সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলার মহিষাকোনা গ্রামের শরিফ উদ্দিন জিয়া(৪৫) নামে এক ব্যক্তির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন গ্রামবাসী। প্রতিকারে চেয়ে মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন এলাকাবাসী।
২১ জুন শনিবার দুপুরে হলিকোনা বাজারে চিলাউরা ইউনিয়নের মহিষাকোনা সহ আশ-পাশের কয়েক গ্রামের শতাধিক ভুক্তভোগী মানুষ মানব বন্ধনে অংশগ্রহন করেন।মানববন্ধনে মামলাবাজ জিয়ার হয়রানি থেকে পরিত্রাণ চেয়ে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান গ্রামবাসী।
কে এই শরিফ উদ্দিন জিয়া-
জগন্নাথপুর উপজেলার চিলাউরা ইউনিয়নের মহিষাকোনা গ্রামের মৃত আবলুছ উল্লার পুত্র শরিফ উদ্দিন জিয়া(৪৭)।বিগত ফ্যাসিষ্ট সরকারের সময়ে স্থানীয় আ,লীগ নেতা-কর্মীদের সাথে ঘাটু করে বিভিন্ন ভাবে গ্রামের মানুষদের হয়রানি করছেন।
যেভাবে উত্থান জিয়ার-
রোয়াইল দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ক্লাস নাইন পর্য়ন্ত লেখাপড়া করেন জিয়া।এরপর বেশ কিছুদিন ঘুরে বেড়ান তাবলীগ জামাতে। হঠাৎ করে ২০০৫ সালে শেষের দিকে গ্রামে নিজেকে মাওলানা পরিচয় দিয়ে বেড়াতে থাকে শরিফ উদ্দিন জিয়া।২০১০ সাল থেকে পতিত আ,লীগ নেতাদের সাথে আঁতাত করে বিগত পনের বছর তাদের ছায়াতলে থেকে জিয়া গ্রামের মানুষের উপর জুলুম নির্য়াতন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দখল, পথে-ঘাটে নিরীহ মানুষকে মারপিট ও সরকারি জমি দখল করেছেন।২০০১ সালে মহিষাকোনা গ্রামে মাদানিয়া আমিনীয়া হাফিজীয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেন লন্ডন প্রবাসী এখলাছুর রহমান।মাদ্রাসার দেখভালের দায়িত্ব দেন জিয়াকে।মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতা এখলাছুর রহমান সম্পর্কে জিয়ার আপন চাচা হওয়ার সুবাধে ভাগিয়ে নেন মুহতামীমের পদ।মাদ্রাসার এই পদকে ব্যবহার করে চাঁদার নামে দেশে বিদেশে হাতিয়েছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।চর দখলের মতো দখল করে প্রতিষ্টানটি ধ্বংশ করেছেন।প্রতিষ্ঠানটি দখলে রাখতে মাদ্রাসার প্রতিষ্টাতা লন্ডন প্রবাসী এখলাছুর রহমান আকলিছকে ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে করেছেন হয়ারানি।জিয়ার লোলুভ দৃষ্টির জন্য চার বছর যাবত মাদ্রাসাটি বন্ধ।গ্রামের বাচ্ছারা বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার আলো থেকে।
শরিফ উদ্দিন জিয়ার বিরুদ্বে যতো অভিযোগ গ্রামবাসীর
মহিষাকোনা,খাগাউরা,রোয়াইল,নাছনি ও হাতিয়াসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের কাছে মামলাবাজ ও দাঙ্গাবাজ হিসেবে পরিচিত জিয়া।মামলা দিয়ে গ্রামের মানুষদের হয়রানি করতে নিজের স্ত্রীদের ও বাদী হিসেবে ব্যবহার করেন বহু বিবাহিত জিয়া।গয়াসপুর নদী দখল করে তৈরী করেছেন পাকা ঘাট।দীর্ঘদিন কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধ উপায়ে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করে বিক্রি করেছেন।দখল করেছেন সরকারী অনেক খাস জমি।জুলাই-আগষ্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে নিজেকে জমিয়ত নেতা পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে এখনো শিক্ষা প্রতিষ্টান,সরকারী খাস জমি দখলসহ নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন শরিফ উদ্দিন জিয়া।
