চা শ্রমিকদের মানবিক জীবনমান নিশ্চিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। শনিবার মৌলভীবাজার শহরে পদযাত্রা শেষে বেরীরপার এলাকায় আয়োজিত এক পথসভায় তিনি বলেন, “চা শ্রমিকদের জীবন সংগ্রাম আজও ইতিহাসের দুঃসহ অধ্যায়। এনসিপি তাদের অধিকারের লড়াইয়ে পাশে থাকবে।”
এ সময় হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশ হত্যার দায় অভ্যুত্থানকারীদের দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে নাহিদ ইসলাম বলেন, পুলিশ হত্যাকে ডমিনেট করে এর দায় অভ্যুত্থানকারী ছাত্র-জনতাকে দেওয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা ৩ আগস্ট এক দফায় স্পষ্ট করেছি আমাদের লড়াই শেখ হাসিনার ফ্যা সিস্ট শাসনের বিরক্ত পরিণত হয়েছে। আমাদের যে দমনপীড়ন করা হয়েছে আমরা বাধ্য হয়েছিলাম প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। আমাদের লড়াই ছিলো ফ্যামসিস্ট রাষ্ট্র ফ্যা সিস্ট বাহিনীর বিরোধী।
এর আগে শহরের শহীদ মিনার থেকে দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা বের হয়। শহরের কোর্ট রোড ও শাহ মোস্তফা সড়কে পথযাত্রা হয়। এতে যোগ দেন সর্বস্তরের কয়েক হাজার মানুষ।
তিনি বলেন, “এই রাষ্ট্র শুধু শহরের মানুষের জন্য নয়, চা বাগান, পাহাড়, সমতলের প্রত্যেকটি জাতিসত্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এনসিপি এই বহুত্ববাদী রাষ্ট্রগঠনের আন্দোলনে জনগণের সঙ্গে আছে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ ইসলাম বলেন, “বিচার ও কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জনগণ গ্রহণ করবে না। আমরা নির্বাচন চাই, তবে সেটি হতে হবে প্রকৃত সংস্কারের মাধ্যমে।” তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র ভোটের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তন নয়, রাষ্ট্রের ভিত্তির সংস্কার দরকার।
সংবিধান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বাহাত্তরের সংবিধান মানেই মুজিববাদী সংবিধান। কিন্তু সেই সংবিধান আজ আর সময়োপযোগী নয়। সেখানে মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের কোনো স্বীকৃতি নেই। আমরা চাই, সংবিধানে এদেশের প্রকৃত ইতিহাস প্রতিফলিত হোক।”
এনসিপি আহ্বায়ক অভিযোগ করেন, “যারা ২০২৪ সালের ২৪ জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ে পুলিশ হত্যাকাণ্ডের দায় অভ্যুত্থানকারীদের ওপর চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
এ সময় স্থানীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “বর্তমান রাজনৈতিক শক্তিগুলো বাহাত্তরের সংবিধান রক্ষার নামে ফের একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আমাদের সক্রিয় থাকতে হবে, যাতে আর কোনো একদলীয় শাসন ফিরতে না পারে।”
পথসভায় মৌলভীবাজার জেলার প্রধান সমন্বয়কারী ফাহাদ আলমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব প্রীতম দাশ, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের (বাগছাস) কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আবু বাকের মজুমদার, জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় সংগঠক মারুফ আল হামিদ, জাকারিয়া ইমন।
এদিকে দুপুর ২টায় পর মৌলভীবাজারের পথসভা শেষ করে এনসিপির নেতৃবৃন্দরা শ্রীমঙ্গলের উদ্দ্যেশে রওয়ানা দেন। সেখানে পৌঁছে ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে মতবিনিময় করেন। পরে কিশোরগঞ্জের উদ্দেশ্যে মৌলভীবাজার ত্যাগ করেন।