সুনামগঞ্জের দিরাই পৌর শহরে ফুটপাত দখল এখন আর কোনো সাময়িক সমস্যা নয় এটি পরিণত হয়েছে একটি স্থায়ী জনদুর্ভোগে। এনিয়ে সকল শ্রেণীর পেশার মানুষের মাঝে হাঁসফাঁস সৃষ্টি হয়েছে।
পৌর শহরের প্রধান সড়ক থানা রোড, মধ্যবাজার ও হাইস্কুল রোড এলাকা জুড়ে ফুটপাতগুলো একরকম পরিণত হয়েছে দোকান ও হকারদের দখলে। সাধারণ পথচারীরা বাধ্য হয়ে মূল সড়ক ধরে চলাফেরা করছেন, যার ফলে যানজট যেমন বাড়ছে, তেমনি ঝুঁকিতে পড়ছে জীবনও।
প্রতিদিন সকাল ও সন্ধ্যার দিকে যখন স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষদের ভিড় থাকে, তখন হাঁটা তো দূরের কথা ফুটপাতে দাঁড়ানোরও জায়গা থাকে না। পথচারীদের মূল সড়কে নামতে হয়, যেখানে যানবাহনের চাপ এমনিতেই বেশি। ফলে একটু অসাবধান হলেই ঘটছে দুর্ঘটনা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে।
স্কুলপড়ুয়া শিশুদের জন্য বিষয়টি হয়ে দাঁড়িয়েছে জীবন-মরণ প্রশ্নে। অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন বাধ্য হয়ে ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে স্কুলে যায়। অভিভাবকদের মধ্যে এ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। দিরাই পৌর শহরের এলাকার থানা পয়েন্টে অবস্থিত স্কুলের সামনে ফুটপাতের এমন অবস্থা দেখা গেছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা বইয়ের ব্যাগ নিয়ে গাড়ির পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
এ অবস্থায় সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন বয়স্ক মানুষ, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি ও রোগীরা। বিশেষ করে যারা হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন বা ধীরগতির মানুষ, তাদের জন্য শহরের ফুটপাত গুলো এক রকম নিষিদ্ধ হয়ে পড়েছে।
এই পরিস্থিতির প্রভাব পড়ছে জরুরি সেবা ব্যবস্থাতেও। দিরাই ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক সময় সংকীর্ণ সড়কে হকারদের মালামাল ও দোকানের ভিড়ে যানবাহন আটকে পড়ে। ফলে রোগী পরিবহন কিংবা আগুন নেভানোর কাজে বিলম্ব ঘটে।
পৌর কর্তৃপক্ষ জানান, তারা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছেন। কয়েক দফায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা, দোকান উচ্ছেদ ও মালামাল জব্দ করা হয়েছে। কিন্তু অভিযানের একদিন পরই পুরনো অবস্থায় ফিরে আসে সবকিছু।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বাজারে অনেক ব্যবসায়ী নিজেদের দোকানের সামনের ফুটপাত দখল করে রয়েছেন। এছাড়াও কেউ কেউ দোকানের সামন ভাড়া দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে দিরাই পৌর প্রশাসক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিজিৎ সূত্রধর বলেন, আমরা নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এটি শুধু প্রশাসনের একার পক্ষে সামাল দেওয়া কঠিন। এটি সামাজিক সচেতনতা ও ব্যবসায়ীদের সদিচ্ছার ব্যাপার রয়েছে। ফুটপাত দখলমুক্ত করে তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে।
স্থানীয় নাগরিকরা বলছেন, অভিযান চালানো হলেও কোনো দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অভাবেই সমস্যা থেকে যাচ্ছে। হকারদের জন্য বিকল্প স্থান নির্ধারণ না করে শুধু উচ্ছেদ চালালে তা কার্যকর হয় না। তারা দাবি করেছেন, হকারদের পুনর্বাসন ও সচেতনতা কার্যক্রম শুরু করা দরকার। একইসঙ্গে প্রয়োজন নিয়মিত তদারকি ও কঠোর আইন প্রয়োগ।
দিরাই পৌর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, দিরাই শহরের মতো ক্রমবর্ধমান শহরগুলোতে সুষ্ঠু শহর পরিকল্পনা না থাকায় এধরনের অব্যবস্থাপনা দেখা দিচ্ছে। শুধু আইন প্রয়োগ নয়, একটি টেকসই ও মানবিক সমাধান প্রয়োজন।
যদি এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে দখলদারিত্ব ও বিশৃঙ্খলার কারণে দিরাই পৌর শহরের নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক গতি আরও থমকে যাবে এমনটাই আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।