মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার ডিমাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) মীর মুহিবুর রহমানের বিরুদ্ধে সরকারি গাছ কেটে আত্মসাৎ, অর্থ আত্মসাৎ, কর্মস্থলে অনিয়মিত উপস্থিতি, সরকারি বরাদ্দ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়মের অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করেছে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস।
জানা গেছে, গত ৯ মে বিদ্যালয়ের একটি ৩০ বছরের পুরনো আকাশী গাছ এবং অন্যান্য গাছের ডালপালা কেটে প্রায় দুই গাড়ি কাঠ নিজের বাড়িতে নিয়ে যান মীর মুহিবুর রহমান। স্থানীয় বাসিন্দারা বিষয়টি উপজেলা শিক্ষা অফিসে লিখিতভাবে অভিযোগ করলে তদন্তে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে বলে জানা যায়।
এরপর ২০ মে উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে কৈফিয়ত তলব করে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা চাইলে তিনি সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন। ২৬ মে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ইউএনও এর মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের কাছে আরও একটি অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়, যেখানে উল্লেখ করা হয়—বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্দের টাকা আত্মসাৎ, সপ্তাহে মাত্র ৩ দিন বিদ্যালয়ে আসা, সময়মতো ক্লাস না নেওয়া, হাজিরা জালিয়াতি, ওয়াসব্লক এবং রুটিন মেইনটেনেন্সের নামে অর্থ আত্মসাৎ, এবং নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে (ফারিহা লাইব্রেরীতে ) সময় কাটানোর মতো গুরুতর অনিয়ম। অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতা পরিচয়ে নোট-গাইড বিক্রির অভিযোগও রয়েছে।
জানা যায় গত ২৯ মে উপজেলা শিক্ষা অফিস তদন্ত প্রতিবেদন জেলা শিক্ষা অফিসে পাঠিয়ে তাকে উপজেলার বাইরে বদলি ও বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।
সবশেষে ২২ জুন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সফিউল আলম সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা ২০১৮-এর ৩(খ) ধারা অনুযায়ী ‘অসদাচরণ’-এর অভিযোগে বিভাগীয় মামলা রুজু করেন। একইসাথে কেন তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে না, তা ১০ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভিযুক্ত শিক্ষক চাইলে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ পাবেন বলেও জানা যায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মীর মুহিবুর রহমানের এসব কর্মকাণ্ডে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে এবং হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগ হারাচ্ছে। এলাকাবাসী এই দুর্নীতিপরায়ণ শিক্ষককে দ্রুত অপসারণ করে বিদ্যালয়ের পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জুর দাবি জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিষয়টি বর্তমানে বিভাগীয় শৃঙ্খলা আইনের আওতায় তদন্তাধীন রয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।