✔ বাংলা টেক্সট কনভার্টার
শিরোনাম
advertisement
সিলেট বিভাগ

দিরাইয়ে বাঁধের কাজে শুরুতেই অনিয়মের অভিযোগ: ফসল সুরক্ষা প্রশ্নবিদ্ধ

সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণের শুরুতেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় কৃষক ও সচেতন মহল অভিযোগ করেছেন, শুরুতেই যাদেরকে নিয়ে উপজেলা হাওর রক্ষা বাঁধ বাস্তবায়ন ও মনিটরিং কমিটি গঠন হয়েছে তাদের অধিকাংশই কৃষি কাজের জড়িত নয়। 

প্রভাবশালী ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী ব্যক্তিদের পিআইসি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে বাঁধ নির্মাণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এতে প্রকৃত কৃষকরা বঞ্চিত হচ্ছেন, যা হাওরের ফসলের সুরক্ষাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।  

এবছর দিরাই উপজেলায় সম্পূর্ণ ও আংশিক মিলিয়ে মোট ৮টি হাওরের ২৭০ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধের মধ্যে ১০৪ কিলোমিটার অংশে প্রাক-জরিপ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭১.৮১৯ কিলো মিটার অংশে কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৯৫টি স্কিম প্রস্তুত করা হয়েছে। তবে এসব স্কিমের বিপরীতে গঠিত ৮৫টি পিআইসি কমিটির বেশিরভাগ সদস্য কৃষক না হয়ে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

স্থানীয় কৃষক আলী নুর বলেন, “আমাদের দাবি ছিল প্রকৃত কৃষকদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে যাঁরা কৃষিকাজের সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন, তাঁদের দিয়ে পিআইসি গঠন করা হয়েছে। এতে বাঁধ নির্মাণে সঠিক পরিকল্পনা এবং কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”  

এদিকে কৃষক রশিদ মিয়া বলেন, “প্রতি বছর বাঁধ ভেঙে হাওরের ফসল তলিয়ে যায়। এবারও যদি রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এই কাজ করা হয়, তাহলে আমাদের বাঁচার কোনো উপায় থাকবে না। সরকারকে এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।”  

কাজের ধীরগতি ও বাজেট অপচয়ের অভিযোগের বিষয়ে স্থানীয় কৃষক আব্দুল মুহিত বলেন, “প্রাক-জরিপ ও কাজ শুরুতে সময়ক্ষেপণ করা হয়েছে। বাজেট ঠিক থাকলেও কাজে স্বচ্ছতা নেই। পিআইসি কমিটিতে অযোগ্যদের অন্তর্ভুক্ত করার কারণে বাস্তবায়ন ধীরগতি পাচ্ছে এবং বাজেটের টাকা অপচয় হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। 

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৯৫টি স্কিমের জন্য বরাদ্দকৃত ১৭৮১.৩১ লক্ষ টাকার মধ্যে অধিকাংশই এখনো খরচ হয়নি। অন্যদিকে, পিআইসি গঠনের বাকি স্কিমগুলোর বিষয়ে পর্যাপ্ত প্রচারণা চালানো হলেও কৃষকদের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। 

দিরাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান খোন্দকার বলেন, “পিআইসি গঠনে আমরা নীতিমালা অনুসরণ করেছি। যদি কোনো অনিয়ম হয়ে থাকে, তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে স্থানীয়রা বলছেন, পিআইসি গঠনে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ করলেও তা নিয়ে প্রশাসন এখনো কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। প্রতিবছরের মতো এবারও দিরাইয়ের হাওরবাসী অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। বাঁধের কাজ সময়মতো সম্পন্ন না হলে এবং নীতিমালা ভঙ্গ করে পিআইসি গঠন অব্যাহত থাকলে হাওরের ফসল নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।  

সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় কৃষকদের দাবি, দ্রুত পিআইসি গঠনে স্বচ্ছতা আনা এবং কাজের মান নিশ্চিত করে হাওরের ফসল রক্ষার কার্যক্রম পরিচালনা করা।

এই সম্পর্কিত আরো