‘ও আল্লাহ ও আল্লাহ, সময়ে তোমারে পাই, তুমি কাছে ডাইক্কা নিলে, আমি কি আর দূরে যাই', ‘লাগাইয়া পিরিতের ডুরি আলগা থাকি টানেরে, আমার বন্দে মহা যাদু জানে, যাদু জানেরে, আমার বন্দে মহা যাদু জানে’, ‘ভ‚বন-মোহন রূপ তোমারী, দেখলে প্রাণ জুড়ায়, আমার বাড়ি আয়রে বন্ধু, আমার বাড়ি আয়’,‘আমার ভয় লাগিলো মনেরে, ভয় লাগিলো মনে, আমায় কোন দিন ধরিয়া নিবো যমে’, ‘যাইও না যাইও না কন্যাগো, কইন্যা যাইও না নাইওর, তুমি বিনে কেমনে থাকি একেলা বাসর কন্যাগো’সহ অসংখ্য মরমী গানের অমর রচিয়তা বাউল খোয়াজ মিয়া (৮৩) আর আমাদের মাঝে নেই।
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) বিকেল ৩.২০ মিনিটের দিকে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামস্থ নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন বিখ্যাত গীতিকার ও সুরকার বাউল খোয়াজ মিয়া।
বিশ্বনাথবাসী তথা দেশের সংঙ্গিতাঙ্গনকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া দেশ বরেণ্য ওই শিল্পীর মৃত্যুতে সৃষ্টি হলো গভীর শূন্যতার।
শুক্রবার (২৭ জুন) সকাল ১০টায় উপজেলার দৌলতপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজ মাঠে মরমী কবি বাউল খোয়াজ মিয়ার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। ব্যক্তিগত জীবনে ৫ পুত্র ও ৫ কন্যা সন্তানের জনক ছিলেন তিনি।
এক নজরে বাউল খোয়াজ মিয়া: ১৯৪২ সালের ১২ মার্চ সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন মরমী কবি, বিখ্যাত সুরকার-গীতিকার বাউল খোয়াজ মিয়া। ‘জ্ঞানের সাগর’খ্যাত মরমী সাধক দুর্বিন শাহের শিষ্য বাউল খোয়াজ মিয়া বাল্যকাল থেকে গান গেয়ে শখের বসে ঘুরে বেড়াতেন। আর এক সময় ওই শখই তার নেশায় পরিণত হয়। গান তাকে এতোটাই তাড়া করত যে, স্কুলের লেখাপড়ায় মন বসত না। কিছু ভাব-বাণী তখন থেকেই তার ভেতরে তোলপাড় করতে থাকে। স্বাভাবিকভাবেই ভাবনা-চিন্তা, আচার-আচরণ অন্যদের চাইতে ছিল আলাদা। সংগীতের প্রতি প্রবল নেশা ও এক ধরনের উন্মাদনা ছিল।
কিন্তু পরিবারে বা এলাকায় তিনি গান গাইতে পারতেন না। তাই সবার সান্নিধ্য এড়িয়ে গানের মাঝে ডুবে থাকতে চাইতেন এলাকা ছেড়ে বহু দূরে গিয়ে। বাবার চোখ ফাঁকি দিয়ে সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত গানের আসরগুলোতে। বাঁশি বাজাতে পছন্দ করতেন বাউল খোয়াজ মিয়া। গানের প্রতি অত্যধিক আকর্ষণের কারণেই মরমী কবি খোয়াজ মিয়ার লেখাপড়া থেমে যায় ক্লাস ‘থ্রি’ পর্যন্ত এসেই। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি হয় এখানেই। তার রচিত একাধিক বাউল গান তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করে ছিল। যা হয়তো যুগ যুগ ধরে মানুষের অন্তরে তাকে বেঁচে থাকতে অন্যন্য ভ‚মিকা পালন করবে। শুধু তাই নয়, তিনি নিজের রচিত ও সুর সংযোজিত বেশির ভাগ গানে নিজেই কণ্ঠ দিয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।