তথ্য জানার অধিকার কেবল একটি আইন নয়, এটি গণতন্ত্র, স্বচ্ছতা এবং নাগরিক ক্ষমতায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ থেকে শুরু করে স্থানীয় প্রশাসনের কাজকর্মে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে এই অধিকারের কার্যকর ব্যবহার অত্যন্ত জরুরি। এমন বার্তা পৌঁছে দিতে সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো একদিনব্যাপী স্টেকহোল্ডার প্রশিক্ষণ।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) নগরীর হোটেল মেট্রো ইন্টারন্যাশনালে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এতে সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী এবং উন্নয়নকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
প্রশিক্ষণের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বেলা সিলেট অফিসের বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট শাহ সাহেদা আখতার। তিনি বলেন, “তথ্য জানার অধিকার শুধু আইনি অধিকার নয়, এটি গণতান্ত্রিক চর্চা এবং পরিবেশ সুরক্ষারও অবিচ্ছেদ্য অংশ। যখন একজন নাগরিক তথ্য জানার অধিকার চর্চা করেন, তখন তিনি কেবল নিজের জন্য নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্যও কাজ করেন।”
প্রশিক্ষণে বেলার রিসার্চ ক্যাম্পেইন এন্ড অ্যাডভোকেসী কো-অর্ডিনেটর রেহমুনা নুরাইন তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ এর বিভিন্ন ধারা ও উপধারা বিশ্লেষণ করেন। তিনি বলেন, “এই আইনের মাধ্যমে যেকোনো নাগরিক সরকারি ও নির্দিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য চাইতে পারেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই নাগরিকরা এই অধিকারের ব্যাপারে সচেতন নন বা প্রয়োগের কৌশল জানেন না।”
তথ্য অধিকার ব্যবহারে মাঠ পর্যায়ের অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে সরাসরি মতামত দেন অংশগ্রহণকারীরা। তারা জানান, অনেক ক্ষেত্রেই তথ্য পাওয়ার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হয়, আবার কিছু সংস্থা তথ্য দিতে অনিচ্ছুক থাকে। এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবিলা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা হয়।
প্রশিক্ষণে বিশেষ আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক মো. ফেরদৌস আনোয়ার। তিনি বলেন, “তথ্য জানার অধিকার ব্যবহারে জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে উঠবে। প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত হবে এবং জনগণের আস্থা বাড়বে।”
প্রশিক্ষণ শেষে অংশগ্রহণকারীদের মতামত গ্রহণ ও মূল্যায়নের মাধ্যমে দিনব্যাপী কর্মশালার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা জানান, তারা ভবিষ্যতে তথ্য জানার অধিকারকে কাজে লাগিয়ে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবেন।