সিলেটের সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় এবার তদন্তে নেমেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। অভিযুক্তদের বিষয়ে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে সিআইডি। মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে সিআইডি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেটের ‘সাদা পাথর’ লুটপাটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে বিভিন্ন গোয়েন্দা তথ্য এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত একাধিক খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট, সিআইডি মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন অনুযায়ী অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু করেছে।
বিভিন্ন উৎস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী লুটপাটের ঘটনায় প্রায় ৫০ জনের সংশ্লিষ্টতার প্রাথমিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এরপর সিআইডি এই অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবেশগত অপরাধ সংঘটন করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার অভিপ্রায়ে সাদাপাথর লুটপাটের ঘটনায় যে বা যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাদাপাথর লুটের ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। প্রতিবেদনে সাদাপাথর লুটে বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা মিলিয়ে ৫৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক। এতে বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি এসপি, ইউএনও, ওসি- সবাইকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া রাজনৈতিক নেতা ও ব্যবসায়ীরা লুটপাটে জড়িত উল্লেখ করে তাদের ৪২ জনের নাম প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পাথর আত্মসাতের ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থাগুলোর নিষ্ক্রিয়তা ও যোগসাজশ ছিল।
এছাড়া জেলা প্রশাসন ঘটিত তদন্ত কমিটিও প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই প্রতিবেদনে লুটে শতাধিক ব্যক্তির সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানানো হলেও কারো নাম প্রকাশ করা হয়নি।
আর এক সচিবের নেতৃত্বে মন্ত্রী পরিষদ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি মঙ্গলবার থেকে কাজ শুরু করেছে।
সারা দেশে ৫১টি কোয়ারি (পাথর, বালু ইত্যাদি উত্তোলনের নির্দিষ্ট স্থান) রয়েছে। এর মধ্যে সিলেটের কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরে রয়েছে আটটি পাথর কোয়ারি। এর বাইরে সিলেটে আরও ১০টি জায়গায় পাথর রয়েছে। যেমন সাদাপাথর, জাফলং, বিছনাকান্দি ও উৎমাছড়া। এসব জায়গা পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
পাথর আসে সীমান্তের ওপারে ভারতের পাহাড়ি নদী থেকে। বহু বছর ধরে পানির স্রোতের সঙ্গে এসব পাথর এসে কোয়ারি তৈরি হয়েছে। ২০২০ সালের আগে সংরক্ষিত এলাকা বাদে সিলেটের আটটি কোয়ারি ইজারা দিয়ে পাথর উত্তোলনের সুযোগ দেওয়া হতো। তবে পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতির কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে কোয়ারি থেকে পাথর ও বালু উত্তোলন বন্ধে নির্দেশনা দেয় সরকার।
স্থানীয় সূত্র বলছে, এর পর থেকে স্থানীয় কিছু আওয়ামী লীগ নেতার পৃষ্ঠপোষকতায় রাতের আঁধারে অবৈধভাবে পাথর ও বালু উত্তোলন চলত। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সিলেটের সব কটি কোয়ারির নিয়ন্ত্রণ নেন বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতারা। তাঁদের পৃষ্ঠপোষকতায় কয়েক হাজার পাথরশ্রমিক প্রকাশ্যে পাথর উত্তোলন শুরু করে।