বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
বুধবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

দুর্নীতিতে বেপরোয়া শাল্লার পিআইও, দুদকের ডাকেও সাড়া দেননি তিনি!

দুর্নীতিতে একেবারেই বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন শাল্লা উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) নুরুন্নবী সরকার। নুরুন্নবী সরকারের দুর্নীতির বিষয় নিয়ে এখন সর্বত্রেই আলোচনা হচ্ছে। এতো বড় একটা গণঅভ্যুত্থানের পরেও নতুন বাংলাদেশে এসব দুর্নীতিবাজরা অশুভকর হয়ে উটছে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। (পিআইও) নুরুন্নবী সরকারকে নিয়ে এখন আলোচনার যেন শেষ নেই। সেই গাইবান্ধা থেকে শুরু করে নাটোর ও সর্বশেষ শাল্লায় তার দুর্নীতির যেন শেষ নেই। সব জায়গায় তার বিরুদ্ধে ওঠেছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। 

তদন্ত হলেও বদলি ব্যতিত কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ না নেওয়ায় দুর্নীতিতে এখন সে বেপরোয়া।  অভিযোগের বিষয়ে দুর্নীতিদমন কমিশন থাকে ডাকলে উল্টো দুদককে সে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়েছে। দুদকের গণশুনানিতে উপস্থিত না হয়ে উল্টো দুদক কর্মকর্তাকে যা পারেন করেন এমন বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। পিআইও নুরুন্নবী সরকারের আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে গত ১৯ মে সুনামগঞ্জে দুদকের গণশুনানিতে সে উপস্থিত না হওয়ায়।  দুদকের ওই গণশুনানিতে দুদকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেছিলেন আমরা দেখতে চাই শাল্লার পিআইও কতবড় ক্ষমতাধর ব্যক্তি! তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন তিনি। মন্ত্রনালয়ে শাল্লার পিআইও'কে বরখাস্তের সুপারিশ পাঠানো হবে বলেও ওই গণশুনানিতে বলেছিলেন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া। এরপরেও ওই পিআইও'র বিরুদ্ধে কার্যকরী, শাস্তিমূলক প্রয়োজনীয় কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় নি জেলা প্রশাসন ও দুদককে। তবে বরখাস্তের বিষয়ে জেলা প্রশাসক এই প্রতিবেদককে বলেছেন আমরা তাকে বরখাস্ত করতে পারি না। বরখাস্তের বিষয়টি দেখবে তার অধিদপ্তর। 

প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের এমন বক্তব্যের কাজেকর্মে মিল না থাকায় প্রশাসনিক শৃঙ্খলা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা। স্থানীয় বেশ কয়েকজন জনপ্রতিনিধিরা জানান, বেশকিছু টিআর/কাবিটা প্রকল্পে ইউপি সদস্যদের নামমাত্র সভাপতি বানিয়ে বরাদ্দের সম্পূর্ণ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই পিআইও। উন্নয়ন প্রকল্পের বিল তুলতে গিয়ে অনেক ইউপি সদস্য হেনস্থা, অমানবিক আচরণ সহ পিআইও'র রোষানলে পড়তে হয়েছে। ভূয়া প্রকল্প তৈরি করে বরাদ্দ আত্মসাৎ করে এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে রেখেছেন নুরুন্নবী সরকার। এছাড়াও স্থানীয় সাংবাদিকদের দরজা বন্ধ করে আটকিয়ে রাখার হুমকি প্রদান, দুর্নীতি নিয়ে নিউজ করলে মামলা-হামলা সহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ রয়েছে নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে। 


১নং আটগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নুরুল হক জানান, সঠিকভাবে শতভাগ কাজ করার পরেও বিল দিচ্ছেন না পিআইও। বিল চাইতে গেলে পিআইও নুরুন্নবী সরকার কতৃক উল্টো হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। তিনি জানান শতভাগ কাজ করেছি আরো আগেই কিন্তু ৫০ ভাগ টাকা ঘুস ছাড়া পিআইও আমার বিল দিচ্ছে না। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি অবগত করেও তিনি কোন সুরাহা পাননি বলে জানান তিনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হবিবপুর ইউনিয়ন পরিষদের এক সদস্য জানান, ৫০ ভাগ টাকা পিআইওকে দেওয়ার শর্তে আমার বিলটি উত্তোলন করা হয়েছে। তিনি বলেন, তার মতো দুর্নীতিবাজ পিআইও আমাদের জীবনেও দেখিনি। 


এদিকে গত ১২ আগস্ট পিআইও নুরুন্নবী সরকারের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে দুর্যোগ ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। প্রকল্পে অনিয়ম, নিম্ন মানের কাজ করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, স্থানীয় সাংবাদিকদের হুমকি ও মামলা-হামলার বিষয় অভিযোগে উল্লেখ করেছেন শিশির মনির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নুরুন্নবী সরকারের দুর্নীতির অভিযোগ নতুন করে তদন্তে মাঠে নামছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। পিআইও'র দুর্নীতি তদন্তে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোঃ আশ্রাফুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি টিম আগামী ৩ ও ৪ সেপ্টেম্বর শাল্লায় সফর করার কথা রয়েছে। 

এসব অভিযোগের বিষয়ে অভিযুক্ত পিআইও নুরুন্নবী সরকার বলেন, প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে বিল দেওয়া হবে। বর্ষায় হাওরের প্রকল্প কিভাবে দেখবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইউএনও ডুব দিয়ে দেখবে। একপর্যায়ে জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের নিয়ে তিনি কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা সহকারী কমিশনার হাসিবুল হাসান ইতিপূর্বে গণমাধ্যমকে বলেন, “নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমকে জানান, নুরুন্নবী সরকারের বিরুদ্ধে, আগেও তদন্ত হয়েছে, তবে তিনি দুদকের শুনানিতে হাজির হননি। এবার আবারো অভিযোগ এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় টিম সরেজমিন তদন্তে আসছে।”

জেলা প্রশাসক ড. ইলিয়াস মিয়া বলেন, আমরা তার দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা তদন্ত প্রতিবেদন পাঠিয়েছি। এখন একই বিষয়ে মন্ত্রনালয় থেকে আবারো তদন্ত করার জন্য লোক আসছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি। 

এই সম্পর্কিত আরো