রোগী দেখানোর সিরিয়াল নিয়ে তর্কাতর্কির পর ‘সরি’ না বলায় কর্তব্যরত চিকিৎসককে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত গুরুতর আহত করার অভিযোগ ওঠেছে এক স্বেচ্ছাসেবক দল নেতার বিরুদ্ধে।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকাল ৪টায় বৃহত্তর সিলেটের সুনামগঞ্জ শহরের হাছাননগরের আনিসা হেলথকেয়ার অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।
অভিযুক্ত রায়হান উদ্দিন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়। তার বাসা ডায়াগনস্টিক সেন্টার সংলগ্ন কালিবাড়ি এলাকায়। তার সহযোগী ছাত্রদল নেতার নাম শাহনেওয়াজ মুবিন। তার বাসা শহরের বড়পাড়া এলাকায়।
আহত চিকিৎসক গোলাম রব্বানী সোহাগকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তার মাথা ও পিঠে একাধিক ছুরিকাঘাত রয়েছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক।
ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ, প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বিকালে নিজের অন্তঃসত্তা স্ত্রীকে আলট্রাসনোগ্রাম করতে আনিসা হেলথকেয়ার অ্যান্ড ডায়গনস্টিক সেন্টারে নিয়ে আসেন স্বেচ্ছাসেক দল নেতা রায়হান উদ্দিন। পরে সিরিয়াল ভেঙে স্ত্রীকে আলট্রাসনোগ্রাম করতে চাইলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গোলাম রব্বানী সোহাগ সম্মত হননি।
এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কাতর্কি হয়। পরে মালিকপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটমাটের পর স্ত্রীকে আলট্রাসনোগ্রাম করিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেন।
ক্লিনিকের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, বিকাল ৪টা ৩ মিনিটের দিকে ছাত্রদল নেতা মুবিনকে সঙ্গে নিয়ে আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের দিকে আগাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেক দল নেতা রায়হান উদ্দিন। এর কিছুক্ষণ পর অপেক্ষারত রোগী ও তাদের স্বজনদের দৌড়ে বের হতে দেখা যায়।
আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের আয়া পপি বেগম বলেন, বিকাল ৪টার দিকে দু’জন যুবক ডাক্তারের কক্ষে ঢুকার পর চেয়ারে বসেন। পরে শুনেছি তাদের একজনের নাম রায়হান। এ সময় অপর যুবক ডাক্তারকে বলেন, আপনে যদি আমার ভাইরে সরি বলেন, তাহলে ঘটনা শেষ।
পপি বেগম আরও বলেন, এ সময় ডাক্তার বলেন, তার সঙ্গে আমি কোনও অপরাধ করিনি, সরি বলব কেন?
ডাক্তার সরি বলবেন না বলার পর পর দুজন চেয়ার থেকে ওঠে ডাক্তারকে ধরে উপর্যপরি ছুরিকাঘাত করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ডাক্তারের মাথায় ধরে দেওয়ালের সঙ্গে আঘাতের পর আঘাত করতে থাকেন তারা। তখন রুম ভেতর থেকে লাগানো। ডাক্তার ছাড়া ভেতরে একজন অন্তঃসত্তা রোগী ও আমি ছিলাম।
ডাক্তারকে ছুরিকাঘাত করতে দেখে ওই রোগী বিছানা থেকে ওঠে দরাজা খুলে বের হয়ে যান। পরে শুরগুল শুনে হাসপাতালের ম্যানেজার, মালিকপক্ষ ও রোগীর স্বজনরা এসে তাদের হাত থেকে ডাক্তারকে উদ্ধার করেন।
ক্লিনিকের অন্যতম মালিক শামসুল আলম জুয়েল বলেন, আমি শুরগুল শোনে আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের দিকে গিয়ে দেখি রায়হান ও তার সঙ্গের এক যুবক ডাক্তারকে উপর্যপরি ছুরিকাঘাত করছেন। অনেক কষ্টে উনাকে তাদের হাত থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠাই। তারা ডাক্তারকে ছুরিকাঘাতের পাশাপাশি আলট্রাসনোগ্রাম কক্ষের দুটি কম্পিউটারও ভাঙচুর করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে জানতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক রায়হান উদ্দিনের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সুনামগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মুনাজ্জির হোসেন বলেন, যেটুকু শুনেছি, সেটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। ঘটনাটি তিনি ব্যক্তিগত কারণে করেছেন। আমরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি কেন্দ্রকে জানিয়েছি। জেলা বিএনপির অভিভাবকদের জানিয়েছি। এই ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়ে কেন্দ্রকে অবহিত করা হবে।
সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থল এবং হাসপাতালে যাই। অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। অভিযোগ প্রাপ্তিসাপেক্ষে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।