সূত্র জানায়, শরিফ উদ্দিন জিয়া চলাচলের জন্য সবসময় একটা কাঠের লাঠি ব্যবহার করেন।এই লাঠিতে ধারালো অস্ত্র বহন করেন তিনি।।জমিয়ত নেতা জিয়া কথায় কথায় গ্রামের মানুষকে আগ্নেয়াস্ত্রের ভয় দেখানোর একটি অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।ভন্ড শরিফ উদ্দিন জিয়ার বিভিন্ন অডিও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঘুরছে।
২২ জুন রবিবার সুনামগঞ্জ আদালতে প্রকাশ্যে মহিম উদ্দিন নামে এক বিচার প্রার্থীর উপর হামলা করেন শরিফ উদ্দিন জিয়া ও তার দলবল।জিয়ার হামলায় আহত মহিম উদ্দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।এঘটনায় সুনামগঞ্জ সদর থানায় মামলা ও হয়।
এসব বিষয়ে কথা বলতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সব অভিযোগ অস্বীকার করেন শরিফ উদ্দিন জিয়া।মাদ্রাসার চাঁদার টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে চাচা এখলাছুর রহমানের সাথে বিরুধ আছে জানিয়ে বলেন, এসব নিয়ে আদালতে মামলা আছে। নিজেকে তাবলীগ জামাতের লোক দাবি করে জিয়া বলেন, জমিয়ত ইসলামীকে ভালোবাসি।
ক্লাস নাইন পর্য়ন্ত লেখাপড়া করে কিভাবে মাদ্রাসার মুহতামীম হয়েছেন জানতে চাইলে বলেন,পরে হেকিমগঞ্জ মাদ্রাসা থেকে মিসকাত পর্য়ন্ত লেখাপড়া করেছি।এর স্বপক্ষে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে ফোনের সংযোগ কেটে দেন জিয়া।
খাগাউরা-মহিষাকোনা জামে মসজিদের মুতুল্লী আব্দুস সোবহান বলেন,শরিফ উদ্দিন জিয়া একজন মামলাবাজ ও ভন্ড মানুষ।সে গ্রামে বিভিন্ন ফ্যাৎনা সৃষ্টি করে ফায়দা লুটতে চায়।তার অত্যাচারে আশ পাশের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ অতিষ্ঠ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগন্নাথপুর আলীয়া মাদ্রাসার এক শিক্ষক বলেন, শরিফ উদ্দিন জিয়ার একাডেমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে আমার জানা নেই। মাদ্রাসার মুহতামী হতে হলে একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন। বিশেষ করে কওমী মাদ্রাসার ক্ষেত্রে দাওরায়ে হাদীস (সিহাহ্ সিত্তাহ্) পর্যন্ত এবং শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
জগন্নাথপুর উপজেলা যুব জমিয়তের সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল বলেন, শরিফ উদ্দিন জিয়া জমিয়তের কোন পদে বা সদস্য ও না। তবে জমিয়ত সমর্থন করেন।গ্রামবাসীর সাথে জিয়ার পূর্বের ব্যাক্তিগত বিরোধ আছে। জমিয়ত কোন ভাবেই কারো ব্যক্তিগত দায়ভার বহন করেনা।
এ বিষয়ে জগন্নাথপুর উপজেলার ৫নং চিলাউরা হলদিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সাইদুল ইসলাম বকুল মোবাইল ফোনে বলেন, শরিফ উদ্দিন জিয়া বিভিন্ন ভাবে এলাকার মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছে। সে বহু বিবাহ করে বউদের কে ও মামলার গুটি হিসেবে ব্যবহার করে।সরকারী খাস জায়গা দখলে নিতে ভূয়া মামলা দিয়ে গ্রামের মানুষকে হয়রানি করে আসছে।জিয়ার হয়রানির কবল থেকে তার লন্ডন প্রবাসী আপন চাচা ও রেহাই পায়নি।