সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫
সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫
✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

গোলাপগঞ্জ ট্রাজেডি, এই দিনে ঝরেছিল ৬ তাজা প্রাণ

গোলাপগঞ্জের ট্রাজেডির ১ বছর পূর্ণ হল আজ। গেল বছরের এই দিনে ছাত্র জনতার আন্দোলনে রাস্তায় নেমে আসে গোলাপগঞ্জের মানুষ। দিনটি যে গোলাপগঞ্জবাসীর জন্য ট্র্যাজেডি এক ভয়াবহ দিন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছরের ৪ আগস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে গোলাপগঞ্জের ৬ জন প্রাণ হারান এবং কয়েক শতাধিক মানুষ আহত হন।

সিলেটের ইতিহাসে আন্দোলনে একদিনে এতো বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটেছে কিনা, তা সঠিকভাবে বলতে পারাটা অনেকের জন্য কষ্টসাধ্য।

স্মরণকালের ইতিহাসে সিলেটের মাঠিতে আন্দোলনে এতলোকের প্রাণহানী ঘটেনি। কোঠা বিরোধী আন্দোলন যখন সরকার পতনের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। তখন ছাত্রদের সাথে সংহতি জানিয়ে দেশের আপামর জনসাধারণ রাজপথে নেমে আসে। সারাদেশের উত্তাপ তখন সিলেটেও ছড়িয়ে পড়ে। ছাত্রজনতাকে দমাতে বল প্রয়োগ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এরই প্রেক্ষিতে গোলাপগঞ্জবাসিকে স্বাক্ষী হতে হয়

দেশের সর্বত্র বিষাদময় এক ট্র্যাজেডির। যা 'গোলাপগঞ্জ ট্রাজেডি'নামে পরিচিতি পায়।

ওইদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে গোলাপগঞ্জের ৬টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। এছাড়াও গুলিবিদ্ধ হয়ে কয়েকশ ছাত্র জনতা মারাত্বক হতাহত হন। তাদের মধ্যে অনেককে হারাতে হয়েছে তাদের চোখের দৃষ্টি, শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ এবং শারীরিক সক্ষমতা। এমন দূর্বিষহ ঘটনায় সমগ্র

দেশের মানুষ হতবাক হয়ে যায়। দাবি আদায়ের আন্দোলনে গিয়ে চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রিয়জনের চিরবিদায়ের দৃশ্য দেখতে হবে, তা কেউ স্বপ্নেও ভাবেননি।

যেভাবে শহীদ হলেন ৬ জন: আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণকারী এবং প্রত্যেক্ষদর্শীর ভাষ্যমতে, গেল বছরের ৪ আগস্ট সকাল থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে মিছিল বের করে। ওইদিন সকালে ঢাকা দক্ষিণ বাজার বহুমূখী স্কুল এন্ড কলেজের সামনে থেকে ছাত্র-ছাত্রীরামিছিল বের করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাধার সম্মুখিন হয়। পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ছাত্রজনতার সাথে ঢাকাদক্ষিণ বাজার ও তার পার্শ্ববর্তী স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ওই সময় ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন, নাজমুল ইসলাম, দর্জিকারিগর জয় আহমদ, রাজমিস্ত্রি সানি আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।

অপরদিকে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সন্নিকটে দুপুরের পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্র জনতার কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ওই সময় সিএনজি অটোরিকশা চালক গৌছ উদ্দিন এবং মেকানিক মিনহাজ আহমদ গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোলাপগঞ্জের ৬ জন শহীদ হন এবং শতাধিকের বেশি ছাত্র-জনতাগুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন।

মামলা অগ্রগতিঃ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রজনতার আন্দোলনের মুখে গেল বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। পরবর্তীতে গোলাপগঞ্জের হতাহতের ঘটনায় হত্যা, বিস্ফোরক সহ প্রায় ১৬টি মামলা দায়ের করা হয়। তন্মধ্যে ৭টি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়।

