কোম্পানীগঞ্জের ভোলাগঞ্জ ও সাদাপাথর লুটপাট ও চাঁদাবাজির ঘটনায় আলোচিত কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির বহিস্কৃত সভাপতি সাহাব উদ্দিনসহ পাথরকাণ্ডে জড়িতদের খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। যে কোনো সময় সাহাব উদ্দিন ও তার সহযোগিদের গ্রেফতার করা হতে পারে বলে জানিয়েছে পুলিশের একটি দায়িত্বশীল সূত্র। বৃহস্পতিবার বিকেলে বহিস্কৃত বিএনপি নেতা সাহাব উদ্দিনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে বলে গুঞ্জণ ছড়িয়ে পড়ে। তবে এর সত্যতা মেলেনি।
এ প্রসঙ্গে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উজায়ের মাহমুদ আদনান বলেন, 'সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়নি। গ্রেফতার হলে আবশ্যই জানতে পারবেন।'
তিনি বলেন, 'পাথর লুটপাটে যাদের জড়িত থাকার প্রমান মিলবে- তাদের কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না।'
এদিকে বৃহস্পতিবার ভোরে সাদাপাথর লুটপাটে জড়িত থাকার অভিযোগে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে তার বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। গ্রেফতার হওয়া আলমগীর আলম জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক।
এদিকে সিলেটের সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। বুধবার রাত ১০টার দিকে এ অভিযান শুরু হয়। সারারাত বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলে। বুধবার রাত ধরে চলা অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে আনুমানিক ৫২ হাজার ঘনফুট পাথর। বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) সকাল থেকে ক্রাশার মিলেও পাথর উদ্ধার কার্যক্রম চলছে।
বৃহস্পতিবার সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো চলছে। অভিযানে জব্দ করা পাথর আবার সাদাপাথরে নিয়ে রাখা হবে। এ ছাড়া আজ কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে পৃথক দুটি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে পাথর তোলা বন্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টা থেকে সিলেট-ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সালুটিকর এলাকায়, পরে সিলেট ক্লাবের সামনে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। আজ সকাল থেকে সিলেট শহরতলির বড়শালা এলাকায় যৌথ বাহিনী তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছে।
উল্লেখ্য, সোমবার (১১ আগস্ট) বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে
পাথর ও বালু কোয়ারিতে লুটপাট, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ দলীয় নীতি ও আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিনকে তার সকল দলীয় পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় বিএনপি। তার বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ের পর তার সকল দলীয় পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয় বলে জানানো হয় সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও উল্লেখ করা হয়, তাঁর স্থলাভিষিক্ত হিসেবে বর্তমান সহসভাপতি হাজী আব্দুল মান্নানকে উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করবেন।
দলীয় নেতারা জানিয়েছেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলা রক্ষা ও দলীয় ভাবমূর্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে কেন্দ্রীয় কমিটি এই পদক্ষেপ নিয়েছে।
সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে সরকারি দেড়শত একর ভূমি দখল, পাথর কোয়ারির জমি ভাড়া দেওয়াসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের অভিযোগ বহুদিন ধরে উঠছে। ভোলাগঞ্জ পাথর কোয়ারির পাশের সরকারি ২৭৫ একর উন্মুক্ত জায়গার অর্ধেকের বেশি অংশ তার দখলে ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব জমি পাথর ভাঙার মেশিন মালিকদের কাছে ভাড়া দিয়ে বিপুল অর্থ আয় করা হতো।
গত ৫ আগস্ট আবারও ভোলাগঞ্জের ১০ নম্বর সাইট এলাকায় শতাধিক সরকারি জমি দখলের অভিযোগ ওঠে সাহাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে। সেখানে থেকে লাখ লাখ টাকা ভাড়া নেওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে দলের হাইকমান্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়।
গত ১৮ মার্চ সিলেট জেলা বিএনপি তাকে শোকজ নোটিশ দিয়েছিল। জেলা সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরীর স্বাক্ষরিত নোটিশে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। তবে গ্রহণযোগ্য জবাব না দেওয়ায় সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ছিল।
সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির নেতৃবৃন্দ সাহাব উদ্দিনের বিতর্কিত কর্মকান্ড নিয়ে বারবার সমালোচনার মুখে পড়ে তারা তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলতেন।
অবশেষে সোমবার কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে সাহাব উদ্দিনকে পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে হাজী আব্দুল মান্নানকে নতুন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি নিয়োগ দেওয়া হয়।