অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ুয়া ছাত্র আরিফ বাদশা। করুণায় যখন সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তখন তাকে হতাশা গ্রাস করে। আস্তে আস্তে ভেঙ্গে পড়তে থাকে তার স্বপ্ন। তখন এক বন্ধুর পরামর্শে সুনামগঞ্জ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে গবাদি পশু পালনে ৩ মাসের প্রশিক্ষণ নেয়। আর এই প্রশিক্ষণেই তার জীবনের মোড় ঘুরি দেয়। মাত্র ৫ বছরের মেধা আর পরিশ্রমের ফসল হিসাবে সুনামগঞ্জ জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ যুব উদ্যোক্তার স্বীকৃতি লাভ করে হাওরাঞ্চলে তাক লাগিয়ে দেয় আরিফ বাদশা।
জামালগঞ্জ উপজেলার জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের সাচনা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে আরিফ বাদশা। ছোটবেলায় স্বপ্ন ছিল উচ্চ শিক্ষিত হয়ে সরকারি চাকরি করে দেশের সেবা করা। সে সিলেট দক্ষিণ সুরমা কলেজ থেকে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বর্তমানে সিলেট ল-কলেজে অধ্যয়নরত আছে। আরিফ জানায় আমি সিলেট দক্ষিণ সুরমা কলেজে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তখন সরকার করুণার কারণে সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় অনিদৃষ্ট সময়ের জন্য বন্ধ করে দেয়। তখন আমি হতাশায় পড়ে যাই এখন আমি কি করবো। তখন এক বন্ধু পরামর্শ দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেহেতু বন্ধ আমরা যুব উন্নয়ন প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়ে যাই। তখন তাকে সহ আমি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ গিয়ে উপ-পরিচালক সাহানুর আলম স্যারের সাথে কথা বলি, তিনি জানান এলাকার শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত, বেকার যুবকদের বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দিয়ে স্বল্প সার্ভিস চার্জে ঋণ সহযোগিতায় বেকার যুবকদের আত্মনির্ভরশীল ও আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়।
তারপর ২০২১ সালের জুন মাসে ৩ মাস মেয়াদি গবাদি পশু, মাছ ও হাস পালনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে পরিবারের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা ও টিউশনির জমানো টাকা দিয়ে ৪টি গাভী কিনে "গোয়াল ডেইরি ফার্ম" নামে একটি প্রকল্প শুরু করি। এসময় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকেও ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেই। এরপর বাড়ির পিছনে গবাদি পশু, হাওরে বর্গায় ধান চাষ, মাছ চাষ ও হাস পালনের পাশাপাশি সমম্বিত কৃষি খামার শুরু করি। এছাড়াও গত ২ বছরে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জামালগঞ্জ উপজেলা শাখার মাধ্যমে ৫ শত তরুণ-তরুণীকে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দেই। প্রশিক্ষণার্থীদের মাঝে প্রায় ৩০ জন প্রশিক্ষণার্থী নিজেরা আত্মকর্মী হিসেবে তৈরি হয়েছেন। আমার প্রশিক্ষণার্থীরা অনেকেই কর্মসংস্থান নিয়ে কাজ করছে।
বর্তমানে আরিফ বাদশার ফার্মে ১৪ টি গবাদি পশু, ১৫ শতক পুকুরে মাছ প্রতি বছর ৪/৫ হাজার হাস পালন করে বর্ষায় বিক্রি করে দেয়। আবার হেমন্তে বাচ্চা হাস কিনে বড় করে ডিমসহ হাস বিক্রয় করে। বর্তমানে প্রতি বছর গবাদি পশু, ধান চাষ, হাস ও মাছ পালন করে প্রায় ১০ লক্ষ টাকা আয় করে। তার গোয়াল ডেইরি ফার্ম প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ৮০ হাজার টাকা হলেও, তার ফার্মে পুঁজি সহ সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধ কোটি টাকা। আরিফ বাদশা গত বছর উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর জামালগঞ্জ উপজেলায় সফল আত্মকর্মী উদ্যোক্তা হিসাবে শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার পায়।
এবছর গত মঙ্গলবার (১২ই আগষ্ট) জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ সফল আত্মকর্মী উদ্যোক্তা হিসাবে ক্রেস্ট ও সম্মাননা স্মারক লাভ করে। এছাড়াও বিভিন্ন সময় সফল স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে সম্মাননা পায়। আরিফ বাদশা জানায়, তার এই সফলতা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সকল কর্মকর্তাবৃন্দের। কারণ আমি যখন কলেজ বন্ধে হতাশায় ভুগছিলাম তখন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরামর্শে এবং ঐকান্তিক পরিশ্রমে আজকে আমার এই সফলতা এসেছে। এই জন্য মহান আল্লাহ তায়ালার প্রতি এবং আমার পিতা-মাতা সহ সকল শুভানুধ্যায়ীদের কৃতজ্ঞতা জানাই।