চোখে আলো না থাকলেও মন ও মনের আকাশ আলোয় ভরে আছে সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস গ্রামের তরুণ সমীরন বিশ্বাসের। জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন সমীরন সেই কঠিন বাস্তবতাকে জয় করে এক আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন। ডিগ্রি শেষ, মাস্টার্সে পড়ার স্বপ্ন বুকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন এখন আটকে আছে এক জটিল সংকটে।
ছোটবেলা থেকেই সিলেটের গ্রীণ ডিসঅ্যাবল্ড ফাউন্ডেশনে ব্রেইল পদ্ধতিতে লেখাপড়া শিখেছেন সমীরন। আঙুলে ছুঁয়ে-ছুঁয়ে অক্ষরের ছোঁয়া মনের ভেতর গেঁথে নিয়েছেন। পরে মদনমোহন কলেজ থেকে ডিগ্রি পাশ করে সাফল্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়ে তুলেছেন।
সমীরন বিশ্বাস বলেন, আমার চোখে আলো নেই, কিন্তু আমার হৃদয়ে স্বপ্নের আলো গড়গড় করছে। মাস্টার্সে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু টাকা জোগাড় করতে পারিনি। তিনবেলা খাওয়া ও থাকার মতো টাকা নেই, মাস্টার্সের খরচ তো সে আমার কাছে দূরূহ স্বপ্ন।”
ছয় সদস্যের পরিবার ছোট্ট ঘরে থাকে অন্যের জমিতে। বাবা-মা দিনমজুর, মা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান, ছোট ভাই রেস্টুরেন্টে কাজ করে। এই কঠিন বাস্তবতাই প্রতিদিন সমীরনের স্বপ্নের পাখা ভাঁজ করতে বাধ্য করছে।
সমীরনের স্বপ্ন শুধু নিজের জন্য নয়, সে চায় সমাজের অন্যান্য দৃষ্টিহীন মানুষরাও শিক্ষা ও সুযোগ পায়। তার হৃদয় গড়া এক অনন্য আবেদনে, যেন আর কেউ আর্থিক সংকটে পড়েও পড়াশোনা থেকে পিছিয়ে না পড়ে। এখন দরকার সরকারের সহায়তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা এবং সমাজের সহানুভূতির হাত। যেন এই তরুণের মতো অসংখ্য প্রতিভাবান মানুষ বাধার মোকাবেলা করে তাদের স্বপ্নের সিঁড়ি অতিক্রম করতে পারে।
সমীরণের মা ললিতা বিশ্বাস আবেগে কাঁদতে কাঁদতে বললেন, আমাদের সমীরন একটু আলাদা। অন্ধ হলেও তার ইচ্ছে ও মনোবল অন্যদের থেকে অনেক বেশি। সে পড়াশোনা করে সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। টাকা না থাকায় আমরা কিছু করতে পারছি না, এটা সবচেয়ে বড় বেদনা।
সমীরণের বাবা সুবল বিশ্বাস বলেন, আমরা দিনমজুর, আজকাল কাজও ঠিকমতো হয় না। ছেলে যতটা চায়, ততটা দিয়ে দিতে পারছি না। তার স্বপ্ন বড়, কিন্তু আমাদের সামর্থ্য খুবই সীমিত। নিজেদের কোন ভিটেমাটি নেই। অন্যের জায়গায় বসবাস করছি৷ সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই।
প্রতিবেশীদের সাথে কথা হলে তারা বলেন, সমীরন খুব মেধাবী ও মনোরম ছেলে। সে দৃষ্টিহীন হলেও তার ইচ্ছাশক্তি অসাধারণ। সমাজের সবাই যেন তার পাশে দাঁড়ায়, তাই আমরা সবাই চাই।