বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী নির্বাচন দেরিতে হোক জামায়াতে ইসলামী সেটা চায় না। বাংলাদেশকে সুশৃঙ্খল অবস্থায় আনতে হলে অবশ্যই একটি কার্যকর নির্বাচন লাগবে। আমরা আশা করছি, সেই নির্বাচন আগামী বছরের প্রথমদিকেই অনুষ্ঠিত হবে।
‘তবে অবশ্যই সেই নির্বাচন হতে হবে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ। বিগত দিনের মতো যেনতেন আর বস্তাপচা কোনো নির্বাচন জামায়াতে ইসলামী মানবে না। কোনো মস্তানতন্ত্র চলবে না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি এবং প্রশাসনকে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষতা বজায় রেখে ২০২৬ সালের প্রথমদিকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করতে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।’
বুধবার (২৩ জুলাই) বিকাল ৪টায় সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরের স্থানীয় একটি কমিউনিটি সেন্টার প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর শাখার উদ্যোগে আয়োজিত জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, জামায়াতে ইসলামী বিভেদের বাংলাদেশ চায় না। মানবিকতা ও ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে চায়। সেই বাংলাদেশ গড়তে দেশবাসীর সহযোগিতা চাই, দেশবাসীকে পাশে চাই। আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করার মাধ্যমে যদি ক্ষমতায় আসীন হতে পারে তাহলে দেশ গড়ার কারিগর হবেন এদেশের যুব সমাজ। দক্ষ মানবশক্তি তৈরি করা হবে।
তিনি আরও বলেন, জনগণকে ঠকিয়ে কোনো রাষ্ট্রনায়ক সফল হতে পারেনি। অন্যায়, জুলুম ও দুর্নীতি করলে পালাতে হয়। জামায়াতে ইসলামীর ১১ জন নেতা হাসতে হাসতে ফাঁসির মঞ্চে ঝুলেছেন; কিন্তু কেউ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাননি।
তিনি বলেন, আমরা স্বচ্ছতায় আবৃত ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকব। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারি গদি ছেড়ে দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা শত নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করেও দেশত্যাগ করেনি। কারণ জামায়াতে ইসলামী এ দেশকে ভালোবাসে, দেশের মানুষকে ভালোবাসে।
জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের মাটির নিচে-উপরে আল্লাহ সম্পদ দিয়েছেন। এত সম্পদ থাকার পরেও আমরা কেন স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে পারিনি। আমাদের কেবল চারিত্রিক সম্পদের অভাব। এই কারণেও স্বপ্নের দেশ গড়া সম্ভব হয়নি। গত ৫৪ বছরেও জনগণের দিকে কেউ ভালো করে ফিরে তাকায়নি। দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি আর মাস্তান তন্ত্রসহ নিজেদের আখের গোছানো আর দলের শক্তি বৃদ্ধিতে মনোযোগী ছিলেন তারা। আগামীতে সেইদিন যাতে না আসে সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা ফয়জুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি কাজী আবুল কাশেম, পৌর আমির কাজী জমির হোসাইন, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন ও মোহাম্মদ রুকন উদ্দিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন- কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, সিলেট-৬ বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ নির্বাচনি আসনে জামায়াতে ইসলামী মনোনীত প্রার্থী, ঢাকা মহানগর উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মহানগর আমীর ফখরুল ইসলাম, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।
আরও বক্তব্য রাখেন- গোলাপগঞ্জ উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নাজমুল ইসলাম, গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির জিন্নুর আহমদ চৌধুরী, পৌর শাখার ভারপ্রাপ্ত আমির রেহান আহমদ রায়হান, বিয়ানীবাজারের নায়েবে আমির মোস্তফা উদ্দিন ও আবুল খায়ের, আব্দুল হামিদ, সিলেট জেলা পূর্ব ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি আদিল হোসেন প্রমুখ।
জামায়াতে ইসলামীর জনশক্তি ও সুধী সমাবেশে বিপুলসংখ্যক লোকজন উপস্থিত ছিলেন। এর আগে দুপুরের পর থেকেই বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতে ইসলামী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন শাখার খণ্ড খণ্ড মিছিল সমাবেশস্থলে পৌঁছে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে।