বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫
বুধবার, ২৭ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

পাথর লুট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে সিলেটে একসাথে পুলিশের ২২ সদস্যকে বদলি

সিলেটের ভোলাগঞ্জ ও জাফলং এলাকায় ব্যাপক পাথর লুট নিয়ে সমালোচনার মধ্যে একযোগে একযোগে জেলার ২২ পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।

বদলির তালিকায় রয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত ১১ জন কর্মকর্তা। এই দুই থানা এলাকায়ই সাদাপাথর ও জাফলংয়ের অবস্থান।

বদলিকৃতদের মধ্যে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)ও সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সিলেটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের বলেন, জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মরত ২২ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। এটি নিয়মিত বদলির অংশ।

জানা গেছে, বদলিকৃত ২২ জনের মধ্যে উপ পরিদর্শক (এসআই) রয়েছেন ১৩ জন, উপ সহকারী পরিদর্শক (এএসআই) সাতজন এবং কনস্টেবল ২ জন।

কোম্পানীগঞ্জ থানার তিনজন এসআই ও একজন এএসআই এবং গোয়াইনঘাট থানার চারজন এসআই ও তিনজন এএসআইকে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলার অন্যান্য থানার নয়জনকে ওই দুটি থানায় পদায়ণ করা হয়েছে, এর মধ্যে তিনজন কোম্পানীগঞ্জে, ছয়জন গোয়াইনঘাটে।

এর আগে ১৩ আগস্ট কোম্পানীগঞ্জের সাদাপাথরে লুটের ঘটনায় তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

তদন্তের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাদাপাথর এলাকায় পাথর লুটপাটে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিএনপি, জামায়াত, এনসিপি ও আওয়ামী লীগের ৪২ জন রাজনীতিবিদ ও প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত।

এ ছাড়া লুটপাটের টাকার ভাগ স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ, বিজিবি পর্যন্ত পৌঁছানোর কথাও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

প্রতিবেদনে বিশেষভাবে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানায় কর্মরত কিছু পুলিশ সদস্যের অবৈধ পাথর উত্তোলনের সিন্ডিকেটে সম্পৃক্ততার কথা উঠে আসে। এরই প্রেক্ষাপটে আলোচিত দুই থানার পুলিশ সদস্যদের বদলি আরও গুরুত্ব পাচ্ছে।

সূত্র জানিয়েছে, বদলি নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হলেও সাম্প্রতিক পাথর লুটকাণ্ডে ব্যাপক সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাট থানার ১১ পুলিশ সদস্যকে এই তালিকায় রাখা হয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই ওই দুটি থানার আরও কিছু কর্মকর্তার বদলি হতে পারে বলেও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে সাদাপাথরে এবং আশেপাশের এলাকা থেকে কয়েক শ’ কোটি টাকার পাথর লুট করে। আর গত জুলাই ও আগস্টে দুই সপ্তাহে সাদাপাথর এলাকায় নজিরবিহীন লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ভোলাগঞ্জ নোম্যান্সল্যান্ডের ১০ নম্বর এলাকায় সাদাপাথরের স্তূপ এলাকাটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। তাই নাম পড়ে যায় সাদাপাথর পর্যটন স্পট। প্রতিদিন পর্যটক মুখর থাকায় এই পর্যটন এলাকা ঘিরে নৌকা শ্রমিক, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে স্থানীয় মানুষের জীবন জীবিকার অন্যতম মাধ্যম হয়ে ওঠে। কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পর উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ভোলাগঞ্জে নজিরবিহীন লুটপাট হয় সাদাপাথরে।

সমালোচনার মুখে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদকে ওএসডি, এবং কোম্পানীগঞ্জের ইউএন আজিজুন্নাহারকে বদলি করা হয়।

নতুন জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম দায়িত্ব নেওয়ার পর লুটপাটকৃত পাথর ফেরত দিতে মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) বিকেল ৫টা পর্যন্ত সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়।

বেঁধে দেওয়া সময়সীমা শেষ হওয়ায় এদিন বিকেলে সাদাপাথর পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, পাথর উত্তোলনে কয়েক হাজার লোকজন জড়িত ছিল। তবে যারা সাদাপাথর লুটপাটে নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলম।

এ ছাড়া পাথর পুনঃস্থাপনের পাশাপাশি আইনী কার্যক্রমও চালানোর বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, যারা পাথর লুট করেছে, তাদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করা হবে। তবে যারা নিরীহ ও নিরাপরাধ, তারা যাতে হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকেও নজর রাখা হচ্ছে। তবে অপরাধীদের নাম প্রকাশ করা হলে তারা পালিয়ে যাবে। অবশ্যই প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসবে।

পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ২৬ লাখ ঘনফুট পাথর উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে ৬ লাখ ঘনফুট পাথর স্বেচ্ছায় জমা দিয়েছেন লোকজন। অবশিষ্ট প্রায় ১৯ লাখ ঘনফুট পাথর অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করা হয়েছে।

এই সম্পর্কিত আরো