে জানায়, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে মাদক ব্যবসাকে নিরাপদ রাখতে রাজনৈতিক সংগঠন সহ বিভিন্ন পেশা কে ব্যবহার করছে এই চক্র।রাজনৈতিক শক্তি ব্যবহার করতে উপজেলা বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কমিটিতে পদ পদবী ভাগিয়ে নিতে জোর লবিং-তদবির ও জারি রেখেছে এই অসাধু চক্র।
সূত্রে জানা গেছে, মাদক চোরাচালানের অন্যতম প্রধান রুট শায়েস্তাগঞ্জ-হবিগঞ্জ-নবিগঞ্জ-বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ হয়ে মাদকের চালান আসে বানিয়াচং সদরে।আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শীতিলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বানিয়াচং উপজেলায় সহজলভ্য হয়ে উঠেছে মাদকদ্রব্য।হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবাসহ অন্যান্য মাদক।এতে পুরো উপজেলায় কিশোর ও যুবকদের বড় একটি অংশ মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ছে।দিন দিন মাদক ভয়াবহ রূপ নেয়ায় ছাত্র-যুবকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন বিশ্বের বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচংয়ের অভিভাবকরা।
মাঝে মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে ধরা পড়ে মাদকের ছোট ছোট চালান।অভিযানে উপজেলা সদরের কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা সেনাবাহিনী এবং পুলিশের হাতে বেশ কয়েকবার আটক হলে ও মাফিয়ারা থেকে যায় অধরা।ছোট ব্যবসায়ীরা আটক হলে মাফিয়ারা কয়েকদিনের ভিতরে তাদের জামিনে বের করে এনে আবার পুরোদমে চালায় মাদক ব্যবসা। বাইরে।যার ফলে কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না মাদকের সহজলভ্যতা।
সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৩০/৩৫ টি স্পটে মাদকের কেনা-বেচা চলে দিনভর। সন্ধ্যার পড়ে এসব স্থানগুলোতে জমে ওঠে মাদকের আড্ডা। এরমধ্যে বানিয়াচং সদর হাসপাতাল পয়েন্ট,শরীফখানী ও কালিকাপাড়া রাস্তার পয়েন্ট,পুরোনো নন্দি বিল্ডিং,কামালখানী ব্র্যাক অফিস পয়েন্ট,পূর্বগড়,৫/৬ নং বাজার হাসপাতাল,উপজেলার ডরমেটরী ভবনের সামনের মাঠ,গরীব হোসেন প্রাইমারী স্কুল,কাষ্টগড়ের পুরোনো মন্দির সংলগ্ন জঙ্গল,তাম্বলীটুলা কবরস্থান,দত্তপাড়া,বড় বাজার টু ৫/৬ নং বাজার রাস্তার মোড়,গরীব হোসেন মহল্লা মসজিদের সামনে তিন রাস্তার মোড়,সাগর দিঘীর পশিচম পাড় সরকারী সিড়ি ঘাট,চক বাজার ও কাগাপাশা বাজার।
এ বিষয়ে বানিয়াচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মিজানুর রহমান বলেন, মাদকের বিষয়ে অভিযান পুলিশের রুটিন ওয়ার্ক। মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত ব্যাক্তি যত ক্ষমতাবান হোক তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আমি সবেমাত্র যোগদান করেছি। আমরা ইতোমধ্যে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িতদের তালিকা তৈরি করেছি এবং তাদের নজরদারিতে রেখেছি। মাদকের বিরুদ্ধে সবসময় পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।