গত দুইদিনেও দিন মজুরের ভুতুরে বিলের বিষয় সমাধান হয়নি। “বাড়ি বিক্রি করে ও এতো টাকা বিদ্যূত বিল পরিশোধ করা সম্ভব নয়” হতাশা গ্রস্থ গ্রাহক কাজী ছাওধন মিয়া বিল নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভেড়াচ্ছেন।
গতকাল মঙ্গলবার তিনি বিকাশ সেন্টার, ব্যাংক এশিয়া ও স্থানীয় পল্লী বিদ্যূত অফিসে গিয়ে সমাধান করতে পারেননি। বিল সংশোধন করে ৫৭০ টাকা করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু অনলাইনে আগের বিল থাকায় নতুন বিল নিচ্ছে না।
“নবীগঞ্জে দিন মজুরের এক ফ্যান,এক বাতি বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ হাজার টাকা” শিরোনামে সংবাদ সর্বপ্রথম দৈনিক সবুজ সিলেট ও জাতীয় একটি নিউজ পোর্টালের অনলাইন ভার্সনে আসলে সারা দেশে বিষয়টি ভাইরাল হয়। হবিগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির অধীনে নবীগঞ্জের এক দিনমজুর গ্রাহকের এক ফ্যান,এক বাতি বিদ্যুৎ বিল এক লাখ ৬৭ টাকা হাজার ৯৫ টাকা আগষ্ট মাসে ভুতুড়ে বিল এসেছে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র তোলপাড় হচ্ছে। বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন ঐ দিনমজুর।
পল্লী বিদ্যুত অফিস বলছেন, তাদের কম্পিউটার ব্যবহার সময় ভুলে এমন কান্ড হয়েছে। বিল প্রস্তুতকারীকে তারা কারন দর্শানোর নোটিশ করা হয়েছে।
ইদানিং নবীগঞ্জের গ্রাহকরা বিদ্যুৎ বিল নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। নিয়মিত আসা বিদ্যুৎ বিলের দেড়গুণ থেকে দ্বিগুণ বিদ্যুৎ বিল বেশি আসায় অনেকেই বিদ্যুৎ অফিসে দ্বারস্থ হচ্ছেন।
এ ভুতুড়ে বিদ্যুৎ বিলের বিষয়ে কেউ কেউ পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি করছেন। তবে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্তৃপক্ষ বলছে, গত মাসে গরম থাকার কারণে এমন বিদ্যুৎ বিল এসেছে। আগামি মাসে সব ঠিক হয়ে যাবে।
নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের কাজী ছাওধন মিয়ার একজন দিন মজুর,তার ঘরে একটি ফ্যান ও দুটি বাতি রয়েছে। প্রতি মাসে তার বিল দুই তিনশ টাকার বেশি আসে না। চলতি আগষ্ট ২০২৫ বিল এসেছে ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫ টাকা, বিলের বিলম্ব ফি ধরা ৭ হাজার ৫শ ৯৫ টাকা, মোট ব্যবহার করা হয়েছে ১০ হাজার ৮৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ বিলে উল্লেখ করা হয়েছে জুন মাসের বিল ছিল ১০৫ টাকা। কাজী ছাওধন মিয়া বলেন, আমি একটি বাতি ও একটি ফ্যানের বেশি চালাই না। আমি এই বিল দেখে অবাক হয়ে যাই। আমাদের এলাকায় মানুষ ও মেম্বার চেয়ারম্যান এর সাথে কথা বলে দুই দিন অফিসে গেছি তারা বলছেন এটা ঠিক করে দিবেন।
বিল প্রস্তুতকারী ক্ষমা দাশ সুত্রধর বলেন, আমি ইচ্ছে করে এমন কাজ করিনি, কম্পিউটারের ভুল করার জন্য এমনটা হয়েছে।
সরজমিন কথা হয়, নবীগঞ্জ উপজেলার দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট গ্রামের কাজী ছাওধন মিয়ার চায়ের দোকানে কথা হয়। তিনি বলেন, “বাড়ি বিক্রি করে এতো টাকা বিদ্যূত বিল পরিশোধ করা সম্ভব নয়” তিনি বিল নিয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরে ভেড়াচ্ছেন। হতাশ হয়ে বলেন, আমি এতো টাকা কই পামু, কারেন্ট অফিসের বেটাইন খালি কয় ঠিক অইবো, বিকাশের দোকাদার কয় বিল নেয়, এখনও ১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা বিল দেখায়, ব্যাংক গেছলাম তারা কয় অফিসে যাইতাম, বাড়ি ধারের অফিসে গেলাম তারা কইন নবীগঞ্জ যাইতাম, কত জায়গায় যাইতাম।
দেবপাড়া নতুন বাজার ব্যাংক এশিয়ার ম্যানাজার. আফজাল হোসেন বলেন, আমার সামনে টি স্টল( চায়ের দোকাদার) কাজী ছাওধন মিয়া গতকাল তার বিলের কাগজ নিয়ে আসলে আমি চেক করে দেখি এক লাখ ৫৯ হাজার ৫শ টাকা বিল, বিলম্ব মাসুলসহ ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯৫ টাকা। তখন আমি সচেতনতার জন্য বিষয়টি ফেসবুক দেই। এরপর আজকে সকালে ডতিনি আরেকটা বিল নিয়ে আসেন ৫৭০ টাকা বিল কিন্তু অন লাইনে আগের বিল দেখানো জন্য বিল নিচ্ছে না।
বিকাশের এজেন্ট কাজী শোয়েব আহমদ বলেন, আমার দোকান থেকে ছাওধন মিয়া সব সময় বিল দেন, তিনি গতকালও আসছেন, আজকে আসছেন বিল আগেরটাই দেখাচ্ছে। তাই বিল দেয়া যাচ্ছে না।
নবীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড এর নবীগঞ্জ অফিসের ডিজিএম মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, গরমের সময় একটু বেশি বিল বেশি আসে স্বাভাবিক। দিনমজুর কাজী ছাওধন মিয়ার বিল প্রসঙ্গে বলেন, এটা কম্পিউটার ব্যবহারকারীর ভুলের কারণে এমনটা হয়েছে। আমরা বিল প্রস্তুতকারী ক্ষমা দাশ কে শোকজ করেছি, সে বলছে ভুল হয়েছে, আর এরকম ভুল হবে না। কাজী ছাওধন মিয়ার বিল সংশোধন করে দেয়া হয়েছে। ভুতুড়ে বিল আসলে অভিযোগ পাওয়ার সাথে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আজকে (১৯ আগষ্ট) কেন সংশোধিত বিল নিচ্ছে না সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে গ্রাহক হতাশ হওয়ার কারন নেই।