সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগাম প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচনের ঢাক ঢোল বাজতে এখনও কিছুটা বাকি থাকলেও মাঠে প্রার্থীদের দেখা যাচ্ছে সরব উপস্থিতি। বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থীরা সামাজিক, ধর্মীয় এবং দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে জনসম্পৃক্ততা বাড়াচ্ছেন। ফলে এলাকায় নির্বাচন-পূর্ব উত্তাপ স্পষ্টভাবে টের পাওয়া যাচ্ছে।
হিন্দু ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত এই আসনটি স্বাধীনতার পর থেকে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এ আসনে দীর্ঘদিন সংসদ সদস্য ছিলেন। তার মৃত্যুর পর তার স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্ত সংসদ সদস্য হন। তবে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলন ও রাজনৈতিক পালাবদলের পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। আসনটিতে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। বিএনপি, জামায়াত, জমিয়তসহ অন্যান্য বিরোধী দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে মরিয়া হয়ে মাঠে কাজ করছেন। পাড়া-মহল্লায় জনসংযোগ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে তারা ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ভোট পেতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছে টানছেন বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীরা।
প্রায় ৩ লাখ ভোটারের এই আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য নাছির উদ্দিন চৌধুরী ২০০১ সাল থেকে এই আসনে নির্বাচনে অংশ নিয়ে আসছেন। তবে বর্তমানে তিনি শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন, যার কারণে এবার তার প্রার্থীতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
তার পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকায় রয়েছেন, বিগত ১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্ত,
সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক এমপি মিফতাহ উদ্দিন চৌধুরী রুমি, যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আজমল হোসেন চৌধুরী জাবেদ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার আব্দুল মজিদ তাহের, সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য এডভোকেট মাসুক আলম, অশোক তালুকদার।
বিএনপির একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নাছির উদ্দিন চৌধুরীকে ঘিরেই এই আসনে বিএনপির ভিত্তি গড়ে উঠেছে। কিন্তু তার বর্তমান শারীরিক অবস্থা এবং কিছু রাজনৈতিক জটিলতার কারণে তিনি এবার মনোনয়ন দৌড়ে পিছিয়ে রয়েছেন। দলের পক্ষ থেকে এবার একজন নতুনমুখ মনোনয়ন পেতে পারেন। তবে নাছির উদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, তার জনপ্রিয়তার কাছাকাছিও কেউ নেই। তিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে নির্বাচনে অংশ নেবেন। তার বড় জয় এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল বলেন, বিগত দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে কারানির্যাতিত নেতাকর্মী ও তাদের পরিবার সাথে থাকার চেষ্টা করেছি। ভয়াবহ করোনা ও বন্যায় ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি নিজে উপস্থিত দিরাই শাল্লার মানুষের খোঁজখবর নিয়েছি। জুলাই পরবর্তী সময়ে নেতাকর্মীরা যেন অনৈতিক কোনো কাজে জড়িত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখছি। আমার পিতা দিরাই উপজেলা বিএনপি'র প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আমি নিজে উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম এখন বিএনপি'র রাজনীতি করছি। এই দল আমার কাছে আমার পরিবারের চেয়ে কম নয়, কী পেলাম সেটা মূখ্য নয় আমি দলকে কিছু দিতে পারলেই আমার সফলতা। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি, দল যাকে মনোনয়ন দিবে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিত করবো।
দিরাই উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইফতেখার মোঃ নাবিল চৌধুরী বলেন, আমরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে দলের কমিটি গঠনে দিনরাত কাজ করছি। দল যাকে মনোনয়ন দেবে, নেতাকর্মীরা তার পাশেই থাকবে। তবে জনগণ ও নেতাকর্মীরা নাছির উদ্দিন চৌধুরীকেই চায়। আমরা আশাবাদী দল সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে এই আসনে বিএনপির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে উঠে এসেছেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এডভোকেট শিশির মনির। ইতোমধ্যে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আয়োজনের মাধ্যমে ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে হিন্দু অধ্যুষিত এই আসনে জামায়াতের সাংগঠনিক দুর্বলতা এবং অতীতের আন্দোলন সংগ্রামে অনুপস্থিতি তাদের পথ কঠিন করে তুলছে। ভোটের মাঠে আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থী কত ভোট পাবেন তা নিয়ে সবার মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে।
এ আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রার্থী হচ্ছেন দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ড. মাওলানা শুয়াইব আহমদ। তিনি দীর্ঘদিন ধরেই দিরাই-শাল্লা এলাকায় প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্থানীয় আলেম-ওলামা ও মাদরাসা শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন।
এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে প্রার্থী হতে পারেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা অনিক রায়। তবে এলাকায় তার পরিচিতি এবং দলের কোনো দৃশ্যমান কার্যক্রম নেই।