সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ানবাজার থেকে দয়ামীর সড়ক বর্ষার মৌসুমে এক ‘দুঃখের নদী’র রূপ ধারণ করেছে। প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কজুড়ে অসংখ্য বড়-বড় গর্ত ও খানাখন্দ বর্ষার পানিতে ভরে মিনি পুকুরের মতো গড়ে উঠেছে। এর ফলে পথচারী থেকে শুরু করে ছোট-বড় যানবাহন চলাচলে প্রতিদিনই বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন যাত্রীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, এই সড়কের মোরারবাজার থেকে শুরু করে দেওয়ানবাড়ি সংলগ্ন গহরপুর পোস্ট অফিসের সামন, স্থানীয় হাবিব মিয়ার বাড়ির সংলগ্ন স্থান ও মাদ্রাসাবাজার এলাকা এবং ইছামতি গ্রামের পূর্ব পার্শ্ব থেকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সংযোগস্থল দয়ামীর পর্যন্ত সড়কের অবস্থা শোচনীয়। বর্ষার পানিতে গর্তগুলো ঢাকা পড়ায় কোথাও সড়কের পথ স্পষ্ট বোঝা যায় না। ছোট-বড় যানবাহন পানিতে ডুবে পড়া গর্তে আটকে যাচ্ছে। এ নিয়ে একাধিকবার অটোরিকশা উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গর্তে পড়ে গাড়ি নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থেকে বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় প্রতিদিন দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।
স্থানীয়রা জানান, ঈদুল আজহার আগে মাদ্রাসাবাজার থেকে আলিখা পর্যন্ত কিছু অংশ সংস্কার হলেও দুই প্রান্তের মারাত্মক দুর্বল অংশগুলো সংস্কারবিহীন রয়েছে। এই বর্ষায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বাড়ায় দ্রুত সড়ক সংস্কারের দাবি জানান তারা।
মাদ্রাসা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম হাজীপুরী অভিযোগ করে বলেন, হাজার হাজার পথচারিদের জন্য বর্ষায় এই রাস্তায় চলাচল করা দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পানি আর গর্ত মিলে পুরো রাস্তা যেন হারিয়ে গেছে, চলাচল করতে বেশ কষ্ট হয়।
মাদ্রাসা বাজার অটোরিকশা সিএনজি স্ট্যান্ডের ম্যানেজার সমুজ মিয়া বলেন, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো মানে প্রতিদিন ঝুঁকি নেওয়া। গর্তে পড়ে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়, যাত্রীও নিরাপদ থাকে না।
ছমিরুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশহুদ আহমদ হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ছবি তুলে কী লাভ? বছরের পর বছর আমরা শুধু এই দুর্দশা দেখছি, অথচ সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই।
শিওর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বেবি রাণী পাল বলেন, এই রাস্তায় চলাচল করা খুবই কষ্টকর, বিশেষ করে শিশু শিক্ষার্থীদের জন্য এটি অতিরিক্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
সিএনজি চালক গিয়াস উদ্দিন বলেন, আমাদের মানুষের জীবন যেন মূল্যহীন। এত বছর ধরে কেউ কেন এই সড়ক সংস্কার করছেন না, তা বোধগম্য নয়।
মাদ্রাসা বাজারের ব্যবসায়ী সোহান আহমদ লিজু বলেন, এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন শত শত মানুষ যাতায়াত করে। গর্ত আর পানির কারণে ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে, মালামাল আনাতেও সমস্যা হচ্ছে। বর্ষায় এই রাস্তা নদীর মতো জলমগ্ন হয়ে পড়েছে।
বালাগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ দেব নাথ বলেন, সড়কের টেন্ডার হয়ে গেছে, বর্ষা শেষে কাজ শুরু হবে। আপাতত চলাচলের সুবিধার জন্য বড় গর্তগুলোতে রাবিশ ও বালি দেওয়ার জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করেছি।