শহীদ সানি আহমদের বাবা গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলা প্রত্যাহার করে, আদালতে আরেকটি মামলা দায়ের করেন। উক্ত মামলা সমুহে প্রায় ৫শতাধিকের বেশি নামোল্লেখ করে এবং ৮ শতাধিকের বেশি লোকজনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। তন্মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোন মামলার চার্জশীটের প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়নি।

জেলা পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে দায়েরকৃত মামলাগুলো যথাযথ গুরুত্বের সহিত তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। পুলিশ হেডকোয়াটার্স ও পুলিশের মহা-পরিদর্শক আমাদেরকে নির্দেশনা দিয়েছেন, এসব মামলাগুলো দ্রুত তদন্ত কার্যক্রম শেষ করার জন্য। বেশির ভাগ শহীদ পরিবারের স্বজনদের আপত্তির কারনে ময়নাতদন্ত করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে, মামলার আলামত সংগ্রহে একটু বেগ পেতে হচ্ছে। আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের একটায় নির্দেশ অপরাধী যেই হোক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। কারও পেশা দেখে নয়, তাদের অপরাধ দেখেই তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। অপরাধে সংশ্লিষ্ট কেউ ছাড় পাবেনা। বেশ কয়েকটি মামলা আমরা অনেক দূর তদন্ত কাজ এগিয়েছি।

পিবিআই পুলিশ সুপার খালেদুজ্জামান বলেন, পুলিশ হেডকোয়াটার্সের নির্দেশনায় পিবিআই সিলেটকে গোলাপগঞ্জের জয় আহমদ এবং তাজ উদ্দিন হত্যা মামলার তদন্ত ভার দেয়া হয়। আমাদের কর্মকর্তাগণ এসব মামলাগুলো গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন, যেন কোন নির-পরাধ ব্যক্তি শাস্তি না পায়। আবার কোন অপরাধী ছাড় না পায়। আশাকরি দ্রুত আমরা ভালো অবস্থানে পৌছাবো।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোল্যা মো. মনির হোসেন বলেন, আমাদের থানায় ৬ জনকে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এসব মামলাগুলোর মধ্যে ২টি গোলাপগঞ্জ মডেল থানায়, ২টি পিবিআই এবং আরো ২টি সিআইডির ইউনিটের কাছে তদন্তের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

গোলাপগঞ্জ মডেল থানার পরিদর্শক মোসলেহ উদ্দিন শহীদ গৌছ উদ্দিন এবং শহীদ মিনহাজ আহমদের মামলাটি তদন্ত করছেন। সিআইডির ইউনিটের মধ্যে পরিদর্শক ইফতেখার আহমেদ শহীদ সানি আহমদ এবং পরিদর্শক শাহ হারুন নাজমুল আহমেদে তদন্ত করছেন।

পিবিআইয়ের তদন্তাধীন মামলার মধ্যে পরিদর্শক খোকন কুমার সাহা শহীদ জয় আহমেদের এবং পরিদর্শক নূর মোহাম্মদ শহীদ তাজ উদ্দিনের তদন্ত করছেন।

জেলা পুলিশের মিডিয়া কর্মকর্তা সহকারী পুলিশ সুপার সম্রাট তালুকদার জানান, চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত এখন পর্যন্ত মোট ১৩৪ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সিআইডির পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, আমাদের দায়িত্বে গোলাপগঞ্জের তিনটি মামলা রয়েছে। মামলাগুলো আমরা বৈজ্ঞানিক ও ম্যানুয়েলী উভয় পদ্ধতির সমন্বয়ে তদন্ত করে যাচ্ছি। ফরেনসিক পরীক্ষার মাধ্যমে অডিও, ভিডিও এবং অন্যান্য প্রমাণগুলি আমরা যাচাই-বাছাইকরে অগ্রসর হচ্ছি।

এই সম্পর্কিত আরো