সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এই স্টেডিয়ামে প্রতি বছর বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠান উৎযাপনের করা হয়ে থাকে। পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের বার্ষিক পরীক্ষা শেষে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের এই সময়ে শিশু-কিশোরদের খেলাধুলার মাঠ দখল করে বাণিজ্য মেলার আয়োজন করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এই ভাবে মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন এলাকাবাসী। এইদিকে মেলার আয়োজক কমিটি বলছেন, যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়েই মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বেনারশী এন্ড মসলিন জামদানী সোসাইটির আয়োজনে স্টেডিয়ামে এক মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলার আয়োজন হচ্ছে। মেলার জন্য এরই মধ্যে তারা স্টেডিয়ামে বড় অংশ জুড়ে মেলার জন্য স্থাপনা নির্মাণের কাজ করছে। সরকারি স্টেডিয়ামে বিভিন্ন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজন ও নিয়মিত খেলাধুলা চলে। এছাড়া বার্ষিক পরীক্ষা শেষে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই মাঠে খেলাধুলা করে। শীতের বিকালে সাইকেল চালানো শিখতে আসে স্থানীয় কিশোর কিশোরীরা। তাছাড়া নাগরিক চাপ থেকে মুক্ত থাকতে পেশাজীবী ও বয়োবৃদ্ধরা নিয়মিত এ মাঠে এসে হাঁটাহাঁটি, খেলাধুলা ও ব্যায়াম করেন। এখন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এক মাসের জন্য সরকারি এ মাঠ মেলার জন্য বরাদ্দ দেয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিনে সুনামগঞ্জ ষোলঘর জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শিল্প ও বাণিজ্য মেলার জন্য মাঠের বড় একটি অংশ জুড়ে বাঁশ পুঁতে স্টল তৈরির কাজ করছেন শ্রমিকরা। পুরো স্টেডিয়াম জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী।
স্থানীয় সাংবাদিক ও ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব লুৎফুর রহমান বলেন, ষোলঘর খেলার মাঠের আশেপাশে হাফিজিয়া মাদরাসাসহ কয়েকটি মসজিদ রয়েছে। মেলায় উচ্চস্বরে গানবাজনা, সার্কাসসহ বিভিন্ন শব্দদূষণের কারণে মাদরাসায় বাচ্চারা পড়ালেখা করতে পারে না। এছাড়াও মাঠে বছরের ৮-৯ মাস পানি জমে থাকে। মাত্র এই দুয়েকটি মাসই মাঠ শুকনো থাকে। এসময় মেলার আয়োজন করে মাঠ দখল করে রাখায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয় এলাকার শিশু-কিশোর ও তরুণরা। এখানে প্রতিদিন বিকেলে শিশু-কিশোরা খেলাধুলা করে। শীতের এই সময়টা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিশু-কিশোররা খেলাধুলার অবকাশ পায়। এই সময়টায় এখানে মাসব্যাপী বাণিজ্য মেলার আয়োজন করার কোন যৌক্তিকতা নেই। আমরা মেলা চাই তবে স্টেডিয়ামে নয়। আমরাও এ মেলা আয়োজনের বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছি। তাতে কাজ না হলে মেলা বন্ধে আরো কর্মসূচি হাতে নেব আমরা।
বনানী পাড়ার বাসিন্দা অ্যাডভোকেট মতিয়া বেগম বলেন, মেলা হবে শুনার পর থেকে আমরা ষোলঘর, নবীনগর, আলীপাড়া, বনানী পাড়া, মুহাম্মদপুর এলাকাসহ শহরের মানুষজন আতঙ্ক অবস্থায় আছি। শব্দদূষণের জন্য আমাদের বচ্চারা লেখাপড়া করতে পারেনা। এবং মেলায় আগত মদ,গাজাসহ নেশাখোরদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়ায় আমাদের ছেলেমেয়েরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারেনা।
ষোলঘরের বাসিন্দা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখেছি দেশের অন্যান্য জায়গায় শহরের বাইরে মেলার আয়োজন করা হয়। শহরতলীতে ডিসি পার্ক রয়েছে, আব্দুজ জহুর সেতুর ওপার ও বিসিকসহ বিভিন্ন মাঠ থাকার পরও আইন না মেনে ষোলঘর আবাসিক এলাকায় মেলার আয়োজন করা হচ্ছে।অশ্লীল নৃত্য ও নাচগানের মেলা বন্ধ করতে এলাকাবাসীকে সাথে নিয়ে আন্দোলনসহ আইনী লড়াইয়ে যাবো।
বাণিজ্যমেলার নামে মাঠ দখল করে মেলার আয়োজন করে গানবাজনাসহ সার্কাসের মাধ্যমে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে মাঠ বন্ধ থাকায় খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হন এলাকাবাসী। খেলার মাঠে মেলা আয়োজনের কোনো নিয়ম না থাকলেও অর্থনৈতিক সুবিধার মাধ্যমে প্রতি বছরই মেলার অনুমোদন দেওয়া হয়। এলাকাবাসীর দাবি উপেক্ষা করে মেলা বন্ধ না করলে আন্দোলনের পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ের হুশিয়ারি প্রদান করেন।
সম্প্রতি বাংলাদেশ বেনারশী এন্ড মসলিন জামদানী সোসাইটির আয়োজনে স্টেডিয়ামে এক মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য সুনামগঞ্জ শিল্প-পণ্য বাণিজ্য মেলা ২০২৫ এর নামে অবকাঠামো কাজের শুভ উদ্বোধন ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর পর থেকে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পুরো সুনামগঞ্জবাসী।