সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলায় বিএনপির ছয়টি ইউনিয়ন আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণাকে ঘিরে তীব্র আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
ত্যাগী, পরীক্ষিত ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে অনেক বিতর্কিত ব্যক্তিকে কমিটিতে জায়গা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। সবচেয়ে বিতর্কিত বিষয় হলো-ঘোষিত কমিটিগুলোর একাধিক সদস্য আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং উপজেলা ও ইউপি নির্বাচনে কমিটির অনেকেই সরাসরি কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সহ স্থানীয় তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে(ফেসবুক) ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেন ঘোষিত কমিটিতে এমন ব্যক্তিদের স্থান দেওয়া হয়েছে যারা অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন। এমনকি বর্তমানে দলটির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রক্ষা করছেন। ৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডে আহ্বায়ক কমিটিতে কোনো সদস্যই নেওয়া হয়নি। এতে দলীয় আদর্শ ও নীতিনৈতিকতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেন একাধিক নেতা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আজাদ হোসেন বাবলু লিখেছেন ,অন্ধ ব্যাক্তি দেখতে পায়না, কে ত্যাগী,কে খাঁটি।
সে হাতের লাঠিটাকেই মনে করে তাঁর কর্ম পরিধি নির্ণয়ে যোগ্যতার মাপ কাঠি। কর্ম ফলই নির্ধারণ করে পুরস্কার না তিরস্কার।
অন্য যুগ্ম আহ্বায়ক মাছুম মাহমুদ তালুকদার লিখেছেন, যেই লাউ সেই কদু। সদস্য এডভোকেট শাহিনুর রহমান লিখেছেন, ভাগবাটোয়ারার"রাজনীতির ফাদে পড়ে প্রকৃত ত্যাগী কর্মীরা হারিয়ে যাচ্ছে,যারফলে তৃনমুল পর্যায়ে দল মারাত্বক ক্ষতিগ্রস্হ হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এর মাসুল দিতে হবে। জামালগন্জের তৃনমুলের ত্যাগী ও নির্যাতিত কর্মীদের কাছে আমি ব্যাক্তিগত ভাবে দুখ্যিত,আমাকে ক্ষমা করবেন, আমরা "কথা ও কাজে" মিল রাখতে পারি নাই তবে আপনারা মনে রাখবেন "এইদিন দিন না,আরও দিন আছে,এই দিনেরে নিয়া যাব সেই দিনের কাছে। সদস্য এমদাদ আফিন্দী লিখেছেন , জামালগন্জ উপজেলার ৬ টি ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে কিছু কথা সংগ্রামী জামাল গন্জবাসী অত্যান্ত দুঃখের সহিত আপনাদেরকে জানাচ্ছি যে আমরা প্রত্যেকটি ইউনিয়ন কমিটি করতে গিয়ে আহ্বায়ক, যুগ্ম আহ্বায়ক ও স্বাক্ষর প্রাপ্ত যুগ্ম আহ্বায়ক সহ ২১ সদস্য কমিটির সবাই নিজ নেতৃত্ব ও ব্যাক্তিত্ব দেখাতে গিয়ে সবাই উপজেলা বাসিকে কথা দিয়েছিলাম। যাদের আওয়ামিলীগ এর সাথে ছবি থাকবে সেই মানুষ গুলো কোন অবস্হাতেই এই কমিটিতে স্হান না পায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় কমিটি দিতে গিয়ে এতদিন পিছানোর কারন একটিই ছিল যাতে ঐ লোক গুলো কোন অবস্হাতেই আসতে না পারে । কিন্তু কমিটি ঘোষনার পর দেখা যায় প্রত্যেক ইউনিয়নেই ছবি যুক্ত মানুষ গুলো স্হান পেয়েছে যা প্রত্যেক ইউনিয়নের জাতীয়তাবাদী দল ও অংগ সংগটনের সবার মনেই প্রশ্ন এই লোক গুলো কিভাবে স্হান পেয়েছে। আপনাদের সাথে একমত তাই কষ্ট সামলাতে না পেরে ফেইস বুকে প্রকাশ করলাম আমি যে বক্তব্য প্রকাশ করেছিলাম তার জন্য আপনাদের কাছে ক্ষমাপার্থি।
সদস্য নুরে আলম ফরাজী লিখেছেন, জামালগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীর কাছে আমার বক্তব্য দেওয়ার কথাগুলা রাখতে পারলাম না আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক এমদাদুর রহমান হিরন লিখেন, উপজেলার ২১জন কি ইউনিয়নের ১১ জন সঠিক লোক খোজে পেলেন না?
যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান রুকন লিখেন, যে দলে ত্যাগী কর্মীর অভাব নেই সেখানে আওয়ামী লীগের লোক দিয়ে কমিটির মানে কি,আপনারা কি আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করতেছেন?
সাচনা বাজার ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুন নুর আখঞ্জী লিখেন, জামালগঞ্জ কমেডির আত্মপ্রকাশ,
বিএনপি কর্মী আজিম উদ্দিন হেলাল লিখেন, জামালগঞ্জ উপজেলা উত্তর ইউনিয়ন কমিটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। যারা দলের দুঃসময়ে বউয়ের আঁচলের নিচে লুকিয়ে ছিল, মিছিল মিটিংয়ে যাওয়া দূরের কথা কথা বলতে সাহস পায় নাই, আজ তারা কী করে কমিটিতে আসে । ধিক্কার জানাই।
ছাত্রদলের সুলেমান আফিন্দী জাফরান লিখেন, আহা রাজনীতি? আহা স্বজনপ্রীতি? আহা গ্রুপিংনীতি? আহারে কমিটি- আফসোস! উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জায়েদ আহমদ লিখেন,আমি হতবাক আমি নির্বাক, আমি লজ্জিত,নিষ্ক্রিয়দের ভীরে সক্রিয়রা পরাজিত, কেমনে বাস্তবায়ন হবে শহীদ জিয়ার সোনার বাংলা গড়ার স্বপন, এযেন রাজারনিতি নয় এ এক আত্মীয় করন।
সেচ্ছাসেবক দলের নেতা সাইদুল ইসলাম ভূইয়া লিখেন, আওয়ামীলীগের কানা, লেঙরা, আতুর এখন বিএনপির ত্যাগী কর্মী।
সেচ্ছাসেবক দলের নেতা মমিন মিয়া লিখেন, জামালগঞ্জ সদর ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক পকেট কমিটিকে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
উওর ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জালাল উদ্দীন ফারুকি লিখেন, মাত্র ১১ সদস্যের মধ্যে যদি লীগের ধূসররা স্থান পায়, তাহলে ৫১,৭১,১০১ সদস্যের কমিটিতে কি পরিমাণ ধূসররা স্থান পাবে একটু বলবেন কি?
সদর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জামিল আহমদ লিখেন আসোলে টাকার কাছে সব ত্যাগী গেলো হেরে হাইব্রিড গেলো জিতে।
নবী হোসেনের ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির ১ম যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল মালিক ও ২য় যুগ্ম আহ্বায়ক আজিজুর রহমান বলেন, এই নাম আমরা দেইনি,আহ্বায়ক দিয়েছেন। আমরা তার ব্যাপারে জোরালো আপত্তি করলেও তিনি আমাদের কথা শুনেননি। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন সে বিএনপির লোক তার দায় বার আমি নিব।
৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নবী হোসেন কে উওর ইউনিয়নের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য করায় এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে কমিটির অনেকেই আওয়ামীলীগের দলীয় নেতাকর্মীদের নির্বাচনী প্রোগ্রামের ছবি রয়েছে, এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শফিকুর রহমান জানান আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির সাথে নবী হোসেনের সম্পৃক্ত থাকলে এবং কমিটির কারো ফ্যাসিষ্টদের সাথে নির্বাচন ও দলীয় কোনো প্রোগ্রামের ছবির সত্যতা পাওয়া গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।