মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বরমচাল ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে সদস্য হিসেবে স্থান পাওয়া সেই বিতর্কিত যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টুকে বহিস্কারের নির্দেশ দিয়েছে মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাতে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জেলা বিএনপি’র আহবায়ক মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন স্বাক্ষরিত একটি চিঠি উপজেলা বিএনপির আহবায়ক, সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক বরাবরে পাঠানো হয়েছে। চিঠির অনুলিপি দেয়া হয়েছে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডাঃ এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আলহাজ্ব জি,কে, গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন ও মিফতাহ সিদ্দিকীকে। এরআগে ২৯ জুলাই বিভিন্ন গণমাধ্যমে “কুলাউড়ায় যুবলীগ সভাপতি সেন্টু এখন বিএনপি নেতা ” শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে জেলা ও উপজেলায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা শুরু হয়। পরে বিষয়টি নজরে আসে জেলা বিএনপির। বিএনপির মতো রাজনৈতিক দলে ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগ থেকে অনুপ্রবেশকারী যুবলীগ নেতা আজমল আলী সেন্টুর বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ায় জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির নেতৃবৃন্দরা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, কুলাউড়ার বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য আজমল আলী শাহ সেন্টু’র বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়টি মৌলভীবাজার জেলা বিএনপি’র আহবায়ক কমিটির দৃষ্টিগোচর হয়। উক্ত বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে জেলা আহবায়ক কমিটিকে অবহিত করার জন্য উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়।
জানা গেছে, বরমচাল ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি আজমল আলী শাহ সেন্টু বিগত ৫ আগস্টের পর নিজের সকল অপকর্ম ঢাকতে স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির কয়েকজন নেতাকর্মীকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির আহবায়ক আব্দুল জহুর ডেন ও যুগ্ম আহবায়ক মো: তোফায়েল হোসাইন খান জমসেদ স্বাক্ষরিত দলীয় প্যাডে আজমল আলী শাহ সেন্টুকে ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির কমিটিতে ৩৯ নম্বর সদস্য হিসেবে রাখা হয়। অথচ যুবলীগ নেতা সেন্টু বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এমনকি আওয়ামী লীগের সকল কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। গত বিতর্কিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নৌকার প্রার্থী শফিউল আলম চৌধুরী নাদেলের নির্বাচনী প্রচারণায় হাতে লিফলেট নিয়ে যুবলীগ নেতা সেন্টুকে সরব থাকতে দেখা যায়। ২০২২ সালের ১৪ মার্চ বরমচাল ইউনিয়ন আওয়ামী যুবলীগের আয়োজনে ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে আজমল আলী শাহ সেন্টু সভাপতি ও নিপার আহমদ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এদিকে ২০২২ সালের মার্চ মাসে বরমচাল ইউনিয়ন ছাত্রলীগ আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লেখা “অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারের রোজনামচা ও আমার দেখা নয়াচীন” বই ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণ অনুষ্ঠানে যুবলীগ নেতা সেন্টু অতিথি ছিলেন। এমনকি দলীয় শীর্ষ নেতাকর্মী ও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীদের সাথেও তোলা সেইসকল ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়। এটা নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে চরম ক্ষোভ দেখা দেয়। সবাই সমালোচনা করে বলছেন, কিভাবে একজন চিহ্নিত যুবলীগ নেতাকে বিএনপির মতো রাজনৈতিক সংগঠনে স্থান দেয়া হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের মাধ্যমে যোগসাজশ করে ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে বিএনপির কমিটিতে সদস্য পদ ভাগিয়ে নিয়েছিলেন যুবলীগের সেন্টু।
বরমচাল ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল জহুর ডেন বলেন, জেলা ও উপজেলা নেতৃবৃন্দের নির্দেশনা পেয়েছি। রেজুলেশন করে সেন্টুকে বহিস্কার করা হবে।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক রেদওয়ান খান বলেন, বিতর্কিত ব্যক্তি সেন্টুর বিরুদ্ধে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর জেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের নজরে আসে বিষয়টি। ফ্যাসিবাদ আওয়ামীলীগের নৌকার নির্বাচনী প্রচারণাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ডে সেন্টুর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়ায় তাকে বহিস্কারের জন্য জেলা বিএনপি একটি লিখিত চিঠি উপজেলা বিএনপিকে প্রেরণ করে। সেই নির্দেশনার ভিত্তিতে সেন্টুকে বিএনপির কমিটি থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ ফয়জুল করিম ময়ূন মুঠোফোনে বলেন, বরমচাল ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে বিতর্কিত যুবলীগ নেতা আজমল আলী শাহ সেন্টুকে কমিটিতে রাখার বিষয়টি আমাদের নজরে এলে তাকে বহিস্কার করার জন্য উপজেলা বিএনপিকে চিঠি দিয়েছি। ৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে এসব সুযোগ সন্ধানী, বিতর্কিত নেতা-কর্মীরা দলে ঢুকে পড়ছেন। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী দোসরদের সাথে রাজনৈতিক গভীর সম্পর্ক যাদের রয়েছে তাদের স্থান বিএনপিতে নেই। ইতিমধ্যে যারা বিএনপির কমিটিতে অনুপ্রবেশ করেছেন তাদের যাচাই-বাছাই করে বাদ দেয়া হবে এবং যারা তাদেরকে দলে প্রশ্রয় ও কমিটিতে ঢুকার সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, বর্তমানে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন চলছে। সেখানেও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, অন্যদলের কেউ বিএনপিতে ঢুকার কোন সুযোগ নেই। অনুপ্রবেশকারীদের ভিড়ে বিএনপি’র ত্যাগী নেতাকর্মীরা যেন কোণঠাসা হয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে জেলা বিএনপি।