তিন দশকের বেশি সময় ধরে চলে আসা এক পুরুষপ্রধান নেতৃত্বের অবসান ঘটিয়ে, অবশেষে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন একজন নারী।
সেলীনা আক্তার চৌধুরী—সিলেট মিডটাউন রোটারি ক্লাবের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হিসেবে ও ( ২০২৫-২৬ এর প্রেসিডেন্ট) নির্বাচিত হয়ে শুধু একটি চেয়ার দখল করেননি, ভেঙে দিয়েছেন দীর্ঘ দিনের এক অদৃশ্য প্রাচীর। তিনি আজ একটি সময়, একটি বিশ্বাস, একটি সাহসী পরিবর্তনের প্রতীক।
সিলেট মিডটাউন রোটারি ক্লাব ৩৭ বছর পেরিয়ে গেলেও নেতৃত্বে কখনও কোনো নারী আসেননি। সেই ধারার ভাঙন ঘটালেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী। এতদিনে অনেক নেতা এসেছেন তবে এই প্রথম ক্লাবটির নেতৃত্ব আসছে এক নারীর হাতে। সেলীনা আক্তার চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন ক্লাবের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট হিসেবে—এটি শুধু একটি ব্যক্তি নয়, একটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করছে।
তাঁর এই অর্জন শুধুই ক্লাবের নয়—এটি একটি অঞ্চলের, একটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে।
সেবার অঙ্গীকার ও নিবেদন থেকেই রোটারি ক্লাবের সঙ্গে যাত্রা শুরু করেন সেলীনা আক্তার চৌধুরী। সময়ের সাক্ষী হয়ে, তিনি পরিণত হয়েছেন ক্লাবের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও সক্রিয় নেতৃত্বের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। মাঠ থেকে শুরু করে কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়ন পর্যন্ত, প্রতিটি পদক্ষেপে তার সাহসিকতা ও মানবিক
উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। নিঃসন্দেহে অনন্য, যা অনুপ্রেরণার এক জীবন্ত প্রতীক হয়ে ওঠে।
সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা জকিগঞ্জের গনিপুর গ্রামের এক অভিজাত ও ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পরিবারে জন্ম সেলীনা আক্তার চৌধুরীর। তাঁর পিতা মরহুম আব্দুল মোক্তাদীর চৌধুরী ছিলেন একজন প্রজ্ঞাবান ও সম্মানিত ব্যক্তি, আর মাতা আমেনা বেগম এক দৃঢ়চিত্ত ও মমতাময়ী নারী। চার ভাইবোনের মধ্যে সেলীনা ছিলেন সবার বড়—শৈশব থেকেই নেতৃত্বগুণ, দায়িত্ববোধ ও মূল্যবোধে ছিলেন আলাদা।
তিনি তার জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে আজ যেখানটায় দাঁড়িয়ে, তা নিছক কাকতাল নয়—বরং লড়াই, ধৈর্য আর নিরব অগ্রগতির ফল।
সেলীনা আক্তার চৌধুরীর বৈবাহিক জীবন শুরু হয় নিজ উপ-জেলার একটি সম্মানিত ও স্বনামধন্য ব্যবসায়ী পরিবারের সন্তান আবুল কালামের সঙ্গে। তিনি সিলেটের ব্যবসায়িক অঙ্গনে একজন সফল, প্রতিষ্ঠিত ও মর্যাদাপূর্ণ নাম।
সংসার, সমাজ ও সংগঠন—সবকিছু একসাথে সামলানো এই নারীর চোখে একটুও ক্লান্তি নেই, আছে কেবল দায়বদ্ধতা আর এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়তা। তিনি একধারে বাংলাদের চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্রপোরেশনের একজন প্রযোজক, সিলেটের স্বনামধন্য অনলাইন গণমাধ্যম সিলেট ভয়েস এর প্রকাশক , লাইফ মেম্বার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন , সদস্য দি সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও সিলেট উইমেন্স জার্নালিস্ট ক্লাবের উপদেষ্টা । দীর্ঘ্য দিন থেকে পারিবারিক ব্যবসা আমদানী-রপ্তানীর সাথে সম্পৃক্ত ।
ব্যক্তিগত জীবনে তিন ছেলে সন্তানের জননী সেলীনা ।
সন্তান প্রতিপালনে তাঁর মমতা, শিক্ষা ও আদর্শের ছাপ স্পষ্ট। মা হিসেবেও তিনি নিঃসন্দেহে রত্নগর্ভ। তাঁর বড় ছেলে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করে এখন 'এম্পেরর ট্রেড ওয়ার্ল্ড'-এর স্বত্বাধিকারী; দ্বিতীয় ছেলে একজন সফল কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এবং ছোট ছেলে অধ্যয়নরত রয়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সেলীনা আক্তার বলেন, এই দায়িত্ব আমার জন্য গর্বের, ১২ অক্টোবর ২০১৮ সালে আমি রোটারি ক্লাব অব সিলেট মিড টাউনের সদস্য হই । এর পর থেকে ক্লাবের সকল সদস্যের সহযোগিতায় রোটারির কার্যক্রমের সাথে আমার সম্পৃক্ততা শুরু হয় ।এখন সবার সম্মতিক্রমে ২০২৫-২৬ রোটবর্ষের প্রেসিডেন্ড নির্বাচিত করায় সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই ।কিন্তু বড় বিষয় হলো—এটা অনেক নারীর স্বপ্নকে বাস্তব হওয়ার সুযোগ করে দেবে।
তিনি জানিয়েছেন - প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর নারী শিক্ষা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য, এবং তরুণদের কর্মমুখী দক্ষতা বাড়ানোর দিকে জোর দেবেন।
তার নেতৃত্বে ক্লাব একটি নতুন ধাপে প্রবেশ করতে যাচ্ছে—যেখানে নারীর কণ্ঠ শোনা যাবে কেন্দ্রীয়ভাবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণেও থাকবে সক্রিয় ভূমিকা।
সেলীনার নেতৃত্ব সামাজিক বার্তাও বহন করছে—নারী শুধুই ফলোয়ার নয়, ইকুয়াল পার্টনার।
ক্লাবের সদস্যদের প্রত্যাশা, তার অভিজ্ঞতা, দায়বদ্ধতা ও মানবিক নেতৃত্ব রোটারির কর্মকাণ্ডে নতুন মাত্রা যোগ করবে। তার নেতৃত্বে রোটারি ক্লাব অব সিলেট মিড টাউন জাতিও ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন । এতে ক্লাবের সকল সদস্যদের , ডি ৬৫ ও রোটারি ইন্টারন্যাশনেলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করেন ।